বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ভূরাজনৈতিক অবস্থান এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরে দেওয়া মন্তব্য ভারতের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা ও গণমাধ্যম এবং প্রচার বিভাগের প্রধান পবন খেরা অভিযোগ তুলেছেন—বাংলাদেশ ভারতকে ‘ঘিরে ফেলতে’ চীনকে আহ্বান জানাচ্ছে।
পবন খেরা তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স (পূর্বের টুইটার)-এ দেওয়া পোস্টে লিখেছেন, “বাংলাদেশ ভারতকে ঘিরে ফেলতে চীনকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। এ ধরনের মনোভাব ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি।”
তিনি আরও দাবি করেন, “ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার মণিপুর পরিস্থিতির প্রতি উদাসীন, আর সেই সুযোগেই চীন অরুণাচল প্রদেশে বসতি স্থাপন করছে। এই দুটি মিলে ভারতের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা চরমভাবে প্রশ্নের মুখে পড়েছে।”
এই রাজনৈতিক ক্ষোভের কেন্দ্রে রয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সম্প্রতি চীন সফরে গিয়ে ড. ইউনূস চীনের রাষ্ট্রীয় নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সেভেন সিস্টার্স নামে পরিচিত সাতটি রাজ্য পুরোপুরি স্থলবেষ্টিত—তাদের কোনও সরাসরি সমুদ্রসংযোগ নেই। এই অঞ্চলকে সমুদ্রের সঙ্গে সংযুক্ত করার একমাত্র কার্যকরী পথ বাংলাদেশ। সেই হিসেবে বাংলাদেশই এই অঞ্চলের ‘সমুদ্রপথের অভিভাবক’।
ভারতীয় রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অঙ্গনে ড. ইউনূসের এই বক্তব্যকে ভারতের নিরাপত্তার জন্য ‘অন্তর্নিহিত হুমকি’ হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে। বিশেষত ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর প্রতি এমন কৌশলগত মন্তব্যকে ঘিরে সরকার দলীয় নেতাদের পাশাপাশি বিরোধী দলগুলোও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত এতদিন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘প্রাধান্য ভিত্তিক’ পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করলেও, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে বাংলাদেশের কূটনৈতিক কৌশলে নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে। আর এই নতুন কূটনীতির কেন্দ্রে চীন, যা দিল্লিকে চরম অস্বস্তির মধ্যে ফেলেছে।
ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ভারতের প্রত্যাশিত ‘পূর্বানুগত সমর্থক’ নীতিকে প্রত্যাখ্যান করে বহুমাত্রিক কৌশলগত সম্পর্কের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যেখানে ভারতের একচেটিয়া ভূরাজনৈতিক সুবিধা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে।
এ প্রসঙ্গে এক আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক বলেন, “বাংলাদেশ আর কারও ছায়ায় থাকতে চায় না। তারা এখন সমুদ্র ও বন্দরনীতিকে নিজেদের জাতীয় নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের মূল ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করছে। ভারতের উচিত বাস্তবতা মেনে নিয়ে পরিণত কূটনৈতিক ভাষা ব্যবহার করা।”
ভারতের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদের এই কণ্ঠস্বর স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে, বাংলাদেশের নতুন ভূরাজনৈতিক অবস্থান ও কৌশল যে উপমহাদেশের কৌশলগত সমীকরণ আমূল বদলে দিতে চলেছে।

জয় ও নিঝুম মজুমদারের এই আহ্বানকে দেশবিরোধী বলে মনে করেন ?