চীন বাংলাদেশ থেকে ইলিশ আমদানির আগ্রহ প্রকাশ করেছে, যা দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ সচিবালয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠককালে এই আগ্রহের কথা জানান। বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করা, বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও বিস্তৃত করার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন বলেন, ‘চীন বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান উন্নয়ন অংশীদার এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধুপ্রতীম দেশ। দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করতে চীনা বিনিয়োগ বাড়ানোর বিশাল সুযোগ রয়েছে।’ তিনি চীনের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে কৃষি, পরিবহন, কৃষি-যন্ত্রপাতি ও স্বাস্থ্যসেবা খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান এবং বলেন, ‘বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যিক ভারসাম্য আনতে বাংলাদেশি পণ্য আমদানির পরিমাণ বাড়াতে হবে। একইসঙ্গে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর বিদ্যমান শুল্ক হ্রাস করা প্রয়োজন।’
শেখ বশির উদ্দিন আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে ট্রাক উৎপাদন কারখানা স্থাপন এবং কৃষির আধুনিকীকরণের জন্য বিনিয়োগ উভয় দেশের জন্যই লাভজনক হতে পারে।’ তিনি আশা প্রকাশ করেন, চীনা বিনিয়োগ বাংলাদেশকে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করবে।
চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন জানান, চীনের ৩০টি কোম্পানি ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তিনি বলেন, ‘চীনে বাংলাদেশি ইলিশের চাহিদা ব্যাপক, যা বাংলাদেশ থেকে ইলিশ রপ্তানির মাধ্যমে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর একটি সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।’ এ সময় তিনি প্রাথমিকভাবে এক হাজার টন ইলিশ আমদানির আগ্রহ প্রকাশ করেন।
এছাড়া, চীন বাংলাদেশ থেকে শুধু ইলিশ নয়, আম, কাঁঠাল ও পেয়ারা আমদানির পরিকল্পনাও করছে। চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বাংলাদেশি ফলমূলের গুণগত মান চীনের বাজারে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হতে পারে, তাই এই খাতেও বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহী আমরা।’
বাংলাদেশি কৃষিপণ্য রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে দুই দেশের মধ্যে শুল্ক বাধা দূর করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার চীনের এ আগ্রহকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষরের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানা গেছে। বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) মো. আব্দুর রহিম খানও উপস্থিত ছিলেন।
এই নতুন উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে চীনের বিশাল বাজারে বাংলাদেশি ইলিশসহ অন্যান্য কৃষিপণ্যের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত হবে, যা দেশের রপ্তানি খাতের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে উঠতে পারে।