শনিবার, ২৪ মে ২০২৫

পরীক্ষামূলক সংস্করণ

স্বাস্থ্য

সুস্থতার জন্যে যা যা করণীয়

জীবনধারায় পরিবর্তন ও খারাপ অভ্যাস ত্যাগ করতে নতুন বছরের শুরুটা হতে পারে দারুণ সময়। যদিও খুব অল্প সংখ্যক মানুষ তাদের সংকল্পে অটল থাকতে পারেন, তবুও নতুন বছরে স্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্য নেওয়া যেতে পারে বেশ কিছু সংকল্প। ওজন কমান উচ্চতা অনুযায়ী আপনার ওজন যদি বেশি হয়ে থাকে, তাহলে সুস্বাস্থ্যের জন্য ওজন কমানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওজন […]

নিউজ ডেস্ক

২২ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২৬

জীবনধারায় পরিবর্তন ও খারাপ অভ্যাস ত্যাগ করতে নতুন বছরের শুরুটা হতে পারে দারুণ সময়। যদিও খুব অল্প সংখ্যক মানুষ তাদের সংকল্পে অটল থাকতে পারেন, তবুও নতুন বছরে স্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্য নেওয়া যেতে পারে বেশ কিছু সংকল্প।
ওজন কমান

উচ্চতা অনুযায়ী আপনার ওজন যদি বেশি হয়ে থাকে, তাহলে সুস্বাস্থ্যের জন্য ওজন কমানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওজন কমার সঙ্গে সঙ্গে হৃদরোগ, টাইপ-২ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপের মতো রোগের ঝুঁকি কমতে শুরু করে। ওজন কমাতে চাইলে স্বাস্থ্যকর খাবার খান ও নিয়মিত ব্যায়াম করুন
স্বাস্থ্যকর খাবার

স্বাস্থ্যকর খাবারের সঙ্গে ২টি বিষয় জড়িত। প্রথমত, কী খাচ্ছেন এবং দ্বিতীয়ত, কীভাবে খাচ্ছেন। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ফল ও শাক-সবজি থাকা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ফল ও শাক-সবজিতে ক্যালোরি ও চর্বি কম থাকে, ফাইবার বেশি থাকে এবং এগুলো ভিটামিন ও খনিজের ভালো উত্স। ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার ওজন কমাতে সাহায্য করে।

খুব দ্রুত খাওয়া ওজন বেড়ে যাওয়ার কারণ হতে পারে। তাই ধীরে ধীরে এবং ভালোভাবে চিবিয়ে খাওয়া উচিত। খাওয়ার সময় টেলিভিশন ও মোবাইল ফোন থেকে দূরে থেকে খাবারটিই উপভোগ করতে হবে। খাওয়ার সময় আপনার পেট ভরে গেলে মস্তিষ্কে সেই বার্তা যেতে ২০ মিনিট পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তাই পেট ভরে গেছে, এমন অনুভব হওয়ার আগেই খাওয়া বন্ধ করা উচিত।

অলস শুয়ে-বসে থাকা কমান

নিয়মিত ব্যায়াম করার পাশাপাশি শরীরকে সার্বক্ষণিক সক্রিয় রাখার জন্য অলসভাবে শুয়ে-বসে সময় কাটানো এড়িয়ে চলা উচিত। দৈনন্দিন কাজে ছোট ছোট কিছু পরিবর্তন আনার মাধ্যমেই যা সম্ভব। যেমন: দোকানের দরজার একদম কাছে গাড়ি পার্ক না করে একটু দূরে পার্ক করা এবং হেঁটে দোকানে যাওয়া, লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ি ব্যবহার করা, টেলিভিশন দেখার সময় সহজ কিছু ব্যায়াম করা।

শারীরিকভাবে যত বেশি সক্রিয় থাকতে পারবেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ততটাই ভালো বোধ করবেন।

 

নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা

প্রতি বছর নিয়মিত চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করা, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা সুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। এতে করে ছোটখাট স্বাস্থ্য সমস্যা বড় আকার ধারণের আগেই শনাক্ত ও প্রতিরোধ করা সম্ভব। শারীরিকভাবে সুস্থ বোধ করলেও প্রতি বছর নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে ভুলবেন না।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা

