বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫

পরীক্ষামূলক সংস্করণ

ফিচার

তারেক রহমানের মামলা নিষ্পত্তিতে ‘কচ্ছপ গতি’ ক্ষোভ বিএনপিতে

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট শপথ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। আগামী ৭ নভেম্বর হচ্ছে এই সরকারের তিন মাস। কিন্তু এখনো ‘কচ্ছপ গতিতে’ চলছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার অথবা নিষ্পত্তির কার্যক্রম। এতে তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্র পর্যন্ত নেতাকর্মীদের মধ্যে […]

নিউজ ডেস্ক

০৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৮:১৮

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট শপথ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। আগামী ৭ নভেম্বর হচ্ছে এই সরকারের তিন মাস। কিন্তু এখনো ‘কচ্ছপ গতিতে’ চলছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার অথবা নিষ্পত্তির কার্যক্রম। এতে তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্র পর্যন্ত নেতাকর্মীদের মধ্যে বাড়ছে ক্ষোভ।

আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বেশ কয়েকটি মামলার নিষ্পতি হলেও এখনো প্রায় দেড় লাখ মামলা রয়েছে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দায়ের করা এসব মামলাকে মিথ্যা ও গায়েবি বলে দাবি করে আসছে বিএনপি। পটপরিবর্তন হলেও এখনো এসব রাজনৈতিক মামলায় নিয়মিত আদালতের এক বারান্দা থেকে আরেক বারান্দায় ছুটতে হচ্ছে তাদের। আগের মতো গ্রেফতার আতঙ্ক না থাকলেও মামলার ভাগ্য নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তারা। বিশেষ করে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সব মামলা দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রত্যাহার অথবা নিষ্পত্তি চান নেতাকর্মীরা। অন্যথায় তারা এ নিয়ে মাঠে নামতে বাধ্য হবেন। বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।

এদিকে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক কারণে দায়ের করা হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে গত ২২ সেপ্টেম্বর দুই স্তরের কমিটি গঠন করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এতে বলা হয় রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও বিভিন্ন কারণে রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও নিরপরাধ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারে জেলা ও মন্ত্রণালয় পর্যায়ে এ দুই কমিটি কাজ করবে। রাজনৈতিক হয়রানি মামলা প্রত্যাহারের জন্য আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করতে হবে। তবে বিএনপিপন্থি আইনজীবী ও নেতারা বলছে, মামলা প্রত্যাহারের কার্যকরী তেমন কোনো উদ্যোগ দেখছেন না তারা।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা দেখছি কী হয়। তারপর আমরা আমাদের ব্যবস্থা নেব। বাংলাদেশের মানুষ এত নির্যাতনের পরেও যাদের (বিএনপি নেতাকর্মী) সবচেয়ে বেশি অবদান তাদের বিরুদ্ধে মামলার বিষয় নিয়ে আলোচনার বিষয় হতে পারে, এটা তো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। যারা শেখ হাসিনার পতনের জন্য ১৫ বছর লড়ে সবকিছু ত্যাগ করে আজকের এই জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে, তাদের মামলা এখনো যায়নি (নিষ্পতি) কেন? এটা স্বাভাবিকভাবে সবারই প্রশ্ন। সুতরাং এ বিষয়ে ব্যবস্থা যদি শিগগিরই করা না হয়, তাহলে যারা শেখ হাসিনার পতন ঘটিয়েছে তারা তো আর বসে থাকবে না।’

বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ফ্যাসিস্ট সরকার তার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে অসংখ্য মামলা দায়ের করেছিল। প্রত্যেকটা মামলাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। আমরা পত্রিকায় দেখেছি সরকার বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলাগুলো প্রত্যাহারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো উদ্যোগ আমরা দেখছি না। আমরা আইনগতভাবে প্রত্যেকটা পদক্ষেপই নিচ্ছি। তারেক রহমানের নির্দেশনা হচ্ছে তিনি দেশের প্রচলিত আইন, সংবিধান, সিআরপিসির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আইনিভাবেই তিনি তার মামলাগুলো মোকাবিলা করবেন এবং আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তিনি তার মামলার ফয়সালা চান। তবে যদি রাষ্ট্র কখনো মনে করেন যে, তারেক রহমানের মামলাগুলো উঠানো উচিত, সে ক্ষেত্রে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান চান তার রাজনৈতিক কর্মীদের সর্বশেষ মামলাটাও যেন তার আগে প্রত্যাহার হয়। একজন রাজনীতিবিদ হিসাবে ওনার বক্তব্য-কোনোক্রমেই ওনার মামলা নিয়ে এই অবস্থায় কোনো ধরনের প্রত্যাহারের আলোচনা হোক-সেটি তিনি চান না।

তারেক রহমান কবে নাগাদ দেশে আসতে পারেন- এমন প্রশ্নের জবাবে কায়সার কামাল বলেন, ‘উনি (তারেক রহমান) বাংলাদেশের নাগরিক। এক-এগারোর সময় তৎকালীন সরকার, আর্মি কেয়ারটেকার সরকার ওনাকে কাস্টোডিয়াল টর্চার করেন। যে টর্চারের কারণে তিনি বিদেশে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ওনার দেশে আসাটা একান্তই ওনার পারিপার্শ্বিক সবকিছু বিবেচনা করে, চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। আমি মনে করি মামলার বিষয়গুলো ওনার আসা না আসার সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ত নেই। তবে যেহেতু উনি আসবেন, দেশের মানুষ প্রত্যাশা করছে যে, উনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেশে আসুক। কারণ বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট যদি চিন্তা করেন তাহলে তারেক রহমানের মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বাংলাদেশের মাঠে দরকার। দেশে আসার ব্যাপারে তিনি যথাসময়ে চিন্তাভাবনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।

বিএনপি নেতারা জানান, বিএনপিসহ ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অন্যান্য অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সবার বিরুদ্ধে সব মামলা প্রত্যাহার না হলে কখনোই একটা নিরপেক্ষ অবস্থা তৈরি হবে না। অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে এসব রাজনৈতিক মামলা। স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রামে যারা নিহত ও আহত হয়েছেন, তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।

নেতারা আরও জানান, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্র্বর্তী সরকারের কার্যক্রম অনেকটা ধীরগতির। এতে নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাদের। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, বিগত ১৭ বছরে বিএনপিসহ বিভিন্ন বিরোধী দল ও মতের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও হয়রানিমূলক মামলার বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত নিতেই অনেক সময়ক্ষেপণ হয়েছে। গণ-অভ্যুত্থানের দেড় মাস পর বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারে জেলা ও মন্ত্রণালয় পর্যায়ে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এসব কমিটি জেলা ও মহানগর পর্যায়ে মামলার তথ্য সংগ্রহ করবে। এর পর আইন মন্ত্রণালয় সেসব মামলা পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। আন্দোলনের ফসল হিসাবে সবাই স্বাধীনতা পেলেও বিএনপি নেতাকর্মীরা এর ব্যতিক্রম। মামলার ফাঁদে আটকে পড়ে আছেন তারা। বিএনপির কেন্দ্রীয় সহস্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল বলেন, তার বিরুদ্ধে এখনো ১৬০টি মামলা রয়েছে, এর মধ্যে ৫টি মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। সবগুলো মিথ্যা ও গায়েবি মামলা, যার কোনো ভিত্তি নেই। এখনো আদালতের বারান্দায় প্রায় প্রতিদিনই ঘুরতে হচ্ছে, যা দুঃখজনক। আইনজীবী ও বিএনপির দপ্তর সূত্র জানায়, ২০০৯ সালের পর গত ৫ জুলাই পর্যন্ত সারা দেশে নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ১ লাখ ৪২ হাজার ৯৮৩ মামলায় ৫৯ লাখ ২৯ হাজার ৪৯২ জনকে আসামি করা হয়েছে। শুধু গত বছরের ২৮ অক্টোবর থেকে তিন মাসের মধ্যে সারা দেশে ১ হাজার ৬৪৫ মামলায় প্রায় ৭০ হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছিল। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীকে পাইকারি গ্রেফতারের পাশাপাশি গণহারে মামলার সাজা দেওয়া শুরু হয়। ওই সময় প্রায় দুই হাজার নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন ঢাকার বিভিন্ন আদালত। বিএনপি ও আইনজীবীদের দেওয়া তথ্যমতে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে এখনো অন্তত ৯০টি মামলা চলমান রয়েছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের নামে প্রায় ৫০টি, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে প্রায় ৪০টি, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ৫০টি মামলা রয়েছে। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের বিরুদ্ধে ৩৫৭টি, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর বিরুদ্ধে ১৮০টির বেশি, যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন নবী খান সোহেলের বিরুদ্ধে ৪ শতাধিক, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির ৬০টি মামলা রয়েছে। প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুর ৩১৫টি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনুর ২২৬টি, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসানের বিরুদ্ধে রয়েছে ২১২টি মামলা। একইচিত্র বিএনপির কেন্দ্রীয় ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন ও জেলাসহ তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদেরও।

