হজের গঠন ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে গভীর তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেছেন ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী। রবিবার হজ কর্মকর্তা এবং হজযাত্রীদের একটি দলের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বলেন, হজ কেবল ধর্মীয় ইবাদত নয়, এটি মানবজাতির জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত একটি পরিপূর্ণ দিকনির্দেশনা ও রাজনৈতিক কাঠামোর অংশ।
বক্তব্যের শুরুতে তিনি ইরানের বন্দর আব্বাসের সাম্প্রতিক ঘটনায় নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর শোক ও সহানুভূতি জানান এবং আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ধৈর্য ও শান্তির প্রার্থনা করেন। তিনি বলেন, আল্লাহর পথে ধৈর্য প্রদর্শন করলে তার প্রতিদান বহুগুণে ফিরে আসে। এমন ঘটনায় প্রিয়জন হারানোর দুঃখ জাতির হৃদয়ে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে।
সর্বোচ্চ নেতা বলেন, হজের বাহ্যিক কাঠামো রাজনৈতিক হলেও এর প্রতিটি অনুষঙ্গ আধ্যাত্মিক এবং শিক্ষণীয়। এই ইবাদতের সব কার্যক্রম মানবিক মূল্যবোধ, ঐক্য, আত্মত্যাগ এবং তাওহিদবাদের আদর্শকে সামনে এনে মানব সমাজকে পরিচালনার দিকনির্দেশনা দেয়। তাওয়াফের মাধ্যমে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাওহিদের ভিত্তিতে নীতি নির্ধারণের শিক্ষা মেলে। হজের সাঈ, আরাফা, কোরবানি ও রম্য নিক্ষেপের প্রতিটি অংশ একেকটি প্রতীক—কখনো আত্মত্যাগ, কখনো শয়তান বিরোধিতা, আবার কখনো নিরবিচারে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান।
তিনি বলেন, হজের প্রতিটি ধাপ এমনভাবে নির্ধারিত, যা ব্যক্তিগত আত্মশুদ্ধির পাশাপাশি গোটা মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য ও সহমর্মিতার বার্তা দেয়। আজকের মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন হলো সেই ঐক্য, যা একে অপরের পাশে দাঁড়াতে শিখায়। যদি মুসলিম উম্মাহর মধ্যে সংহতি ও সমন্বয় বজায় থাকত, তবে গাজা ও ইয়েমেনের মতো করুণ বাস্তবতা দেখতে হতো না।
আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী বলেন, হজের শিক্ষা শুধু ধর্মীয় আচার নয়, এটি একটি বিস্তৃত সামাজিক কাঠামো। এই কাঠামো যদি সুস্পষ্টভাবে অনুসরণ করা হয়, তবে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে নিরাপত্তা, উন্নয়ন ও পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি হয়। সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর বিভাজন নীতিকে রুখে দিতে হলে এই ঐক্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, আজ মুসলিম উম্মাহর বিভাজন, মতপার্থক্য ও দ্বন্দ্বকে কাজে লাগিয়ে ইসরাইল, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্ব মোড়লরা নিজেদের স্বার্থ প্রতিষ্ঠা করছে। এই বাস্তবতা থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হলো, হজের শিক্ষাকে রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোর অংশ হিসেবে গ্রহণ করা এবং তা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা।
সর্বোচ্চ নেতা বলেন, হজ আয়োজনকারী দেশগুলোর ওপর এক গুরুদায়িত্ব বর্তায়। এই ইবাদতের প্রকৃত শিক্ষা ও তাৎপর্য সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে পণ্ডিত, লেখক, চিন্তাবিদ ও জনমতের নেতৃস্থানীয়দের অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। সঠিক হজ ব্যবস্থাপনা কেবল ধর্মীয় কর্তব্য পালনের মাধ্যম নয়, বরং একটি পূর্ণাঙ্গ সভ্যতা গঠনের ভিত্তি হতে পারে।
এ বছর ইরান থেকে ৮৬ হাজারের বেশি হজযাত্রী পবিত্র হজ পালনে অংশ নেবেন বলে হজ অফিস সূত্রে জানা গেছে।

দুই বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ, প্রতিবাদে দুই ভারতীয়কে ধরে এনেছে গ্রামবাসী। এব্যাপারে আপনার মতামত কি?