ঢাকায় রাশিয়ান হাউজের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক বিশেষ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার সম্পর্ককে আরও গভীর ও দৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর গুরুত্ব তুলে ধরেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানকালে তিনি বলেন, বাংলাদেশ-রাশিয়ার মধ্যকার ঐতিহাসিক সম্পর্ক, যা সত্তরের দশকে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময় থেকে গড়ে উঠেছে, তা এখন আরও সমৃদ্ধ হচ্ছে এবং নতুন মাত্রায় বিকশিত হচ্ছে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “দুদেশের মধ্যে হৃদ্যতার উত্তরাধিকার ধরে রাখার পাশাপাশি আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একযোগে কাজ করা এবং বাংলাদেশ-রাশিয়ার বন্ধনকে অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় আরও শক্তিশালী রাখা অত্যন্ত জরুরি।”
রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সম্পর্কের প্রতীক হিসেবে ১৯৭৪ সালে ঢাকায় রাশিয়ান হাউজ প্রতিষ্ঠিত হয়। এই প্রতিষ্ঠানটি রুশ ভাষা শিক্ষা কোর্স পরিচালনার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মাধ্যমে দুদেশের শিল্পী ও সাহিত্যিকদের মধ্যে মেলবন্ধন তৈরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
বাংলাদেশ-রাশিয়া দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ব্যাপ্তি সম্পর্কে তৌহিদ হোসেন বলেন, “আমাদের পারস্পরিক সম্পর্ক এখন কেবল শিক্ষা ও সংস্কৃতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি বাণিজ্য, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তাসহ বহুবিধ ক্ষেত্রে বিস্তৃত হয়েছে।”
বিশেষভাবে তিনি রাশিয়ার সহযোগিতায় নির্মিত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কথা উল্লেখ করে বলেন, “নানাবিধ উন্নয়নমূলক কাজে রাশিয়ার বিভিন্ন সহযোগিতা আমাদের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির যাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র আমাদের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার ক্ষেত্রে এক অনন্য দৃষ্টান্ত। এ প্রকল্পের জন্য আমরা রুশ সরকারকে পুনরায় কৃতজ্ঞতা জানাই।”
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও জানান, রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক সংস্থা রোসাটমের মহাপরিচালক অ্যালেক্সি লিখাচেভ শিগগিরই বাংলাদেশ সফরে আসছেন। এই সফর রূপপুর প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার সহযোগিতার আশা ব্যক্ত করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ একটি নতুন যাত্রা শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার বৈষম্য, অবিচার ও অসাম্যহীন ভবিষ্যৎ গড়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে বিশ্বস্ত বন্ধু ও অংশীদার হিসেবে রুশ ফেডারেশনের অব্যাহত সহযোগিতার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।”
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকায় নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দার খোজিন, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ এবং রাশিয়ান হাউজের পরিচালক পাভেল ডিভয়চেনকভ।
বক্তব্যপর্ব শেষে রাশিয়ান হাউজের ৫০ বছর পূর্তির উৎসবে নানা সাংস্কৃতিক আয়োজন করা হয়, যেখানে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার সংস্কৃতির মেলবন্ধন ফুটিয়ে তোলা হয়।

জয় ও নিঝুম মজুমদারের এই আহ্বানকে দেশবিরোধী বলে মনে করেন ?