ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে যুদ্ধাবস্থা যখন প্রায় আসন্ন, ঠিক সে সময় করাচি বন্দরে পৌঁছেছে তুরস্কের যুদ্ধজাহাজ। বিষয়টি নিয়ে দক্ষিণ এশীয় কূটনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন—তুরস্ক কি পাকিস্তানের পক্ষে সামরিকভাবে অবস্থান নিচ্ছে?
পাকিস্তান নৌবাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, চলতি সপ্তাহে করাচি বন্দরে পৌঁছেছে তুরস্কের যুদ্ধজাহাজ টিসিজি বিয়ুকাদা। পাকিস্তান বলছে, এটি একটি সৌজন্যমূলক সফর এবং সামুদ্রিক সহযোগিতা বৃদ্ধির অংশ হিসেবে এই সফরটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া একে সৌজন্যমূলক সফর হিসেবে না দেখে ভূরাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে ব্যাখ্যা করছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর প্রাণঘাতী হামলার প্রেক্ষিতে ভারত-পাকিস্তান যখন সামরিক সংঘাতের মুখোমুখি, ঠিক তখন তুরস্কের যুদ্ধজাহাজ পাঠানো নিছক কূটনৈতিক বার্তা নয়—এটি দক্ষিণ এশীয় প্রভাব বিস্তারে তুরস্কের দৃশ্যমান আগ্রহের বহিঃপ্রকাশ।
এর আগে পাকিস্তানের অ্যাগোস্তা-নাইন্টিবি ক্লাসের সাবমেরিনগুলো আধুনিকীকরণে সহায়তা করেছিল তুরস্ক। সেই সঙ্গে ড্রোনসহ বিভিন্ন আধুনিক সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করে ইসলামাবাদের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার সম্পর্ক দৃঢ় করে তোলে আঙ্কারা।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার দাবি অনুযায়ী, ২৭ এপ্রিল করাচিতে অবতরণ করেছে তুরস্কের বিমান বাহিনীর একটি হারকিউলিস-ওয়ানহান্ড্রেড-থার্টি কার্গোবিমান। বিমানে সামরিক সরঞ্জাম বহনের কথাও জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে আরও ছয়টি কার্গোবিমান ইসলামাবাদের সামরিক ঘাঁটিতে পৌঁছেছে বলেও রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও তুরস্কের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এসব দাবিকে অমূলক হিসেবে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত-পাকিস্তান বিরোধকে কেন্দ্র করে তৃতীয় পক্ষের অবস্থান বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে তুরস্কের মতো ন্যাটোভুক্ত মুসলিম দেশ যখন সরাসরি পাকিস্তান ঘেঁষা বার্তা দিচ্ছে, তখন তা অঞ্চলটির নিরাপত্তা ভারসাম্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত।
এদিকে এই উত্তেজনার মাঝে ভারতের বিরুদ্ধে হুমকির বার্তা দিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছে খালিস্তানপন্থিরা। টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, সম্প্রতি কানাডার টরেন্টোর ম্যাল্টন গুরুদুয়ারার সামনে খালিস্তানপন্থিরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের প্রতিকৃতিকে প্রতীকী কারাগারে পুরে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। ওই বিক্ষোভের ভিডিও ভাইরাল হয়ে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া খালিস্তানপন্থিরা হিন্দু সম্প্রদায়কে কানাডা থেকে বিতাড়নের ডাক দেয়। তাদের নেতা গুরুপাতওয়ান্ত সিং পান্নু বলেন, ভারতের সঙ্গে যদি যুদ্ধ শুরু হয়, তাহলে পাঞ্জাব পাকিস্তানের পক্ষে লড়বে। একইসঙ্গে তিনি মোদী ও অমিত শাহকে হত্যার হুমকিও দেন।
এই প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করেছে বলে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা মত দিচ্ছেন।

দুই বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ, প্রতিবাদে দুই ভারতীয়কে ধরে এনেছে গ্রামবাসী। এব্যাপারে আপনার মতামত কি?