খালেদা জিয়ার মামলা : খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৭টি মামলা হয়েছে। এসব মামলা তৎকালীন সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক ও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। ২০০৭-২০০৮ সালের জরুরি অবস্থায় ৪টি মামলা হলেও বাকিগুলো পরবর্তী সরকারের আমলে। সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে ২০১৫ সালে। এর মধ্যে জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার রায়ে সাজা হয়েছিল খালেদা জিয়ার, যা ৬ আগস্ট দণ্ড মওকুফ করা হয়েছে। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর এখন পর্যন্ত ২১টি মামলা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খালাস পান। এখনো ১৬ মামলা রয়েছে। এর মধ্যে নাইকো দুর্নীতি মামলা চলমান, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি মামলার আদেশের জন্য দিন ধার্য রয়েছে। আরও রয়েছে-ঋণখেলাপির একটি মামলা, গুলশানে বোমা হামলার অভিযোগে মামলা, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও জাতিগত বিভেদ সৃষ্টির অভিযোগে ২ মামলা, ‘মিথ্যা’ জন্মদিন পালনের মামলা বর্তমানে পেন্ডিং রয়েছে। এছাড়া ঢাকাসহ খুলনা, পঞ্চগড় ও কুমিল্লায় এখনো ৭টি মামলা।

তারেক রহমানের মামলা : বিএনপি ও আইনজীবীদের দেওয়া তথ্যমতে, দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গত ১৭ বছরে ঢাকাসহ সারা দেশে ৮২টির বেশি মামলা হয়েছে। তবে মামলার পরিসংখ্যান যাচাই করা সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে এক-এগারো সরকারের সময়ে ১৭টি। যার অধিকাংশ মামলা উচ্চ আদালত কর্তৃক স্থগিত আছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় যাওয়ার পর তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং, রাষ্ট্রদ্রোহ ও মানহানির অভিযোগে ৬৫টির বেশি মামলা হয়। ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর এ পর্যন্ত আইনি প্রক্রিয়ায় ১২টি মামলা খালাস ও প্রত্যাহারের তথ্য পেয়েছে । এছাড়া একটি মামলা বাদী তুলে নিয়েছেন। এর মধ্যে চারটি মামলায় সাজা দেওয়া হয়। যার মধ্যে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার অভিযোগে মামলাটি আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলা পেন্ডিং অবস্থায় রয়েছে। বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের অভিযোগ, এসব মামলা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তারেক রহমানের নাম ছিল না, আওয়ামী লীগ সরকার ষড়যন্ত্র করে তার নাম দিয়েছে।

রাজনীতি

ঢাকা বিমানবন্দর থেকে আন্দালিব রহমান পার্থর স্ত্রী এবং মেয়ে আটক

এটি কি নিয়মতান্ত্রিক কোনো প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত, নাকি এর পেছনে অন্য কোনো নির্দেশনা বা রাজনৈতিক বিবেচনা কাজ করেছে?

