শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫
৩ মাঘ, ১৪৩১

পরিক্ষামূলক সংস্করণ

লাইফস্টাইল

এই শীতে আপনার পশুপাখির যত্ন নিবেন যেভাবে

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশঃ ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪১

এই শীতে আপনার পশুপাখির যত্ন নিবেন যেভাবে

আশরাফুল ইসলাম (শেকৃবি প্রতিনিধি):

বাংলাদেশের প্রকৃতিতে এ মূহুর্তে চলছে শীতের হিমেল হাওয়া । স্বাভাবিক ভাবেই তাপমাত্রার পরিবর্তনের সাথে সাথে আবহাওয়ার সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে মানুষ কিংবা পশুপাখি সকলের বেশ বেগ পেতে হয়। প্রকৃতির নানামুখী পরিবর্তনের ফলে রোগজীবাণুর আক্রমণে সহজেই দেখা দেয় নানান অসুখ। এই শীতের ঠান্ডা পরিবেশে আমাদের গৃহপালিত পশু পাখিকে সুস্থ রাখার জন্য নানা পরামর্শ দেন চিকিৎসক এবং পুষ্টিবিদেরা। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি টিচিং হাসপাতালের ভেট সার্জন ডা. রুপ কুমার জানিয়েছেন কিভাবে ঠান্ডাকে পরাস্ত করে শীতে পোষা প্রাণীদের সুস্থ রাখা যায়৷

রোগপ্রতিরোধে ভ্যাক্সিনেশন ও ডি-ওর্মিং করা

শীতে সাধারণত পোষা প্রাণীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়। ফলে যে কোন সময় বিভিন্ন ভাইরাস ও ব্যাক্টেরিয়া জনিত রোগে আক্রান্ত হতে পারে। ভাইরাস জনিত রোগের জন্য ভ্যাক্সিন দেয়া জরুরি। সাধারণত পোষা প্রাণীর বিশেষত বিড়ালের বয়স যখন ২১ দিন হয়ে যাবে তখন ডি-ওর্মিং শুরু করতে হবে। ১৫ দিন পর পর পর্যায় ক্রমে ৩ মাস বয়স পর্যন্ত ডি-ওর্মিং করতে হবে। এবং পরবর্তী ৩-৬ মাস বয়সে প্রতি মাসে ডি-ওর্মিং ও পরবর্তীতে প্রতি ৩ মাস পর পর করতে হবে। আর বিড়ালের বয়স ৮ সপ্তাহ হলে কোর-ভ্যাক্সিন ( ফেলাইন পেন লিউকোপেনিয়া, রাইনোট্রাকাইটিস, ফ্যালাইন কফ, ক্ল্যামাইডিয়া) গুলো দিতে হবে। আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন সি(লেবুর রস,কমলার রস), টক দই কিংবা বাজারে সিনথেটিক ভিটামিনের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়াতে হবে৷

পোষা প্রাণীর জন্য পরিধান ও থাকার জায়গা

পোষা প্রাণীদের বুকে ঠান্ডা লাগলে শ্বাসনালীর সংক্রমন হতে পারে তাই শীতে ফ্লোরে ঘুমাতে কিংবা বুক যেন মেঝেতে না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। গরম কাপড় পরিধান করাতে হবে ৷ তারা যেখানে ঘুমাবে সেটা যেন গরম থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজন হলে পায়ে মোজা পড়াতে হবে। ঠান্ডা পরিবেশে প্রাণীদের বাহিরে যেতে দেয়া যাবে না।

শীতকালে পোষা প্রাণীদের খাবার

শীতে প্রাণীদের হালকা গরম খাবার দিতে হবে। পুষ্টিকর এবং সুষম খাবার দিতে হবে। খাবার কোন ভাবেই লম্বা সময় বাহিরে রেখে খাওয়ানো উচিত নয় আর প্রাণীরা যেন বাসি খাবারে মুখ না দেয় সেদিকেও নজর রাখতে হবে। শীতে সাধারণত শরীর গরম রাখতে প্রাণীদের অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রতি ঝোঁক থাকে, এতে শরীরের ওজন যেন মাত্রাতিরিক্ত না হয়ে যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এ জন্য একবারে খাবার না দিয়ে প্রাণদের জন্য প্রয়োজনীয় খাবার ধাপে ধাপে দিতে হবে।

পোষা প্রাণীর জন্য নিরাপদ পানি

পোষা প্রাণীরা বিশেষত বিড়াল পানি খুবই কম খেতে পছন্দ করে৷ আর শীতে এই পানি গ্রাহনের প্রবণতা আরও কমে যায়৷ এতে পানিশূন্যতা তৈরি হতে পাটে। বিড়ালের পানি শূণ্যতা অত্যন্ত ক্ষতিকর৷ তাই যদি পানি শূন্যতা দেখা দেয় তাহলে পানি বা স্যালাইন খাইয়ে দিতে হবে। প্রাণিরা যেন নরমাল ট্যাপের পানি, ময়লা পানি, ফুলের টবে জমে থাকা পনি পান না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। নতুবা জন্ডিস, টাইফয়েড এর মতো পানি-বাহিত রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তাই প্রাণী কিংবা মানুষ সকলের জন্যই নিরাপদ বিশুদ্ধ পানি পান করা উচিত।

শীতে প্রাণীদের গোসল করানো

শীতের মধ্যে প্রাণীদের গোসল করানো একদমই বন্ধ রাখা উচিত৷ বিকল্প হিসেবে শুষ্ক ফর্মের শ্যাম্পু, টেলকম জাতীয় পাউডার ব্যবহার করা যায়। পৃরয়োজনে পায়ের পাতায় সামান্য নারিকেল তেল কিংবা অলিভ ওয়েল ব্যবহার করা যায়। যদি গোসল করাতেই হয় তবে রৌদ্রময় দিনে গোসল করিয়ে সাথে সাথে হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে শরীর শুকিয়ে দিতে হবে। আর গোসলের সময় যেন কানে পানি না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

রোগ দেখা দিলে করণীয়

প্রাণি কিংবা মানুষ কখনো নিজের মতো ঔষধ খাওয়ানো উচিত নয়। সাধারণ জ্বরে মানুষের জন্য প্যারাসিটামল কার্যকর হলেও বিড়ালের জন্য মৃত্যুর কারণ হতে পারে। তাই যে কোন ধরনের রোগের লক্ষ্মণ দেখা দিলে সাথে সাথে নিকটস্থ ভেটেরিনারি রেজিস্ট্রারড চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

এ সম্পর্কিত আরো খবর