প্রতি বছর নিয়মিত চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করা, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা সুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। এতে করে ছোটখাট স্বাস্থ্য সমস্যা বড় আকার ধারণের আগেই শনাক্ত ও প্রতিরোধ করা সম্ভব। শারীরিকভাবে সুস্থ বোধ করলেও প্রতি বছর নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে ভুলবেন না।

 

মানসিক চাপ কমান

মানসিক চাপ কমানোর উপায় জানা মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ থাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অতিরিক্ত চাপ অনুভব করলে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম, হাঁটা বা গান শোনার মতো সাধারণ কাজগুলো সহায়ক হতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ স্বাস্থ্য ও সুস্থতার ওপর প্রভাব ফেলে। তাই এর থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় বের করার কোনো বিকল্প নেই।

 

পর্যাপ্ত ও ভালো ঘুম জরুরি

ভালো ঘুম রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ও মানসিক সুস্থতা বাড়ায়। আরামদায়ক ঘুমের জন্য রুটিন তৈরি, ঘুমানোর আগে মোবাইল বা টেলিভিশন দেখার সময় কমানো এবং ভালো ঘুমের পরিবেশ তৈরি প্রয়োজনীয় বিষয়। যদি অনিদ্রার সমস্যা থাকে, তাহলে মানসিক চাপ কমানোর উদ্যোগ নেওয়া উচিত।

 

ধূমপান বন্ধ করুন

ধূমপান শরীরের প্রায় প্রতিটি অঙ্গের ক্ষতি করে। এ ছাড়া, জর্দাসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়ার খাওয়া তামাক মুখের ক্যানসার সৃষ্টি করে এবং নিকোটিন-আসক্তির কারণ হতে পারে। কাজেই সুস্থ থাকতে যেকোনো প্রক্রিয়াতেই তামাক সেবন বন্ধ করার পরিকল্পনা করুন।
সংকল্প বাস্তবায়ন

সুস্থ থাকার জন্য যেসব সংকল্প গ্রহণ করবেন, বছরজুড়ে তার বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে যায়। কাজেই জীবনযাত্রার সঙ্গে মানানসই সংকল্প নির্ধারণ করে তা নিয়মিত মেনে চলা উচিত। এতে সফল হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। স্বাস্থ্যকর নতুন অভ্যাস তৈরি করতে সময় ও ধৈর্য শক্তি প্রয়োজন।

 

সংকল্পের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য রাখতে হবে। যেমন: ওজন কমাতে চাওয়ার বদলে ঠিক কতটা ওজন কমানো প্রয়োজন বা কতটা ওজন কমাতে চান, তা নির্ধারণ করুন। ব্যায়াম করতে চাওয়ার বদলে সপ্তাহে প্রতিদিন ৩০ মিনিট ব্যায়াম করার লক্ষ্য নির্ধারণ করুন।

 

লক্ষ্য নির্ধারণে বাস্তববাদী হওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হঠাৎ করে অনেক বেশি পরিমাণ শারীরিক কসরত শরীরের জন্য ভালো নাও হতে পারে। ধীরে ধীরে ব্যায়ামের পরিমাণ বাড়াতে হবে। একইভাবে নতুন কোনো অভ্যাস শুরু করতে চাইলে হঠাৎ অনেক বেশি চাপ নেওয়া ঠিক হবে না।

 

নতুন অভ্যাস তৈরির ক্ষেত্রে শুরু থেকেই একেবারে নিখুঁত হওয়ার চেষ্টা সফলতার অন্তরায় হতে পারে। যদি স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া আপনার লক্ষ্য হয়, তাহলে হঠাৎ করেই পছন্দের সব খাবার খাওয়া ছেড়ে দেবেন না। ধীরে ধীরে খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন আনুন।

 

স্বাস্থ্য

ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা হাসপাতালে চিকিৎসকদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না

স্বাস্থ্য খাতে শৃঙ্খলা, জবাবদিহিতা এবং নাগরিকদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ব্যাপক সংস্কারের সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন। সোমবার (৫ মে) বেলা ১১টার দিকে প্রধান উপদেষ্টার কাছে পেশ করা প্রতিবেদনে কমিশন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব তুলে ধরেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখন থেকে হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা সরাসরি সাক্ষাৎ করতে পারবেন না। চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ […]

