গাজা উপত্যকার উচ্চশিক্ষিত, গবেষক ও সংস্কৃতিকর্মীদের পরিকল্পিতভাবে সরিয়ে নিতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করছে জেরুজালেমে অবস্থিত ফরাসি দূতাবাস—এমন অভিযোগ তুলেছে ইউরো-মেডিটারেনিয়ান হিউম্যান রাইটস মনিটর।
সংস্থাটির প্রধান রামি আবদু মঙ্গলবার রাতে এক বিবৃতিতে জানান, ফিলিস্তিনি সমাজের মেধাভিত্তি দুর্বল করার উদ্দেশ্যে গোপনভাবে এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তিনি বলেন, “পিএইচডি ডিগ্রিধারী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, ইতিহাসবিদ ও সংস্কৃতিমনা ব্যক্তিত্বদের গাজা থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য ফরাসি দূতাবাস ও ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মধ্যে সমন্বিত একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হচ্ছে।”
রামি আবদুর দাবি, এটি একটি মানবিক পদক্ষেপ নয় বরং বৃহত্তর দখলদার পরিকল্পনার অংশ, যেখানে ফিলিস্তিনিদের নিজভূমি থেকে জোরপূর্বক বিতাড়নের জন্য নানা কৌশল অনুসরণ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, “ইসরায়েলি বাহিনী বোমা ও আগ্রাসনের মাধ্যমে যে লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে, এখন তারা তা করছে কথিত মানবিক সহায়তার আড়ালে। এটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও মানবিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।”
এর আগে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘মিডল ইস্ট আই’ এক বিশেষ প্রতিবেদনে ইসরায়েলের ‘পাঁচ ধাপের পরিকল্পনা’ তুলে ধরে জানায়, গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের বিতাড়ন এবং পুরো অঞ্চল দখলের প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন ধরেই চালিয়ে যাচ্ছে তেল আবিব। ওই পাঁচ ধাপের পরিকল্পনায় রয়েছে—গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ, জনসংখ্যা হ্রাস, স্বাস্থ্যব্যবস্থা ধ্বংস, বসবাসের অনুপযোগী অবস্থা সৃষ্টি এবং আন্তর্জাতিক বৈধতা অর্জনের চেষ্টা।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর এ পর্যন্ত প্রায় ৩৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বড় অংশই নারী ও শিশু। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর ভাষ্য, ইসরায়েলের এই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার লক্ষ্য হচ্ছে গাজাকে ফিলিস্তিনিশূন্য অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলা।
রামি আবদু আরও বলেন, “এটি একটি নতুন রকমের জাতিগত নির্মূল পরিকল্পনা, যেখানে শক্তি নয়, এখন ব্যবহৃত হচ্ছে তথাকথিত সহযোগিতার মুখোশ।” তিনি সতর্ক করেন, এই পদক্ষেপ মানবজাতির জন্য একটি ‘বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত’ হিসেবে ইতিহাসে চিহ্নিত হবে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পশ্চিমা সমর্থন ও নীরবতার সুযোগে ইসরায়েল যে কৌশলে গাজাকে সাংস্কৃতিক ও মেধাশূন্য করার দিকে এগোচ্ছে, তা শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, বরং সমগ্র আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কাঠামোর জন্য একটি ভয়াবহ সংকেত।

দুই বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ, প্রতিবাদে দুই ভারতীয়কে ধরে এনেছে গ্রামবাসী। এব্যাপারে আপনার মতামত কি?