রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে,
ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্য থাকলেও দেশটি কখনোই তার দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত অংশীদারদের ত্যাগ করবে না। মস্কোর ভাষায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংলাপ চালু রাখার প্রয়াস চললেও ইরানসহ ঘনিষ্ঠ মিত্রদের স্বার্থ ও সম্পর্ককে কোনোভাবেই উপেক্ষা করা হবে না।
সোমবার এক বিবৃতিতে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা আলেকজান্ডার আলিমভ বলেন,
“আমরা আমাদের অন্যান্য অংশীদারদের অবহেলা করবো না, বিশেষ করে যারা আমাদের সঙ্গে সত্যিকার অর্থে সহযোগিতা করতে চায়। ওয়াশিংটনের সঙ্গে সহযোগিতা কখনোই আমাদের বৈশ্বিক বন্ধন ছিন্ন করার কারণ হতে পারে না।”
রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ ও দ্বিপাক্ষিক উত্তেজনার মধ্যেও সম্প্রতি সৌদি আরবের রিয়াদ এবং তুরস্কের ইস্তাম্বুলে চার দফা গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই প্রক্রিয়ার মধ্যেই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইরানের সঙ্গে একটি বিস্তৃত কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তিতে সই করেছেন, যা দু’দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা, জ্বালানি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, বাণিজ্য এবং কূটনৈতিক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।
এ প্রসঙ্গে পার্সটুডে ও ইরনা একযোগে জানায়, ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনায় রাশিয়া সক্রিয়ভাবে সহায়ক ভূমিকা রাখতে চায়। রুশ বিশেষজ্ঞ রজব সাফারভ এক সাক্ষাৎকারে বলেন,
“মস্কোর অবস্থান পরিষ্কার—তারা তেহরান-ওয়াশিংটন উত্তেজনা নিরসনের পক্ষে। রাশিয়া সবসময়ই ইরানবিরোধী নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে, এবং এই সম্পর্ক স্বাভাবিক করা বৈশ্বিক স্বার্থের সাথে সম্পৃক্ত।”
ইরান-রাশিয়া সম্পর্ক নিয়ে পশ্চিমা দুনিয়ার উদ্বেগ প্রসঙ্গে ইরানের সাবেক কূটনীতিক মোহসেন পাকাইন বলেন,
“এই সম্পর্ক ইরানের সার্বভৌম সিদ্ধান্ত। পশ্চিমা রাষ্ট্র কিংবা ইউরোপের এই সম্পর্ক নিয়ে কী মনে করছে, তা আমাদের জন্য প্রাসঙ্গিক নয়।”
এদিকে ইরান-রাশিয়ার সম্পর্ককে আরও মজবুত করতে বেসরকারি খাতের ভূমিকার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন ইরানি প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মেহদী সানায়ি। তিনি বলেন, “এই সম্পর্ক শুধুমাত্র সরকারি স্তরে সীমাবদ্ধ থাকলে টেকসই হবে না। এজন্য বাণিজ্য, প্রযুক্তি, শিক্ষা এবং সংস্কৃতিগত ক্ষেত্রে বেসরকারি অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা জরুরি।”
এই প্রেক্ষাপটে, ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে ১৮তম যৌথ অর্থনৈতিক কমিশন বৈঠক ২৩ থেকে ২৫ এপ্রিল মস্কোতে অনুষ্ঠিত হবে। এতে ইরানের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেবেন তেলমন্ত্রী মোহসেন পাকনেজাদ, আর রাশিয়ার পক্ষ থেকে নেতৃত্বে থাকবেন জ্বালানিমন্ত্রী সের্গেই সিভলিয়েভ। এই বৈঠকে জ্বালানি, পরিবহন, খাদ্য নিরাপত্তা, প্রযুক্তি হস্তান্তর ও আর্থিক লেনদেনসহ একাধিক খাতে সহযোগিতা চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পশ্চিমা বিশ্ব ইরান-রাশিয়ার এই ঘনিষ্ঠতাকে “বিকল্প জোট রাজনীতির উত্থান” হিসেবে দেখছে। অন্যদিকে, তেহরান ও মস্কো তাদের সম্পর্ককে ন্যায্য আন্তর্জাতিক ভারসাম্য গঠনের অংশ হিসেবে তুলে ধরছে। বর্তমান ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দুই দেশই একে অপরকে কৌশলগত প্রতিরক্ষা, নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলা এবং প্রযুক্তি সহায়তার নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করছে।
এই প্রক্রিয়া শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, বরং ইউরেশিয়া এবং বৈশ্বিক কূটনীতিতেও একটি নতুন সংলাপ কাঠামোর ইঙ্গিত দিচ্ছে, যেখানে পশ্চিমের একতরফা আধিপত্যের বিপরীতে একাধিক কেন্দ্রীয় শক্তি আত্মপ্রকাশ করছে।

দুই বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ, প্রতিবাদে দুই ভারতীয়কে ধরে এনেছে গ্রামবাসী। এব্যাপারে আপনার মতামত কি?