বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫
৩০ পৌষ, ১৪৩১

পরিক্ষামূলক সংস্করণ

ফিচার

আসুন এক জোট হয়ে দেশবিরোধী সব ষড়যন্ত্র রুখে দেই: প্রধান উপদেষ্টা

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশঃ ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১:৪৬

আসুন এক জোট হয়ে দেশবিরোধী সব ষড়যন্ত্র রুখে দেই: প্রধান উপদেষ্টা

দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানকে দমন করার চেষ্টা চলছে বলে উল্লেখ করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

বুধবার (৪ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আয়োজিত সংলাপে তিনি এই আহ্বান জানান।

সংলাপের সূচনা বক্তব্যে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “গণঅভ্যুত্থান যাদের অপছন্দ, তারা এটি মুছে ফেলার এবং ভিন্নভাবে উপস্থাপনের ষড়যন্ত্র করছে। আমাদের সবাইকে এসব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে একত্রিত হতে হবে। এটা কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রশ্ন নয়, বরং জাতি হিসেবে আমাদের অস্তিত্বের প্রশ্ন।”

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলছে উল্লেখ করে তিনি রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশে বলেন, “নতুন বাংলাদেশের যাত্রাপথে এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা যেন একে যথাযথভাবে মোকাবিলা করতে ভুল না করি। সকলের পরামর্শ ও সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে এটি মোকাবিলা করা সম্ভব। একসঙ্গে কাজ করলে একটি শক্তিশালী সমবেত শক্তি তৈরি হবে।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের প্রথম দিন ৫ আগস্ট থেকে যড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা উপস্থিত নেৃতবৃন্দকে বলেন, ‘তবে এখন যে চেষ্টা চলছে, তার বিশেষ একটা রূপ আছে। সেজন্য আপনাদের বিশেষভাবে আহ্বান জানিয়েছি। এটা হচ্ছে, যে বাংলাদেশ আমরা গড়ে তোলার চেষ্টা করছি, সেটাকে ধামাচাপা দিয়ে আরেক বাংলাদেশের কাহিনি তারা রচনা করছে। সারাক্ষণ এটার নানা রূপরেখা তারা দিয়ে যাচ্ছে। এটা যে এক দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে, তা নয়। বিশেষ বিশেষ বড় বড় দেশের মধ্যে জড়িয়ে গেছে।’

 

অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘যারা অপতথ্য ছড়াচ্ছে তাদের আমরা বার বার বলছি, আপনারা আসেন, দেখেন। এখানে কোনো বাধা নেই। এখানে কী বলার বাধা আছে? দেখার বাধা আছে? কিন্তু না, তারা কল্প-কাহিনি বানিয়ে যাচ্ছেন। এখন আমাদের সারা দুনিয়াকে বলতে হবে, আমরা এক। আমরা যে স্বাধীনতা পেয়েছি একযোগে পেয়েছি। কোনো মতভেদের মাধ্যমে পাইনি, কাউকে ধাক্কাধাক্কি করে পাইনি। যারা আমাদের বুকের ওপর চেপে ছিল, তাদের বের করে দিয়েছি। আমরা নিজেরা উন্মুক্ত করে দিয়েছি। সেই জিনিসটা সবার সামনে তুলে ধরতে হবে।’

 

সরকার প্রধান বলেন, কীভাবে তুলে ধরব, সে ব্যাপারে পরামর্শ জানতে চাই। সবাই মিলে যেন কাজটি করতে পারি।

 

সরকারের আহ্বানে সংলাপে অংশ নেওয়ায় রাজনৈতিক দলগুলোকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা কেন জানি ষড়যন্ত্র থেকে মুক্ত হতে পারছি না। আমরা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে জগদ্দল পাথর সরাতে পারলাম, এ নিয়ে আমাদের আনন্দ করার কথা। কিন্তু আমাদের এই মুক্তি, আমাদের এই স্বাধীনতা অনেকের কাছে পছন্দ হচ্ছে না। নানাভাবে, নানা জায়গা থেকে এটাকে উল্টে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।’

 

ড. ইউনূস বলেন, ‘৫ আগস্টের পর থেকে কত রকমভাবে তা এসেছে, আপনারা বাস্তবের পরিপ্রেক্ষিতে সেগুলো দেখেছেন। এই পরিস্থিতিতে মনে করেছিলাম দুর্গাপূজা আসছে, এটা নিয়ে একটা হাঙ্গামা শুরু হবে। সেখানে আমরা ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছিলাম, সবাই সেই ঐক্যের মধ্যে শরিক হয়েছিলেন। সারাদেশজুড়ে খুব শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপন হয়েছে, আমরা সবাই উপস্থিত ছিলাম।’

 

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সারাদেশ পূজার আনন্দে সবাই শরিক হয়েছিল। কোনো জায়গা থেকে কোনো রকমের বিশৃঙ্খলা, কটূক্তি কিছুই হয়নি। সেটাও অনেকের পছন্দ হয়নি। আবার নতুন নতুন বেশে নতুনভাবে চেষ্টা করেই যাচ্ছে।’

 

অধ্যাপক ইউনূস ষড়যন্ত্রকারীদের প্রসঙ্গে উল্লেখ করে বলেন, ‘তারা গণঅভ্যুত্থানকে একটি ভয়াবহ ঘটনা হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছে। তাদের বক্তব্য, বাংলাদেশে একটি ভয়াবহ ঘটনা ঘটে গেছে এবং সেই ঘটনাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। তারা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে চায়। কিন্তু তাদের এই অপপ্রচারের বিপরীতে আমাদের বাস্তবতাকে প্রমাণ করতে হবে এবং সবার ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন।’

ইউনূস আরও বলেন, ‘এটা কোনো বিশেষ রাজনৈতিক মতবাদের প্রশ্ন নয়, বরং আমাদের জাতীয় পরিচয়ের প্রশ্ন। আমরা একটি মুক্ত এবং স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে। কিন্তু তারা সেই ইতিহাসকে ধ্বংস করতে চায়। তারা পুরোনো অবস্থায় ফিরে যেতে চায়। তাদের পরিকল্পনা হলো একটি কাল্পনিক বাংলাদেশ তৈরি করে রাখা। তাদের শক্তি, অর্থ এবং সংস্থার প্রভাব এত বেশি যে তারা ক্রমাগত মানুষকে বিভ্রান্ত করতে নতুন গল্প তৈরি করছে, যা অনেকের মনে সন্দেহ সৃষ্টি করছে।

এ সম্পর্কিত আরো খবর