যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনাকারী দলের অবস্থান নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে ইরান। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাকায়ি বলেন,
“আমরা শুধুমাত্র ওয়াশিংটনের আনুষ্ঠানিক ও পরিণত অবস্থানকেই গুরুত্ব দিই। নিজেদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলে যুক্তিসঙ্গত অবস্থান নিতে পারা সম্পূর্ণভাবে তাদের অভ্যন্তরীণ সক্ষমতার ওপর নির্ভর করে।”
সোমবার তেহরানে আয়োজিত এক নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচির পাকিস্তান সফরের প্রসঙ্গ টেনে বাকায়ি জানান,
“ইরান প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ কূটনৈতিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে। পাকিস্তান সফর ছিল সেই কৌশলগত পরামর্শ কাঠামোরই অংশ।”
আরাকচি পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও দেশটির প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির সঙ্গেও বৈঠক করেছেন বলে নিশ্চিত করেন তিনি। আলোচনায় উঠে এসেছে অধিকৃত ফিলিস্তিন, লেবানন, সিরিয়া এবং বৃহত্তর পশ্চিম এশিয়ার চলমান সংকট ও আগ্রাসনের বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি ও কৌশল।
এর পাশাপাশি আরাকচির আসন্ন ভারত সফর নিয়েও কথা বলেন বাকায়ি। তিনি জানান,
“জয়েন্ট ইকোনমিক কমিশনের বৈঠকে অংশ নিতে আরাকচি শিগগিরই ভারত যাবেন।” সোমবার পাকিস্তান সফর শেষ হওয়ার পর, বৃহস্পতিবার তার নয়াদিল্লি সফর নির্ধারিত রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার হুমকির বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে বাকায়ি বলেন,
“ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আমাদের অবস্থান অটল এবং তা আন্তর্জাতিক আইন ও যৌক্তিকতার ভিত্তিতে গঠিত। আমরা এই রেড লাইন অতিক্রম করব না এবং আলোচনা সেই কাঠামোতেই পরিচালিত হবে।”
তিনপক্ষীয় আলোচনার স্থগিত হওয়া প্রসঙ্গে বাকায়ি বলেন,
“ওমানের মধ্যস্থতায় আলোচনা স্থগিত করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল ঘনিষ্ঠ মহলে যেসব উস্কানিমূলক এবং কূটনীতি বিরোধী তৎপরতা বেড়েছে, তার পেছনে যে একটি পরিকল্পিত ব্যাঘাত আনার প্রয়াস চলেছে—তা আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি।”
তিনি বলেন,
“আমরা গুঞ্জন শুনেছি, কেউ কেউ অভ্যন্তরীণভাবে মার্কিন সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে চাইছে। কিন্তু ইরানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ওয়াশিংটনের আনুষ্ঠানিক ও ঐক্যবদ্ধ অবস্থান। তাদের ভেতরকার মতানৈক্য বা কৌশলগত বিভ্রান্তি আমাদের কূটনৈতিক অবস্থানকে প্রভাবিত করে না।”
ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর আজারবাইজান সফর বাতিলের প্রসঙ্গে বাকায়ি মন্তব্য করেন,
“ইহুদিবাদী নেতাদের সফর যেকোনো রাষ্ট্রের জন্য অশুভ সংকেত। বিশ্বের সচেতন মানুষ জানে, ফিলিস্তিনি জাতির বিরুদ্ধে সবচেয়ে ভয়াবহ অপরাধ সংঘটন করেছে এই শাসকগোষ্ঠী। কাজেই কোন দেশ কাকে আতিথেয়তা দেবে, তা নিয়ে বৈশ্বিক সতর্কতা দরকার।”
ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের প্রস্তাবিত রোম বৈঠক স্থগিত হওয়া প্রসঙ্গে তিনি জানান,
“কোনো রাজনৈতিক বার্তা নয়, শুধুমাত্র লজিস্টিক জটিলতার কারণে এই বৈঠক স্থগিত করা হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে আলোচনা পুনরায় শুরুর পূর্ণ প্রস্তুতি রয়েছে।”
রাশিয়ার সঙ্গে ইরানের কৌশলগত অংশীদারিত্বের প্রসঙ্গে বাকায়ি বলেন,
“চুক্তিটি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া এগোচ্ছে। প্রেসিডেন্ট বরাবর প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে এবং বর্তমানে এটি আইনি অনুমোদনের পর্যায়ে রয়েছে।”
মোশে মেকানিজম নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ইরানি মুখপাত্র বলেন,
“আমাদের কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। এই প্রক্রিয়ার অপব্যবহার এবং নিরাপত্তা পরিষদে প্রভাব বিস্তারের অপচেষ্টা যেমন অগ্রহণযোগ্য, তেমনি এর পরিণতি প্রতিপক্ষের জন্যই ক্ষতিকর হবে।”
ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক ব্রিকস সম্মেলন নিয়েও মন্তব্য করেন বাকায়ি। তিনি বলেন,
“এই বৈঠকে দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা, উন্নয়নশীল দেশগুলোর ঐক্য এবং আঞ্চলিক বিরোধ নিষ্পত্তিতে জাতিসংঘ সনদের ভিত্তিতে একটি স্বাধীন কাঠামো গঠনের প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে। ইরান এই প্রক্রিয়ায় সক্রিয় অংশগ্রহণ অব্যাহত রাখবে।”
পাকিস্তান-ভারত দ্বন্দ্ব নিয়েও মুখ খোলেন তিনি। বলেন,
“এই দুই প্রতিবেশীর মধ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য ইরান সব রকম কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণে প্রস্তুত। আমরা চাই না, এই অঞ্চল আর কোনো সামরিক উত্তেজনার শিকার হোক।”

দুই বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ, প্রতিবাদে দুই ভারতীয়কে ধরে এনেছে গ্রামবাসী। এব্যাপারে আপনার মতামত কি?