শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫
৩ মাঘ, ১৪৩১

পরিক্ষামূলক সংস্করণ

ফিচার

সৌদির আরামকো তিনবার এসেছিল, হাসিনা সরকার তাদের বাধা দেয়: রাষ্ট্রদূত

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশঃ ০৬ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:৫৬

সৌদির আরামকো তিনবার এসেছিল, হাসিনা সরকার তাদের বাধা দেয়: রাষ্ট্রদূত

সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল ও গ্যাস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আরামকো ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে তিনবার বাংলাদেশে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে প্রতিনিধি দল পাঠিয়েও প্রত্যাশিত সাড়া পায়নি। এই সময়ে প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে তেল শোধনাগার নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করলেও, স্থানীয় প্রশাসনিক প্রতিবন্ধকতার কারণে সেই পরিকল্পনা এগোয়নি।

রোববার (৫ জানুয়ারি) ঢাকায় নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউসুফ ঈসা আলদুহাইলান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক আলোচনা সভায় এ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, “আরামকোর উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল বারবার বাংলাদেশে এসেছিল, কিন্তু তারা স্বাগত পায়নি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শুরু করে মন্ত্রী, সচিব এবং আমলাদের কাছে গিয়ে তাদের পরিকল্পনার পথে বাধা দেওয়া হয়। কিছু ব্যক্তি শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থ দেখেছেন। তবে আমরা অতীতের দিকে তাকিয়ে থাকতে চাই না; আমরা ভবিষ্যতের সম্ভাবনা নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।”

সৌদি রাষ্ট্রদূত আরও জানান, আরামকো এখনও বাংলাদেশে একটি তেল শোধনাগার স্থাপনে আগ্রহী। বঙ্গোপসাগরের উপকূলে একটি তেল শোধনাগার স্থাপন করা হলে, এটি থেকে উৎপাদিত পণ্য বাংলাদেশসহ পুরো অঞ্চলে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জের সহায়তায় আয়োজিত “সৌদি-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি: প্রবণতা, মূল চ্যালেঞ্জ এবং দীর্ঘমেয়াদি সম্ভাবনা” শীর্ষক এই আলোচনা সভায় সৌদি-বাংলাদেশ বাণিজ্যিক সম্পর্কের দীর্ঘমেয়াদী সম্ভাবনার ওপর আলোকপাত করা হয়। উল্লেখযোগ্যভাবে, এটি মন্ত্রণালয়ের প্রথম উদ্যোগ যেখানে একটি দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্কের বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলো।

রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, ‘যদি আমরা চট্টগ্রাম থেকে জেদ্দা বা দাম্মামের মধ্যে একটি সুমদ্রপথ তৈরি করতে পারি, তবে সেটি বাংলাদেশ ও এই অঞ্চলে বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে। এই তেল শোধনাগারের পণ্য চীন, ভারত ও প্রতিবেশী দেশগুলোতে পাঠানো সম্ভব।’

একই অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তৃতায় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছি, আমাদের দেশ সবচেয়ে ভালো বিনিয়োগবান্ধব, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি সব সময় সত্যি নয়। বর্তমান সরকার অবস্থার পরিবর্তন করার চেষ্টা করছে এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য আমরা ব্যবসা সহজ করার ব্যবস্থা নিচ্ছি।’ এখন যদি সৌদি বিনিয়োগকারীরা আসেন তবে ভালো একটি পরিবেশ দেখতে পাবেন বলে উল্লেখ করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।

আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দুর্নীতি ও অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি অতীতে অনেক ভুল নীতি গ্রহণ করা হয়েছিল। এ জন্য মূল্য দিতে হচ্ছে। বিগত সরকারের সময়ে দক্ষিণ কোরিয়ার ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান স্যামসাং কোম্পানিকে বিমানবন্দর থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সৌদি কোম্পানি আরামকোকেও বিমানবন্দর থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বহুমাত্রিক। আমাদের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক বিবেচনায় সৌদি আরবের গুরত্ব অনেক। অনেক দেশ আমাদের মুক্ত বাণিজ্য করার কথা বলছে। আমরা মুক্ত বাণিজ্য করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছি। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। সরকারের একার পক্ষে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বেসরকারি খাতের সহায়তা দরকার।’

পররাষ্ট্রসচিব রাষ্ট্রদূত মো. জসীম উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) নজরুল ইসলাম এবং পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ও নির্বাহী পরিচালক এম মাসরুর রিয়াজ।

এ সম্পর্কিত আরো খবর