রাশিয়া টুডে-কে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, আঞ্চলিক কূটনীতি এবং রাশিয়ার সঙ্গে তেহরানের কৌশলগত সম্পর্ক নিয়ে বিস্তারিত অবস্থান তুলে ধরেছেন। পার্সটুডে-তে সাক্ষাৎকারের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো প্রকাশিত হয়েছে, যা মধ্যপ্রাচ্য, ককেশাস ও বৈশ্বিক ভূরাজনীতিতে ইরান-রাশিয়া-চীন ঘনিষ্ঠতা ও কৌশলগত অবস্থানকে নতুনভাবে ব্যাখ্যা করেছে।
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে ইরান, রাশিয়া ও চীনের ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতাকে “অপরিহার্য” উল্লেখ করে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন,
“বিশ্ব রাজনীতির বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই তিন দেশের যৌথ অবস্থান আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইরানের পারমাণবিক ইস্যুতে ইতোমধ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং অন্যান্য বিষয়ে আলোচনার জন্য আমরা প্রস্তুত।”
দক্ষিণ ককেশাস নিয়ে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে সাম্প্রতিক বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে আরাকচি জানান, আঞ্চলিক নিরাপত্তা রক্ষায় ইরান ও রাশিয়ার অবস্থান অভিন্ন। “3+3 ফোরাম”-এর মাধ্যমে আঞ্চলিক দেশগুলোর অংশগ্রহণে সমস্যার সমাধান চায় তেহরান। তিনি বলেন, “বিদেশি শক্তির হস্তক্ষেপ নয়, বরং আঞ্চলিক নেতৃত্বের মাধ্যমেই শান্তির পথ খুঁজে পাওয়া সম্ভব।”
ইরান-রাশিয়ার সম্পর্কের বর্তমান অবস্থানকে ‘অভূতপূর্ব’ উল্লেখ করে আরাকচি বলেন,
“তেহরান ও মস্কোর মধ্যে এমন ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক অতীতে কখনো ছিল না। এখন আমাদের মধ্যে একটি বিস্তৃত কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি রয়েছে, যা শুধু রাজনৈতিক নয়, অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রেও যৌথ অগ্রগতির পথ সুগম করেছে।”
পারমাণবিক ইস্যুতে রাশিয়ার ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন,
“রাশিয়া সবসময় শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষপাতী এবং জেসিপিওএ আলোচনায় তাদের ভূমিকা ছিল গঠনমূলক। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়ার প্রভাব এবং তেহরানের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করে তারা একটি ন্যায্য সমঝোতা অর্জনে সহায়ক হতে পারে।”
সাক্ষাৎকারে ইসরাইলি হুমকি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে আরাকচি বলেন,
“ইসরাইল অতীতেও ইরানে হামলা চালাতে পারেনি, এখনো পারবে না, ভবিষ্যতেও না। এমনকি আমেরিকার পূর্ণ সমর্থন থাকলেও তারা আমাদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা ভেদ করতে পারবে না। আমরা আমাদের মর্যাদা, স্বার্থ ও নিরাপত্তার সঙ্গে কোনো আপস করব না।”
সিরিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে দেওয়া মন্তব্যে তিনি বলেন, “ইসরাইলের দখলদারিত্ব ও সিরিয়ার অখণ্ডতা লঙ্ঘনের বিষয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা অতীতেও সিরিয়ার সরকারের পাশে ছিলাম এবং ভবিষ্যতেও শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা প্রস্তুত—যদি সেখানে রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকে। একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠনই অঞ্চলটির স্থিতিশীলতার ভিত্তি হতে পারে।”
এই সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, ইরান এখন শুধুমাত্র নিজস্ব ভূখণ্ডের নিরাপত্তা নিয়েই নয়, বরং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক কৌশলগত ভারসাম্যেও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে চায়। বিশেষ করে রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে ইরান আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ও পশ্চিমা চাপে বিকল্প পথ তৈরি করতে চাচ্ছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা শুধু সামরিক বা কূটনৈতিক স্তরেই সীমাবদ্ধ থাকবে না; বরং জ্বালানি, অর্থনীতি, প্রযুক্তি এবং আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারে এর বহুমাত্রিক প্রভাব পড়বে। এই সমীকরণ আগামী দিনের বৈশ্বিক জোটরাজনীতিতে এক নতুন ভারসাম্য তৈরির ইঙ্গিত দিচ্ছে।

দুই বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ, প্রতিবাদে দুই ভারতীয়কে ধরে এনেছে গ্রামবাসী। এব্যাপারে আপনার মতামত কি?