নিউজ ডেস্ক

০৫ মে ২০২৫, ১৮:২৩

স্বাস্থ্য খাতে শৃঙ্খলা, জবাবদিহিতা এবং নাগরিকদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ব্যাপক সংস্কারের সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন। সোমবার (৫ মে) বেলা ১১টার দিকে প্রধান উপদেষ্টার কাছে পেশ করা প্রতিবেদনে কমিশন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব তুলে ধরেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখন থেকে হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা সরাসরি সাক্ষাৎ করতে পারবেন না। চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে ই-মেইলের মাধ্যমে।

এ পদক্ষেপের লক্ষ্য হলো ওষুধ কোম্পানিগুলোর প্রভাবমুক্ত ও স্বচ্ছ চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তোলা। সেই সঙ্গে চিকিৎসকদের উপহার ও বিনামূল্যে ওষুধের নমুনা দেওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে সংবিধান সংশোধন করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে একটি মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার জোর সুপারিশ রয়েছে। কমিশনের মতে, এ অধিকার বাস্তবায়নে একটি পৃথক ‘প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা আইন’ প্রণয়ন জরুরি, যা নাগরিকদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব নির্ধারণ করবে।

কমিশন আরও সুপারিশ করেছে, এমবিবিএস ডাক্তার ব্যতীত অন্য কেউ যেন অ্যান্টিবায়োটিক দিতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া ওষুধের দাম, রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষার খরচ এবং চিকিৎসকের পরামর্শ ফি নির্ধারিত করার কথাও বলা হয়েছে, যাতে স্বাস্থ্যসেবা হয় নাগরিকবান্ধব ও গ্রহণযোগ্য।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে ৭টি নতুন আইন প্রণয়নের প্রস্তাব। এগুলো হলো—বাংলাদেশ স্বাস্থ্য কমিশন আইন, বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিস আইন, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা আইন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন, ওষুধের মূল্য নির্ধারণ এবং প্রবেশাধিকার আইন, অ্যালায়েড হেলথ প্রফেশনাল কমিশনার আইন এবং বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কমিশনার আইন।

এছাড়া, স্বাস্থ্য খাতে নিয়োগ ও পদোন্নতি প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে একটি স্বতন্ত্র পাবলিক সার্ভিস কমিশন (স্বাস্থ্য) গঠনের সুপারিশও করা হয়েছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা যেন দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য বিনামূল্যে বা ভর্তুকি মূল্যে সহজলভ্য হয়, সেই লক্ষ্যে কাজ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে কমিশন।

এই সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন হলে দেশের স্বাস্থ্যখাতে এক নতুন যুগের সূচনা হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

স্বাস্থ্য

বাংলাদেশি রোগীদের টানতে নতুন প্রতিযোগিতায় থাইল্যান্ড, ইরান ও মালয়েশিয়া

বাংলাদেশি রোগী ধরতে বিশেষ চিকিৎসা ছাড় দিচ্ছে এশিয়ার অন্যতম বড় দেশ চীন। দেশটির ইউনান প্রদেশের চারটি শীর্ষ পর্যায়ের হাসপাতালকে বিশেষভাবে বাংলাদেশি রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য মনোনীত করা হয়েছে। তবে শুধু চীনই নয়, বাংলাদেশি রোগীদের স্বাস্থ্য সেবা দিতে আগ্রহী থাইল্যান্ড, ইরান ও মালয়েশিয়াও। চীনের সুবিধা নিতে খোদ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ নিয়েছে। তবে চিকিৎসক সমাজ বলছেন, […]

নিউজ ডেস্ক

০৪ এপ্রিল ২০২৫, ১৫:৪৯

বাংলাদেশি রোগী ধরতে বিশেষ চিকিৎসা ছাড় দিচ্ছে এশিয়ার অন্যতম বড় দেশ চীন। দেশটির ইউনান প্রদেশের চারটি শীর্ষ পর্যায়ের হাসপাতালকে বিশেষভাবে বাংলাদেশি রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য মনোনীত করা হয়েছে। তবে শুধু চীনই নয়, বাংলাদেশি রোগীদের স্বাস্থ্য সেবা দিতে আগ্রহী থাইল্যান্ড, ইরান ও মালয়েশিয়াও।

