ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই মধ্যপ্রাচ্য ছাড়তে হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফরের পর শনিবার (১৭ মে) তেহরানে এক সমাবেশে এ কথা বলেন তিনি। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার।
মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন কৌশলের সমালোচনা করে খামেনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোকে মার্কিন সহায়তার ওপর নির্ভরশীল রাখতে চায়। তিনি বলেন, ‘এই অঞ্চলের দেশগুলোর দৃঢ় সংকল্প ও প্রতিরোধের মধ্যদিয়ে আমেরিকাকে অবশ্যই এই অঞ্চল ছেড়ে যেতে হবে এবং চলে যাবে।’
দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় বসার পর গত সপ্তাহে প্রথমবারের জন্য মধ্যপ্রাচ্য সফরে যান ট্রাম্প। তার এই সফরে সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক ট্রিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
সফরকালে ট্রাম্প ইরানের নেতৃত্বের কঠোর সমালোচনার পাশাপাশি ইরানের তেল রফতানি শূণ্যে নামিয়ে আনার হুঁশিয়ারি দেন। গত মঙ্গলবার (১৩ মে) যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি শীর্ষ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘ইরানের নেতারা তাদের জনগণের সম্পদ চুরি করে অন্য দেশে সন্ত্রাস ও রক্তপাতে মনযোগ দিয়েছেন।’
এরপর শুক্রবার (১৬ মে) দেশে ফেরার পথে তিনি ইরানকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে পারমাণবিক চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, তারা জানে যে তাদের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে, নাহলে খারাপ কিছু ঘটবে।’
ট্রাম্পের এসব মন্তব্যের জবাব দিয়েছেন খামেনি। শনিবার তেহরানের একটি মসজিদে দেয়া বক্তব্যে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিভিন্ন বক্তব্যকে ‘লজ্জাজনক’ এবং ‘জবাবের উপযুক্ত নয়’ বলে মন্তব্য করেন তিনি। ট্রাম্পের নাম উচ্চারণ না করেই ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, ‘ওই সব মন্তব্য এতই নিচুমানের যে সেগুলো ‘বক্তা ও আমেরিকান জনগণের জন্য লজ্জাজনক’।
গাজায় ইসরাইলের সামরিক আগ্রাসন ও গণহত্যায় যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে কথা বলেন খামেনি। তিনি গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় মার্কিন প্রচেষ্টা নিয়ে অসততার অভিযোগ করেন। তার কথায়, ‘ট্রাম্প দাবি করেন যে, তিনি তার শক্তি ও প্রভাবকে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ব্যবহার করতে চান।’
‘কিন্তু তিনি ও তার প্রশাসন এবং মার্কিন কর্মকর্তারা তাদের ক্ষমতার ব্যবহার করছেন গাজায় গণহত্যা চালাতে, যেখানে খুশি যুদ্ধ উসকে দিতে আর নিজেদের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতা দিতে,’ বলেন খামেনি।
তিনি আরও বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরব দেশগুলোকে এমন একটি মডেল উপহার দিয়েছেন যেটা তার নিজের ভাষা থেকেই স্পষ্ট যে, দেশগুলো আমেরিকা ছাড়া দশ দিনও টিকে থাকতে পারবে না।’
খামেনি বলেন, ‘এই মডেল অবশ্যই ব্যর্থ হয়েছে। আঞ্চলিক দেশগুলোর সংগ্রামের সাথে সাথে, যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই এই অঞ্চল ছেড়ে যেতে হবে এবং এক সময় চলে যাবে।’
খামেনি ইসরাইলি শাসন ব্যবস্থাকে এই অঞ্চলে ‘দুর্নীতির উৎস, যুদ্ধের উৎস এবং বিবাদের উৎস’ বলে অভিহিত করে বলেন, ‘এই অঞ্চলে একটি বিপজ্জনক এবং মারাত্মক ক্যান্সারজনিত টিউমার। এই ইহুদিবাদী শাসন ব্যবস্থাকে অবশ্যই উপড়ে ফেলতে হবে এবং তা অবশ্যই উৎপাটন করা হবে।’
ভাষণের অন্যত্র ইরানের নেতা শিক্ষার ওপর গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ‘আমি বারবার বলেছি যে, আমরা শিক্ষায় যা কিছু খরচ করি তা আসলে একটি বিনিয়োগ, ব্যয় নয়;
এটি বহুমুখী লাভের জন্য ভূমি প্রশস্ত করার মতো। আমাদের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত যে এই সময়কালে প্রশাসন শিক্ষাখাতে বিশেষ মনোযোগ দিচ্ছে, বিশেষ করে মাননীয় প্রেসিডেন্ট নিজে নিজে এ বিষয়ে মনযোগ দিয়েছেন।’

দুই বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ, প্রতিবাদে দুই ভারতীয়কে ধরে এনেছে গ্রামবাসী। এব্যাপারে আপনার মতামত কি?