প্রায় ৮ দশক ধরে চলতে থাকা কাশ্মীর সংকটের সমাধানের জন্য ভারতের সাথে আলোচনা শুরু করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। তিনি কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন।
পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে কাশ্মীরে আগের মত স্বায়ত্তশাসিত রাজ্যের মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য নয়াদিল্লির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শেহবাজ, যাতে আলোচনা শুরু করার পরিবেশ তৈরি হয়। তিনি আরও বলেন, কাশ্মীরের জনগণের প্রতি পাকিস্তানের আদর্শগত, কূটনৈতিক এবং রাজনৈতিক সমর্থন অব্যাহত থাকবে।
বুধবার পাকিস্তানের আজাদ কাশ্মীরে বিধানসভার বিশেষ সেশনে ভাষণ দেন শেহবাজ। তিনি বলেন, তারা কাশ্মীরসহ অন্যান্য সমস্যাগুলোর সমাধান সংলাপের মাধ্যমে করতে চান। তার মতে, ভারতের উচিত ২০১৯ সালের ৫ আগস্টের পদক্ষেপগুলো থেকে সরে এসে, জাতিসংঘে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আলোচনার জন্য এগিয়ে আসা।
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাশ্মীরের পুলওয়ামায় ভারতের সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স সিআরপিএফের একটি কনভয়ে আত্মঘাতী বোমা হামলা হয়। এসময়, কমপক্ষে ৪০ জন সিআরপিএফ সদস্য নিহত হন। এই হামলার পেছনে ছিল পাকিস্তানভিত্তিক একটি সংগঠন। ছয় মাস পর ৫ আগস্ট ভারতের পার্লামেন্ট সংবিধান থেকে ৩৭০ নম্বর ধারা ভোটাভুটির মাধ্যমে বাতিল করে।
এই ধারা জম্মু ও কাশ্মীরকে স্বায়ত্তশাসিত রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল। ধারা বাতিলের ফলে জম্মু-কাশ্মীরকে সরাসরি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হয়।
এই ঘটনার পর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় ইসলামাবাদ। পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ভারতীয়দের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ককে অত্যন্ত নিচু পর্যায়ে নামিয়ে আনেন। সেই সময় থেকেই এ পরিস্থিতি অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল অসীম মুনীর বলেছেন, ভারতের দিকের কাশ্মীর একদিন পাকিস্তানের অধীনে আসবে। তিনি ৫ ফেব্রুয়ারি আজাদ কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফফরাবাদে বক্তব্য দেওয়ার সময় এ কথা বলেন। জেনারেল মুনীর বলেন, ভারতের জম্মু কাশ্মীরের জনগণ পাকিস্তানের সাথে এক হওয়ার জন্য যে সংগ্রাম করছে, সেই সংগ্রামে পাকিস্তান তাদের পূর্ণ সমর্থন জানাবে এবং কাশ্মির একদিন পুরোপুরি পাকিস্তানের অংশ হবে,শুরু হচ্ছে কাশ্মীর মিশন।
তিনি বলেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই কাশ্মীরের জনগণের ইচ্ছা ও লক্ষ্য অনুযায়ী একদিন এটি স্বাধীন হবে এবং পাকিস্তানের অংশ হবে। জেনারেল মুনীর সতর্ক করে বলেন, যারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শক্তি ব্যবহার করবে, তাদের বিরুদ্ধে শক্তির পাল্টা ব্যবহার করে পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতাকে যেকোনো মূল্যে তারা রক্ষা করবেন। এসময়, আজাদ কাশ্মীরের মুজাফফরাবাদে কাশ্মীর আন্দোলনে শহীদদের স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তিনি।
এছাড়া, ভারতের শাসনাধীন জম্মু ও কাশ্মীরের বিভিন্ন নেতা ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন অসীম মুনীর। এই নেতাদের তিনি আশ্বস্ত করেন, তাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে পাকিস্তান সর্বদা তাদের পাশে থাকবে। জেনারেল মুনীর বলেন, জম্মু কাশ্মীরে হিন্দুত্ববাদীদের অত্যাচার ও নিপীড়ন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তবে এসব নিপীড়ন সেখানকার জনগণের মনোবলকে আরও শক্তিশালী করবে।
দেশভাগের পর থেকেই কাশ্মীর নিয়ে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে বিরোধ অব্যাহত রয়েছে। ভারতের অধীনে থাকা জম্মু কাশ্মীরের অনেক বাসিন্দাই পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হতে ইচ্ছুক। এই কারণেই দেশভাগের প্রায় সাত দশক পেরিয়ে গেলেও কাশ্মীরে এখনও সশস্ত্র বিদ্রোহ অব্যাহত রয়েছে।