ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা এবং পূর্বে বিকশিত উন্নত উৎক্ষেপণ ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একজন সাবেক জেনারেল বলেছেন, যদি ইরানও পারমাণবিক ওয়ারহেড তৈরির প্রযুক্তি অর্জন করে এবং এর কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণ কাঠামো সম্পূর্ণ হয় তাহলে ইরানের অস্তিত্বের জন্য কেউ হুমকি সৃষ্টি করতে পারবে না।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাবেক কমান্ডার খালিদ নাঈম লোদি ইরানের জাতীয় সম্প্রচার সংস্থার সাহাব নেটওয়ার্কের উর্দু চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে তিনি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ভূ-রাজনৈতিক মাত্রা পরীক্ষা করে দেখেছেন এবং এটিকে দেশের টিকে থাকা এবং স্বাধীনতার জন্য একটি কৌশলগত প্রয়োজনীয়তা বলে মনে করছেন।
বৈশ্বিক পরিস্থিতি এবং বৃহৎ শক্তিগুলোর আচরণের কথা উল্লেখ করে তিনি তার বিশ্লেষণে বলেছেন, যদি ইরান এখনও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি না করে তাহলে তার উপর আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত থাকবে যাতে এটি কখনও এই ক্ষমতা অর্জন না করতে পারে।
তবে, যদি ইরান এই ক্ষমতা অর্জনে সফল হয় বা তার সীমার কাছাকাছি চলে আসে, তাহলে পরিস্থিতি পাল্টে যাবে এবং অঞ্চলের ভারসাম্য পুনরায় সংজ্ঞায়িত হবে।
সমসাময়িক ইতিহাসের বাস্তবসম্মত পর্যালোচনা করে লোদি উল্লেখ করেন যে লিবিয়া এবং ইরাকের মতো পারমাণবিক প্রতিরোধ ক্ষমতাবিহীন দেশগুলো সামরিক আগ্রাসনের শিকার হয়েছিল এবং এসবের পরিণতিতে বলা যায় যে শক্তিই একমাত্র ভাষা যার কথা মানুষ শোনে।
তিনি বলেন যে যদি একটি দেশ শক্তিশালী হয়, অন্যরা তার সঙ্গে যেকোনো সংঘাত এড়িয়ে যাবে এবং যদি এটি দুর্বল হয় তবে এটি সহজেই চূর্ণবিচূর্ণ হবে।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ক্ষমতা এবং পূর্বে বিকশিত উন্নত উৎক্ষেপণ ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে পাকিস্তানি সেনা জেনারেল আরো বলেন যে ইরান যদি পারমাণবিক ওয়ারহেড তৈরির প্রযুক্তি অর্জন করে এবং এর কমান্ড এবং নিয়ন্ত্রণ কাঠামো সম্পূর্ণ হয়, তবে এটি আর তার অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে উঠবে না, কারণ এটি প্রথম আক্রমণ বা প্রতিশোধমূলক প্রতিরোধে প্রতিক্রিয়া জানাতে সক্ষম হবে।
তার সাক্ষাৎকারের অন্য অংশে ওমান আলোচনায় ইরানের সাম্প্রতিক প্রস্তাবের কথাও তিনি উল্লেখ করেছেন যেখানে তেহরান ঘোষণা করেছিল যে তারা তার পারমাণবিক কর্মসূচিকে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে একটি যৌথ প্রকল্পে রূপান্তর করতে প্রস্তুত।
লোদি এই প্রস্তাবকে একটি চতুর কূটনৈতিক কৌশল হিসেবে বর্ণনা করেছেন যা একদিকে প্রতিবেশী আরব দেশগুলোকে স্বচ্ছতা প্রক্রিয়ায় জড়িত করে এবং অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো সরকারগুলোকে সামরিক পদক্ষেপের ন্যায্যতা প্রমাণের অজুহাত কেড়ে নেবে।
তিনি উল্লেখ করেছেন যে যদি এই ধরনের যৌক্তিক এবং অংশগ্রহণমূলক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হয় তাহলে সামরিক সংঘাতের কোনো নৈতিক যৌক্তিকতা থাকবে না এবং এটি বিশ্ব জনমতের দৃষ্টিতে ইরানের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক পদক্ষেপের বৈধতাকে দুর্বল করে দেবে।
পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি ক্ষেত্রে ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে ইরানের ইসলামি বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতার ফতোয়ার কথা উল্লেখ করে জেনারেল লোদি বলেন, ইরান যদি সত্যিই এই পথে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে এটি বিধিনিষেধ এবং চাপের মুখোমুখি হতে থাকবে।
তবে,যদি আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ইরানকে তার অর্থনৈতিক ও আঞ্চলিক ভূমিকা সুসংহত করতে এবং পাকিস্তান, তুরস্ক, আফগানিস্তান এবং মধ্য এশিয়ার মতো দেশগুলোর সাথে তার প্রতিবেশী অঞ্চলে কৌশলগত সহযোগিতা প্রতিষ্ঠা করতে দেয় তাহলে এটি হুমকি এবং নিষেধাজ্ঞার এই চক্রটি কাটিয়ে উঠতে পারে।
উপসংহারে তিনি জোর দিয়ে বলেন যে যেসব দেশ নিষেধাজ্ঞাগুলোকে সুযোগে পরিণত করেছে যেমন ইরান তারা ভেতর থেকে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। খালিদ নাঈম লোদী দেশীয় উৎপাদন, সামরিক এবং অর্থনীতির ক্ষেত্রে ইরানের অগ্রগতির উদাহরণ তুলে ধরেন এবং ইরানের এই ক্রমবর্ধমান অগ্রযাত্রা অন্যান্য মুসলিম জাতির জন্য একটি মডেল বলে মনে করেন তিনি।

তুরস্ক, সৌদি ও পাকিস্তানসহ অন্যান্য দেশ নিয়ে ইসলামি সেনাবাহিনী গড়ার উদ্যোগ নিয়েছে ইরান। আপনি কি এই আর্মি গঠনের পক্ষে?