ইরফান উল্লাহ, ইবি:
বাসের সিট ধরাকে কেন্দ্র করে শনিবার রাতে সংঘর্ষে জড়িয়েছে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দুই বির্ভাগের শিক্ষার্থীরা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও শিক্ষকসহ অন্তত ১৩ জন আহত হন। শিক্ষকদের উপর হামলার প্রতিবাদে সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচারের দাবিতে রোববার বেলা ১১ টায় বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের উপর হামলার অভিযোগের বিচাররের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেন বিভাগটির শিক্ষার্থীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীসূত্রে জানা যায়, শনিবার সন্ধ্যা কুষ্টিয়া থেকে ক্যাম্পাসে ছেড়ে বাসে সিট ধরাকে কেন্দ্র করে বাকবিতণ্ডায় জড়ায় আল-ফিকহ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের রাকিব ও আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের সুমন। এসময় তাদের মধ্যে হাতাহাতির এক পর্যায়ে সুমনের মুখে আঘাত লাগে।
তবে সুমনের দাবি, ‘রাকিব আরেকজন সিনিয়রকে মারতে উদ্যত হলে তিনি তাকে ধাক্কা দিয়ে নিবৃত করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সুমনকে ঘুষি মারে ও শার্ট ছিড়ে দেয় রাকিব।’ তবে রাকিবের দাবি, ‘সুমন তার শার্টের কলার ধরলে সে শুধুমাত্র ধাক্কা দেয় সুমনকে। ঘুষি মারা বা শার্ট ছেড়ার কোন ঘটনা ঘটে নি।’
ঘটনার পর রাকিব বিষয়টি প্রক্টরকে জানালে প্রধান ফটকে উপস্থিত হন প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা। এদিকে রাকিব তার বিভাগের বন্ধুদের বিষয়টি অবগত করলে আইন বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী সেখানে উপস্থিত হন। এতে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে প্রক্টরিয়াল বডি ও দুই বিভাগের শিক্ষার্থীরা দুই পক্ষকে নিয়ে প্রক্টরের কার্যালয়ে আলোচনায় বসে।
এসময় উভয় বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ ভবনের সামনে অবস্থান নেন। পরে বিষয়টি সমাধান হওয়ার পর প্রক্টর বিষয়টি শিক্ষার্থীদের জানানোর পর আবারো উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এসময় আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা আল-ফিকহ বিভাগের শিক্ষার্থীদের ‘সন্ত্রাসী’ বললে উভয় পক্ষের শিক্ষার্থীরা বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে। এসময় দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আল ফিকহ বিভাগের শিক্ষার্থীদের দাবি,
আইন বিভাগের এক শিক্ষার্থী কর্তৃক প্রক্টরকে ধাক্কা দেয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তবে ধাক্কা দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এসময় শিক্ষার্থীরাদের থামাতে গিয়ে মারধরের শিকার হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড.শাহীনুজ্জামান, আল হাদিস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমানসহ অন্তত ১৩ জন। পরে তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এছাড়া প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান, আল হাদিস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমানের উপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের তদন্তপূর্বক বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকদের উপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে শাখা ছাত্রদল।
এদিকে রবিবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানান, আইন বিভাগ ও আল ফিকহ বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে মারধর ঘটনা ঘটে সেটি প্রক্টর অফিসে মিটিংয়ে সমাধান হয়ে যায়। কিন্তু আল ফিকহ ও অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা উস্কানীমূলক স্লোগান দেন।
এরপর তারা আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের উপর অতর্কিত ও পরিকল্পিত হামলা চালায়। এ হামলায় সরাসরি সম্পৃক্ত ও ইন্ধনদাতা ছিল যাকারিয়া, আমিনুর ও হাসানুল বান্না যারা আল ফিকহ বিভাগের শিক্ষার্থী নয়। তবে এবিষয়ে তাদের কাছে কোন প্রমান নেই বলেও জানান তারা। হামলায় স্বীকার শিক্ষার্থীরা এ অভিযোগ করেছেন বলে দাবি সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের। এ হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক বিচারের দাবি জানিয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা উভয়পক্ষ নিয়ে বসে বিষয়টি সমাধান করা হবে। এ ঘটনার বিষয়ে তদন্তপূর্বক জড়িতদের বিষয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।