নিউজ ডেস্ক

১৩ মে ২০২৫, ১৩:৫৮

বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থর স্ত্রী শেখ শাইরা শারমিনের বিদেশযাত্রায় বাধা দেওয়ার ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তিনি থাইল্যান্ডগামী থাই এয়ারওয়েজের টিজি৩২২ ফ্লাইটে ওঠার প্রস্তুতি নিলেও ইমিগ্রেশন কাউন্টার থেকে তাকে থামিয়ে দেওয়া হয়। তিনি ফ্লাইটে উঠতে পারেননি।

বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটে তিনি ফ্লাইটের জন্য চেক-ইন সম্পন্ন করলেও ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ কোনো নির্দিষ্ট কারণ না জানিয়ে তাকে ফ্লাইটে ওঠার অনুমতি দেয়নি। তবে ইমিগ্রেশন বা কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।

শেখ শাইরা শারমিনের পারিবারিক পরিচিতি ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক বলয়ের সঙ্গে যুক্ত। তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের ভাই শেখ আবু নাসেরের ছেলে শেখ হেলাল উদ্দীনের কন্যা এবং বাগেরহাট-২ আসনের আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়ের বড় বোন। অন্যদিকে, তার স্বামী আন্দালিব রহমান পার্থ একজন বিরোধী রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা এবং বিভিন্ন সময়ে সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের সমালোচনায় সক্রিয় থেকেছেন।

এই প্রেক্ষাপটে একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য হয়েও বিদেশযাত্রায় বাধার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠছে—এটি কি নিয়মতান্ত্রিক কোনো প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত, নাকি এর পেছনে অন্য কোনো নির্দেশনা বা রাজনৈতিক বিবেচনা কাজ করেছে?

আইন ও প্রশাসনের নিরপেক্ষতা এবং ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের স্বচ্ছতা নিয়ে এ ধরনের ঘটনার পর নানা ধরনের আলোচনা এবং ব্যাখ্যার সুযোগ তৈরি হয়। বিশেষ করে যখন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সরাসরি কোনো মামলার আসামি নন কিংবা তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্য কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই, তখন এমন ঘটনায় জনমনে প্রশ্ন তৈরি হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়।

বর্তমানে এই বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত হোক বা রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ডপ্রসূত কারণ—ঘটনাটির স্বচ্ছ ব্যাখ্যা প্রয়োজন, যাতে বিভ্রান্তি না ছড়ায় এবং নাগরিকদের অধিকার বিষয়ে আস্থার পরিবেশ অটুট থাকে।

রাজনীতি

ভারতে আশ্রয় নেওয়া সব আ:লীগ নেতাদের দেশে ফিরতে নির্দেশ দিলেন শেখ হাসিনা

দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে থাকা নেতাদের স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে সবাইকে দেশে ফিরতে হবে। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যারা ফিরবেন না, তাদেরকে আটক করে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে এবং আইনের আওতায় আনা হবে।

নিউজ ডেস্ক

১৭ মে ২০২৫, ১৭:০৩

গণহত্যা, দমন-পীড়ন ও অন্যান্য গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া আওয়ামী লীগপন্থী বহু নেতা এখন চরম অনিশ্চয়তার মুখে। ভারতের অভ্যন্তরে থাকা অবৈধ বিদেশিদের দ্রুত দেশত্যাগের নির্দেশ জারির পর দেশটিতে পালিয়ে থাকা এসব নেতাদের মধ্যে শুরু হয়েছে দেশ ছাড়ার হিড়িক।

আগস্ট মাস থেকে এ নির্দেশনা আরও কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করার কথা থাকায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে।