চীনের সুবিধা নিতে খোদ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ নিয়েছে। তবে চিকিৎসক সমাজ বলছেন, উন্নত ও বিশেষায়িত রোগের চিকিৎসায় দেশে পাঁচটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, একটি সুপার স্পেশালাইজড ও ২০টির মতো বিশেষায়িত হাসপাতাল রয়েছে। এরপরও বছরে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ চিকিৎসার জন্য ভারতসহ বিভিন্ন দেশে যাচ্ছেন।

প্রতিবছর তিন থেকে চার বিলিয়ন ডলার চিকিৎসার জন্য চলে যাচ্ছে বিদেশে। এমন প্রেক্ষাপটে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বাইরের দেশকে মেডিকেল সুবিধা না দিয়ে নিজেদের চিকিৎসা খাতের উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি হয়ে পড়ছে। রোগীদের আস্থা ফেরাতে হাসপাতালগুলোতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগ, অবকাঠামো নির্মাণ, নির্ভুল রোগ নির্ণয়ে অত্যাধুনিক পরীক্ষা সরঞ্জাম স্থাপন করে কমমূল্যে সেবা দিতে হবে। স্বাস্থ্য খাতে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজে লাগাতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা যুগান্তরকে বলছেন, বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের উষ্ণ সম্পর্কের জেরে দেশটি মেডিকেল ট্যুরিজমের টার্গেট পূরণ করত বাংলাদেশি রোগীদের মাধ্যমে। বিত্তশালী রোগীদের বড় একটি অংশ ভারতের পাশাপাশি থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্যসহ কিছু দেশে যাচ্ছেন। ৫ আগস্টের পর ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের টানাপোড়েনের কারণে দেশটির ভিসার সুযোগ ব্যাপকভাবে সীমিত হয়ে গেছে। বাংলাদেশিদের জন্য পর্যটক ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে। মেডিকেল ভিসা সীমিতভাবে দেওয়া হচ্ছে। ভারতের ভিসা জটিলতায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতদের যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, ফ্রান্স, চীন ও ভুটান থেকে চিকিৎসক এনে সেবা দিয়েছে। ৩৮ জনকে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, রাশিয়াসহ কয়েকটি দেশে পাঠিয়েছে।

এদিকে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরের মতো দেশে চিকিৎসা খরচ ভারতের তুলনায় বেশি হওয়ায় সাধারণ রোগীদের জন্য আর্থিক চাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে বিকল্প হিসাবে চীনকে বেছে নিচ্ছেন। চীন অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বাজার ধরতে মরিয়া হয়ে কাজ করছে। ভারতে বাংলাদেশিদের চিকিৎসার দরজা সীমিত হওয়ায় চায়না মেডিকেল ট্যুরিজম সুযোগ নিচ্ছে। ইতোমধ্যে চীন সরকার দেশটির কুনমিং মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ফার্স্ট অ্যাফিলিয়েটেড হাসপাতাল এবং ইউনান ফার্স্ট পিপলস হাসপাতাল বাংলাদেশিদের সব ধরনের চিকিৎসা দেবে বলে জানিয়েছে। বিশেষায়িত হাসপাতাল হিসাবে ফু-ওয়াই কার্ডিওভাসকুলার হাসপাতাল এবং ইউনান ক্যানসার হাসপাতাল ডেডিকেটেড ঘোষণা করেছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা যুগান্তরকে জানিয়েছেন, চীনের ওই চার হাসপাতালে স্থানীয় লোকজন যে ফি পরিশোধ করেন বাংলাদেশি রোগীরা একই ফি পরিশোধ করবেন। গত মাসে কয়েক ডজন বাংলাদেশি চিকিৎসার জন্য কুনমিং ভ্রমণ করেছেন। যাত্রীদের বিমান টিকিটের উচ্চমূল্যের সমস্যা সমাধানে চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্স চট্টগ্রাম থেকে কুনমিং রুটে ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা করছে। ঢাকার সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষও ঢাকা-কুনমিং রুটে ফ্লাইটের টিকিটের ভাড়া কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এপ্রিলে বাংলাদেশ থেকে সাংবাদিকদের বড় একটি দলকে কুনমিংয়ে চিকিৎসা ব্যবস্থা দেখতে পাঠানো হবে।

সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস চীন সফরে যান। সফর শেষে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেনটেটিভ ড. খলিলুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে একটি আন্তর্জাতিকমানের বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণের ব্যাপারে চীন সরকারকে অনুরোধ করা হয়েছে। চীন রাজি হয়েছে। খুব শিগগির এ হাসপাতাল নির্মাণ কার্যক্রম শুরু হবে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের সেবা দিতে বাংলাদেশে চিকিৎসক টিম পাঠিয়েছিল চীন। এবার আহতদের উন্নত চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের লক্ষ্যে রিহ্যাবিলিটেশন ও রোবটিক ফিজিওথেরাপি সেন্টার স্থাপন করতে সহায়তা করবে দেশটি। রাজধানীর শাহবাগে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সেন্টার স্থাপন করা হবে। এরই মধ্যে চীনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল এ বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করে গেছে। দগ্ধ মুমূর্ষু রোগীদের চিকিৎসায়ও চীনের অনুদানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট স্থাপন করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বার্ন ইউনিট নির্মাণে ব্যয় হবে ২৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে চীন সরকার অনুদান হিসাবে দেবে ১৮০ কোটি টাকা। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা রয়েছে।

ভারতের পর বাংলাদেশ থেকে বেশি রোগী যায় থাইল্যান্ডে। ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সপ্তাহে ১৪টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে থাই এয়ারওয়েজ। যাত্রীদের চাপ এড়াতে থাইল্যান্ড ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশিদের ই-ভিসা দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ইরান, মালয়েশিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের রোগীদের নিয়ে মেডিকেল ট্যুরিজম শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে।

স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদরা যুগান্তরকে বলছেন, এই মুহূর্তে বিশ্বে মেডিকেল ট্যুরিজমের পরিমাণ ২০ থেকে ৩০ বিলিয়ন ডলারের। মেডিকেল ট্যুরিজমের ৪০ শতাংশ হয় এশিয়ার দেশগুলোতে। যার এক-তৃতীয়াংশ নিয়ন্ত্রণ করে ভারত। দেশটির ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বাজার বাংলাদেশের রোগী নিয়ে। ভারতের দুয়ার বন্ধ হওয়ায় চীন সুযোগ নিচ্ছে। সরকারও তা দিচ্ছে। দিনশেষে এটি দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি রোগীদের অনাস্থা আরও বাড়তে পারে। রোগীদের বিদেশমুখিতা ঠেকাতে পরিকল্পনা করে এগোতে হবে।

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (সাবেক বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য ও চিকিৎসা অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. রশীদ-ই মাহবুব যুগান্তরকে বলেন, দেশে সাধারণ রোগের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু বড় অসংক্রামক রোগ যেমন ক্যানসার, নিউরোলজি ও ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন কঠিন হচ্ছে। আধুনিক ডায়াগনোসিস কঠিন হচ্ছে। সরকার এটিতে গুরুত্ব না দিয়ে বাইরের দেশে সুযোগ সৃষ্টি করলে সাধারণ মানুষের লাভ হবে না। বাইরে চিকিৎসা করাতে গেলে ৩০ শতাংশ শুল্ক গুনতে হয়। তিনি আরও বলেন, দেশে প্রায় ১৮ কোটি মানুষ রয়েছে। যাদের চিকিৎসায় স্বাস্থ্য খাতকে আধুনিকায়ন করার সুযোগ রয়েছে। এজন্য স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ ও মানবসম্পদ জরুরি। সরকারের উচিত আজই কাজ শুরু করা। কোনো দেশ যদি জনহিতকর উদ্দেশ্যে এগিয়ে আসে সেটা নেওয়া যেতে পারে। তবে নিজেকে কিভাবে প্রস্তুত করা যায় সেদিকে নজর দিতে হবে।