গাজায় হামাসের সঙ্গে চলমান যুদ্ধে সশস্ত্র অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। হামাসের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর শনিবার (১৯ এপ্রিল) রাতে এক ভাষণে তিনি বলেন, “ইসরায়েলের জয় না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চলবে।”
আল জাজিরা ও রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে,
নেতানিয়াহু দেশটির সেনাবাহিনীকে গাজায় অভিযান আরও জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছেন। তার ভাষ্য অনুযায়ী, “যখন আমাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য চরম মূল্য দিতে হচ্ছে, তখন একমাত্র বিকল্প হলো জয় নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়া।”
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় গাজাজুড়ে তীব্র বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। শুধু শনিবারের হামলাতেই প্রাণ হারিয়েছেন ৫২ জন ফিলিস্তিনি, যাদের মধ্যে রয়েছে নারী ও শিশু। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৮ মাসে চলমান ইসরায়েল-হামাস সংঘাতে এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৫১ হাজার ছাড়িয়েছে, আর আহত হয়েছে লক্ষাধিক মানুষ।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই অবস্থা গণহত্যার পর্যায়ে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও অন্যান্য সংস্থাগুলো একাধিকবার গাজায় অবরোধ, অব্যাহত হামলা ও চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চনার বিরুদ্ধে উদ্বেগ জানালেও ইসরায়েলের অবস্থানে কোনো পরিবর্তন আসেনি।
সামরিক তথ্য বিশ্লেষণ করে এএফপি জানিয়েছে, বর্তমানে ইসরায়েলি বাহিনী ১৮৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে, যা গাজার মোট ভূখণ্ডের প্রায় ৫০ শতাংশ।
খবরে আরও বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী এখন পর্যন্ত গাজার ভেতরে তিনটি পৃথক করিডর তৈরি করেছে—ফিলাডেলফি করিডর, মোরাগ করিডর এবং নেতজারিম করিডর। এই করিডরগুলো গাজার ভূখণ্ডকে ভৌগোলিকভাবে ভাগ করে ফেলেছে, যার ফলে এক অঞ্চল থেকে আরেক অঞ্চলে যাতায়াত কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি একধরনের “সর্বাত্মক বিভাজন কৌশল”, যার মাধ্যমে গাজার জনগণকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা আরও মনে করছেন, যুদ্ধবিরতির কোনো ইঙ্গিত না থাকার পাশাপাশি যেভাবে নেতানিয়াহু জয়ের আগে থামবেন না বলে দৃঢ় ঘোষণা দিয়েছেন, তা ভবিষ্যতে সংঘর্ষকে আরও দীর্ঘায়িত করবে এবং মানবিক বিপর্যয়ের মাত্রাও তীব্রতর হবে।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গাজার অনেক হাসপাতালে চিকিৎসা সামগ্রী শেষ হয়ে গেছে। শিশুরা অপুষ্টি ও যুদ্ধজনিত ট্রমায় ভুগছে। হাজার হাজার মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়ে আছে।
আন্তর্জাতিক মহলে এই পরিস্থিতি ঘিরে চাপ বাড়লেও, ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রসহ কিছু পশ্চিমা দেশের সরাসরি সহায়তা ও নীরব সমর্থনের ওপর ভর করে নিজেদের অভিযানকে ‘সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই’ হিসেবে তুলে ধরছে।
ফিলিস্তিনপন্থী দেশগুলো, বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও ইসলামি সংগঠন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (ICC) তদন্ত দাবি করে আসছে। তবে এখন পর্যন্ত বড় কোনো রাজনৈতিক চাপ কিংবা যুদ্ধবিরতির সফল উদ্যোগ দৃশ্যমান হয়নি।
গাজার জনগণ এখন চরম মানবিক সঙ্কটের মধ্যে পড়েছে। খাদ্য, পানি, ওষুধ এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রায় সম্পূর্ণরূপে ভেঙে পড়েছে। জাতিসংঘ বারবার মানবিক করিডর খোলার আহ্বান জানালেও, ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানের কারণে তা বারবার ব্যর্থ হচ্ছে।
এই অবস্থায় যুদ্ধ কবে শেষ হবে, কিংবা কোনো পক্ষ সমঝোতায় আসবে কি না—তা এখনো অনিশ্চিত। তবে স্পষ্টভাবে বলা যায়, এই যুদ্ধ আর শুধুমাত্র হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই; এটি এখন এক ভয়াবহ মানবিক সংকটে রূপ নিয়েছে, যার প্রভাব গোটা অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদে অনুভূত হবে।

দুই বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ, প্রতিবাদে দুই ভারতীয়কে ধরে এনেছে গ্রামবাসী। এব্যাপারে আপনার মতামত কি?