সীমান্তে দিনের পর দিন মানুষ হত্যা করেই চলেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। এর মধ্যেই সম্প্রতি বাংলাদেশ সীমান্তে নানা ধরনের উস্কানিমূলক কর্মকা- করে যাচ্ছে বাহিনীটি।
বিএসএফের বাড়াবাড়ির কারণে সীমান্তে উত্তেজনা সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে সীমান্তের শূন্যরেখায় ভারতীয় বাঙ্কার খননকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা আরো বাড়ছে। তবে ভারতের সীমান্ত আগ্রাসন রুখে দিতে তৎপর বাংলাদেশ।
ফেনীর পরশুরাম উপজেলায় নিজকালিকাপুর সীমান্তে গত সোমবার রাতে সীমান্ত লাইট বন্ধ করে কয়েকটি বাঙ্কার খনন করেছে ভারতীয় বিএসএফ। মুহুরী নদী সংলগ্ন বল্লারমুখার বেড়িবাঁধ পুননির্মাণে আবারো বিজিবি এবং বিএসএফের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
তবে কাজ চলমান রাখার সিদ্ধান্ত দিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সাথে বাঁধ নির্মাণে অংশ নিয়ে কাজ চালু রেখেছে স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, গত সোমবার রাতে সীমান্তে লাগানো লাইট বন্ধ করে ৫-৬টি বাঙ্কার খনন করেছে বিএসএফ। বল্লামুখার বাঁধের ৭০ মিটার অংশে ৩০ মিটার নোম্যান্সল্যান্ডে রয়েছে, এমন দাবি করে বিএসএফ বেড়িবাঁধ পুননির্মাণে শুরু থেকেই বার বার বাধা প্রদান করে যাচ্ছে।
গত মঙ্গলবার সকাল থেকে ভারতের ঈশানচন্দ্র নগর ও বাংলাদেশের নিজ কালিকাপুর ক্যাম্পের বিজিবি-বিএসএফ’র মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। দুপুরে বিজিবি-বিএসএফের উপস্থিতিতে সীমান্তে ওই জায়গাটি কয়েবার পরিমাপ করা হয়। বিজিবির পক্ষে মজুমদার হাট কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার আবদুর রশিদের নেতৃত্বে সেখানে বিজিবি সদস্যরা শক্ত অবস্থান নিয়েছেন।
এ সময় তিনি বলেন, আমাদের শক্তি আগেই নষ্ট করে দিয়েছে। ১৫ বছর আগের শক্তি থাকলে তারা কাছে আসতে পারত না। আমি সিলেট থাকা অবস্থায় আমার হাতে অস্ত্র ছিল না। শুধু লাঠি ছিল তারপরেও বিএসএফ ভয়ে আমার কাছে আসতো না। সীমান্তের মিটিংয়ে অস্ত্র আনা আর্ন্তজাতিক নিয়মের পরিপন্থী। আমরা খালি হাতে যাই। কিন্তু তারা অস্ত্র নিয়ে আসে। সীমানা রক্ষায় বিন্দু পরিমাণ ছাড় নেই।
সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে দেশের অভ্যন্তরে ভারি বৃষ্টিপাত ও ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে ফেনী জেলার পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া, ফেনী সদরসহ বৃহত্তর নোয়াখালী ৯০ ভাগ এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়।
স্মরণকালের ভয়াবহ ওই বন্যায় জেলার কয়েক লাখ মানুষ ঘরবাড়ি, ফসল ও সম্পদ হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়। বন্যায় মুহুরী কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর ১০২টি স্থানের বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। যার মধ্যে মেরামত কাজ সম্পন্ন হয় ৯৬টি। এতে ব্যয় হয় ৯ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।
এছাড়াও মেরামত কাজ চলমান রয়েছে বল্লামুখার দুটিতে। পানির তোঁড়ে মুহুরী নদীর তীরবর্তী পরশুরামের নিজ কালিকাপুর সীমান্তের বল্লারমুখা বেড়িবাঁধের তিনটি স্থানে প্রায় ৫শ’ মিটার বেড়িবাঁধে ভাঙন সৃষ্টি হয়।
বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর থেকে এখানের বাঁধ পুননির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিল এলাকাবাসী। এক মাস ধরে বাঁধগুলো পুননির্মাণের কাজ করে আসছে ঠিকাদার। এর আগে ৩০ জানুয়ারি বল্লামুখার বাঁধ নির্মাণে বাঁধা প্রদান করে বিএসএফ।
আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইনানুযায়ী শূন্যরেখা থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বাঁধ পুননির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। তবে সেই বাধা উপেক্ষা করে কাজ চালিয়ে যেতে ঠিকাদারদের নির্দেশ দিয়েছে বিজিবি।
স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শী মোহাম্মদ ইয়াসিন জানান, বিএসএফ সীমান্তে গত সোমবার রাতে বাতি বন্ধ করে ৫/৬টি বাঙ্কার খনন করেছে। বল্লামুখার বেড়িবাঁধ নির্মাণে সকালে এস্কেভেটর বন্ধ করে দিয়েছে, কাজ বন্ধ করতে বলেছে। তবে বিজিবি-বিএসএফ বলেছে, এতো বড় কাজ একটু এদিক-সেদিক হবেই।
জায়গাটির নোম্যান্সল্যান্ডে একটু পড়তে পারে। এটা আমরা দেখবো। কিন্তু কোনো ক্রমে কাজ বন্ধ হবে না। এজন্য কাজ চালু রয়েছে।
মুজাহিদ নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, বিএসএফ অস্ত্রের ভয় দেখাচ্ছে। কাজের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। এ বাঁধ নির্মাণ না হলে আগামী বর্ষায় আবার ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। এসময় তারা বিজিবির সাহসী সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেন এবং বিএসএফের আচারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বন্যা থেকে ফেনীকে বাঁচাতে টেকসই বাঁধের বিকল্প নেই। যতই বাধা আসুক এ বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। এ বিষয়ে প্রশাসনকে সাহসী সিদ্ধান্তে অটুট থাকতে হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আখতার হোসেন মজুমদার বলেন, বল্লামুখা বাঁধ নোম্যান্সল্যান্ডের মধ্যে আছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড এ বিষয়ে বাধা আসতে পারে আশঙ্কা করে আগেই বিজিবি-৪ ব্যাটেলিয়ন, কুমিল্লা সেক্টর ও যৌথ নদী কমিশনের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্য আলাপ করার জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে। যথা সময়ের মধ্যে বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ হবে বলে জানান তিনি।
বিজিবির ফেনী ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোশাররফ হোসেন বলেন, বল্লারমুখে বাঁধ নির্মাণ চলমান আছে, তবে শূন্যলাইন থেকে ১৫০ গজের মধ্যে যেকোন নতুন কাজ হলে দুই দেশের অনুমোদন প্রয়োজন, বর্ডার গাইডলাইন অনুযায়ী এখানে ৭০ মিটার কাজের মধ্যে ৩০ মিটার ১৫০ গজের মধ্যে পরেছে।
যা নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দুই দেশের যৌথ নদী কমিশন এ সমন্বয় অব্যাহত আছে। অনুমোদন সাপেক্ষে কাজ সম্পন্ন হবে। বর্তমানে ৪০ মিটারে কাজ চলমান আছে। যা ১৫০ গজের বাইরে। ৩০ মিটার কাজের বিষয়ে যৌথ নদী কমিশন অনুমোদন অপেক্ষায় আছে।

জয় ও নিঝুম মজুমদারের এই আহ্বানকে দেশবিরোধী বলে মনে করেন ?