পানি নিয়ে প্রতিযোগিতা বাড়ছে চীন ও ভারতের। ‘ওয়াটার ওয়ারস’ বা ‘পানি নিয়ে যুদ্ধের’ বিষয়ে চীনের হুমকির ভয়ে ভারতও জোরালো পদক্ষেপ নিচ্ছে। পানি যুদ্ধ তথা পানি নিয়ে উভয় দেশের এই কর্মকাণ্ড উদ্বেগের কারণ হতে পারে বাংলাদেশের।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের ‘ওয়াটার ওয়ারস’-এর হুমকির আশঙ্কায় অরুণাচল প্রদেশের আপার সুবানসিরিতে ১১ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন নিজেদের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ প্রকল্প শুরু করেছে ভারত।
এছাড়া উত্তর-পূর্বে নিজেদের সীমানার কাছাকাছি চীনের বাঁধগুলোর প্রতিক্রিয়ায় মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশ এবং বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের নীতিগত অনুমোদনের পরে এনএইচপিসি-তে সম্ভাব্য বরাদ্দের জন্য তিনটি স্থগিত প্রকল্পও ত্বরান্বিত করছে ভারত।
সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম টাইম অব ইন্ডিয়া বলছে, অরুণাচল প্রদেশের সীমান্তের মেদোগে ইয়ারলুং জাংবোতে (ব্রহ্মপুত্র) ৬০ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন চীনা প্রকল্প একাধিক কারণে ভারতের জন্য উদ্বেগের বিষয় হতে পারে।
যেমন চীন পানি সরিয়ে নিলে বা নদীর গতিমুখ বদলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে পানির অভাব দেখা দেবে, আবার হঠাৎ পানি ছেড়ে দিলে আসাম ও অরুণাচল প্রদেশের লক্ষাধিক মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং একইসঙ্গে পরিবেশগত উদ্বেগও রয়েছে।
অন্যদিকে ভারতের স্বাদুপানির ৩০ শতাংশ আসে ব্রহ্মপুত্র থেকে এবং একইসঙ্গে ভারতের মোট জলবিদ্যুতের ৪০ শতাংশের যোগান আসে এই নদ থেকে। তবে ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার প্রায় ৫০ শতাংশ চীনা ভূখণ্ডে রয়েছে।
সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় এই সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ভারতের ২ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন লোয়ার সুবানসিরি প্রকল্প চলতি বছরের মাঝামাঝিতে শেষ হবে। বহুমুখী এই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পটি বিদ্যুৎ উৎপাদন ছাড়াও বিভিন্ন কাজে সহায়তা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এর মধ্যে চীন অস্বাভাবিকভাবে ব্যাপক পরিমাণে পানি ছেড়ে দিলে বন্যা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি চীনা ডাইভারশনের ক্ষেত্রে এক বছর পর্যন্ত পানির ঘাটতি পূরণেও এই প্রকল্প সহায়তা করবে বলে আশা করছে ভারত।
ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার প্রায় ৫০ শতাংশ চীনা ভূখণ্ডে থাকায় উত্তর পূর্ব ভারতে বিশেষ করে চীনের সঙ্গে লাগোয়া অরুণাচল প্রদেশে হাইড্রো ইলেকট্রিক প্রকল্পগুলোকে ভারতের জন্য কৌশলগত পদক্ষেপ হিসাবে দেখা হয়। কারণ এসব প্রকল্পের মাধ্যমে চীনা বাঁধসহ চীনের নির্মাণাধীন নানা প্রকল্পের সম্ভাব্য প্রভাব মোকাবিলা করতে চায় ভারত।
তার ভাষায়, ‘ভারতেরও একটি দূরদর্শী কাউন্টার-কন্টিনজেন্সি পরিকল্পনা দরকার। আর এই কারণেই অরুণাচল প্রদেশের প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের কাজ ত্বরান্বিত করা হচ্ছে।’
টাইমস অব ইন্ডিয়া বলছে, এই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পটি অরুণাচল প্রদেশ এবং আসামের পানির যে কোনও ঘাটতি এবং সেইসাথে বন্যার ঝুঁকি প্রশমিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সূত্র বলছে, অরুণাচল প্রদেশে ১১ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ প্রকল্প চীনা বাঁধের বিরূপ প্রভাব কমিয়ে দেবে। জীবিকা ও কর্মসংস্থানের সুযোগের ক্ষেত্রেও প্রকল্পটিকে অরুণাচল প্রদেশের জনগণের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ হিসাবে দেখা হচ্ছে। এছাড়া বাঁধটি নির্মিত হলে ভারতের পানি সংরক্ষণের ক্ষমতা বাড়বে।