পুশব্যাক ও গ্রেফতারের আশঙ্কায় অনেক নেতা ভারতে অবস্থান ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন। ইতিমধ্যে ৫০ জনেরও বেশি নেতা ইউরোপ ও আমেরিকায় পালিয়ে গেছেন এবং অনেকে নতুন করে এসব দেশে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টায় রয়েছেন। তবে পালিয়ে বাঁচা যেন খুব সহজ হবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে থাকা নেতাদের স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে সবাইকে দেশে ফিরতে হবে। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যারা ফিরবেন না, তাদেরকে আটক করে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে এবং আইনের আওতায় আনা হবে।

এ লক্ষ্যে সরকার আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে বহুমুখী কূটনৈতিক ও আইনি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

সরকারের একটি গোপন সূত্র জানিয়েছে, এই প্রক্রিয়ায় ইন্টারপোলের সহায়তা নেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনায় আছে। সরকার চায়, এসব অপরাধের দ্রুত বিচার কার্যকর হোক এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হোক।

এই প্রেক্ষাপটে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে গা-ঢাকা দিয়ে থাকা নেতাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে আত্মগোপনে গেছেন, আবার কেউ কেউ দেশে ফেরার উপায় খুঁজছেন।

রাজনীতি

নাহিদ, সারজিসকে টার্গেট করে হামলা, উদ্দেশ্য ছিল সরাসরি হত্যা : অপু

হামলাকারীদের লক্ষ্য ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় নেতা নাহিদ বা সারজিস। গাড়িবহরে ঢুকে যে আচরণ তারা করেছে, তা দেখে হত্যার উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়। আমরা ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।

নিউজ ডেস্ক

০৪ জুলাই ২০২৫, ২০:২৯

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) অভিযোগ করেছে, তাদের কেন্দ্রীয় নেতাদের বহনকারী গাড়িবহরে ঠাকুরগাঁওয়ের টাঙ্গন ব্রিজ এলাকায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার (৪ জুলাই) দুপুরে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় কর্মসূচি শেষে পীরগঞ্জ যাওয়ার পথে এ ঘটনা ঘটে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কর্মসূচি শেষে ঠাকুরগাঁওয়ের আর্ট গ্যালারি মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করে গাড়িবহরটি পীরগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। পথিমধ্যে টাঙ্গন ব্রিজ এলাকায় একটি আন্তঃজেলা বাস হঠাৎ বহরে ধাক্কা দেয়। এতে একটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হলে, এনসিপির নেতাকর্মীরা বিষয়টি জানতে বাসটির কাছে গেলে ৫-৬ জন অজ্ঞাত ব্যক্তি তাদের ওপর হামলা চালায়। এতে গাড়ির চালকসহ একজন কর্মী আহত হন।

এনসিপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, হামলাটি কেবল তাৎক্ষণিক কোনো ঘটনা নয়—বরং এটি ছিল একটি পূর্বপরিকল্পিত আক্রমণ। দলের ভাষ্য অনুযায়ী, বাস দুর্ঘটনার আড়ালে মূল উদ্দেশ্য ছিল গাড়িবহরে থাকা শীর্ষ নেতাদের লক্ষ্য করে প্রাণঘাতী হামলা চালানো। যদিও তারা ভুল গাড়িতে আঘাত করে, পরে তৎপর হয়ে আবারও হামলার চেষ্টা করা হয়।

ঠাকুরগাঁও জেলা এনসিপির মুখপাত্র অপু জানান,

“প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যাচ্ছে যে, হামলাকারীদের লক্ষ্য ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় নেতা নাহিদ বা সারজিস। গাড়িবহরে ঢুকে যে আচরণ তারা করেছে, তা দেখে হত্যার উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়। আমরা ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।”

ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। ঠাকুরগাঁও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সারওয়ার হোসেন বলেন, “আমরা অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এনসিপির পক্ষ থেকে ঘটনাটিকে হামলা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে এবং তারা একটি ভিডিও ফুটেজও আমাদের কাছে উপস্থাপন করেছে। তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”