বিতর্কিত গায়ক মাঈনুল আহসান নোবেল এবার এক তরুণীকে অপহরণ, ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে গেছেন। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, অভিযোগ রয়েছে তিনি ওই তরুণীকে ছয় মাস ধরে আটকে রেখেছিলেন এবং একাধিকবার শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়েছেন।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, এক তরুণীকে সিঁড়ি দিয়ে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন একজন ব্যক্তি, যিনি পরবর্তীতে নোবেল হিসেবে শনাক্ত হন। এই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরপরই বিষয়টি জনসচেতনতায় আসে এবং পরিবার জাতীয় জরুরি সেবায় (৯৯৯) কল করে।
পুলিশ জানায়, সোমবার (২০ মে) রাত সাড়ে ৯টার দিকে ভুক্তভোগী তরুণীকে রাজধানীর ডেমরা থানার স্টাফ কোয়ার্টার এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়। এরপর রাত ২টার দিকে অভিযুক্ত নোবেলকে গ্রেপ্তার করা হয়। বুধবার ঢাকা মহানগর হাকিম আদালত তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে সামাজিক মাধ্যমে নোবেলের সঙ্গে ওই তরুণীর পরিচয় হয়। ২০২৩ সালের ১২ নভেম্বর মোহাম্মদপুরে দেখা করার কথা বলে নোবেল তরুণীকে ডেমরার একটি বাসায় নিয়ে যান, যেখানে তাকে জোরপূর্বক আটকে রাখা হয়। অভিযোগ অনুযায়ী, তরুণীর মোবাইল ফোন ভেঙে ফেলা হয় এবং তাকে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় শারীরিক নির্যাতন করা হয়। এমনকি ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয় বলে মামলায় উল্লেখ আছে।
ঘটনার বিষয়ে ডেমরা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মুরাদ হোসেন বলেন,
“নোবেল দাবি করেছেন, ওই তরুণী তার স্ত্রী এবং মৌখিকভাবে বিয়ে করেছেন। কিন্তু তিনি কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি।”
পরিদর্শক আরও জানান, ভুক্তভোগী তরুণীর জবানবন্দি ও ভিডিও প্রমাণের ভিত্তিতে মামলাটি গ্রহণ করা হয়েছে এবং তদন্ত চলছে।
এই ঘটনায় রাষ্ট্রপক্ষে জামিনের বিরোধিতা করেন ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক, আর নোবেলের পক্ষে জামিন আবেদন করেন তার আইনজীবী জসিম উদ্দিন। বিচারক জিয়া উদ্দিন আহমেদ উভয় পক্ষের শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
উল্লেখ্য, নোবেল এর আগেও একাধিকবার বিতর্কে জড়িয়েছেন। ২০২৩ সালে অগ্রিম টাকা নিয়ে গানে না যাওয়া, স্ত্রীর ওপর নির্যাতন, মাদকাসক্তি এবং মঞ্চে অসংলগ্ন আচরণে খবরের শিরোনাম হয়েছেন। এমনকি ওই বছরের ২৬ এপ্রিল কুড়িগ্রামে এক অনুষ্ঠানে দর্শক ক্ষুব্ধ হয়ে তার দিকে জুতা ও পানির বোতল নিক্ষেপ করলে পুরো অনুষ্ঠান পণ্ড হয়ে যায়।
ভারতের জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো ‘সা রে গা মা পা’-এর মাধ্যমে আলোচনায় আসা এই শিল্পী সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন কনসার্ট ও টিভি অনুষ্ঠানে নিয়মিত অংশ নিচ্ছিলেন এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। তবে নতুন করে এ ঘটনায় নোবেলের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগের তদন্ত শুরু হওয়ায় আবারও বিতর্কের কেন্দ্রে চলে এসেছেন তিনি।
এই ঘটনায় সমাজ, সংস্কৃতি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব নিয়েও জনমনে প্রশ্ন উঠছে। একজন পাবলিক ফিগার হিসেবে তার দায়বদ্ধতা, নৈতিকতা এবং বিচারব্যবস্থার প্রতি সম্মান কতটা ছিল—তা এখন বিচারিক প্রক্রিয়ায় প্রমাণিত হবে।