বছর ঘুরে আবার এসেছে ঈদুল আজহা। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে শুক্রবার (৫ জুন) পালিত হবে কোরবানির ঈদ। কোথাও চলছে আনন্দের প্রস্তুতি, নতুন পোশাক, খাবার, কোরবানির আয়োজন, আবার কোথাও ঈদ মানেই শোক, ক্ষুধা আর ভাঙা ঘর খুঁজে ফেরার নাম। গাজা এখন এমন এক ভূমি, যেখানে উৎসবের বদলে বাতাসে ভাসে ধ্বংস আর বেদনার গন্ধ।
এক সময় গাজার পরিবারগুলো এই দিনে একসঙ্গে বসে খেত, হাসত, শিশুদের হাতে থাকত নতুন খেলনা। আজ সেই স্মৃতি রয়ে গেছে ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাড়িগুলোর ধুলায়। আনন্দের ঈদ এখন তাদের কাছে বেঁচে থাকার আরেকটা দিন—নতুন কোনো হামলার আগ পর্যন্ত।
গাজার জেইতুন এলাকার বাসিন্দা হুসাম আবু আমের এখন বসবাস করছেন খান ইউনিসের একটি স্কুলে, তাও একটি অস্থায়ী তাঁবুতে। একসময় তিনি ছিলেন পরিবারের আশ্রয়, সন্তানদের জন্য ঈদ মানেই ছিল নতুন জামা, খেলনা, আর মিষ্টি খাবার। কিন্তু এবার? হুসামের ভাষায়—
“এবার ঈদে ওদের একটাই চাওয়া, শুধু এক টুকরো রুটি। না মিষ্টি, না খেলনা—শুধু খাবার। আমি আগে ঈদের আগে বলতাম, যুদ্ধ শেষ হবে, আমরা আবার আগের মতো হব। এখন আর কিছু বলি না, কারণ জানি, সেটা সত্য হবে না।”
হুসামের বাড়িটি দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে। পরিবারের বহু সদস্যকে হারিয়েছেন তিনি। এক সময়কার যে ঘরটি ছিল পরিবারের প্রাণকেন্দ্র, যেখানে ঈদের দিনে রান্না হতো, অতিথি আসত—আজ সেটি শুধু স্মৃতির মাটি।
“আমি ছিলাম সেই মানুষ, যে পরিবারকে রক্ষা করতাম, সবকিছু জোগাড় করতাম,”—বলে থেমে যান হুসাম। এরপর জানান, এখন তিনি কেবল শিশুদের গল্প শোনান—তাদের মন যেন ক্ষুধা কিংবা বিস্ফোরণের শব্দে বিচলিত না হয়।
৩৭ বছরের এই মানুষটি বলেন, “আমি এত মানুষ হারিয়েছি, এখন কান্নাও আসে না। ঈদ আমাদের জন্য আর কোনো উৎসব নয়, বরং এটা মনে করিয়ে দেয়—আমরা কী হারিয়েছি।”
যেখানে মুসলিম বিশ্ব আনন্দে ব্যস্ত, সেখানে গাজার মানুষ ঈদের আগেই জানে—তাদের ঈদ হবে আরেকটা অপেক্ষা, আরেকটা শোক, আরেকটা দিন—যা হয়তো হবে বেঁচে থাকার আরেকটি সুযোগ, অথবা তা-ও নয়।
এটাই গাজার ঈদ ২০২৫। আনন্দ নয়, প্রতিদিন হারিয়ে যাওয়ার, চাপা পড়ে থাকার, আর বেঁচে থাকার মরিয়া প্রত্যয়ের আরেকটি নাম।

দুই বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ, প্রতিবাদে দুই ভারতীয়কে ধরে এনেছে গ্রামবাসী। এব্যাপারে আপনার মতামত কি?