ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাধারণ সম্পাদক এস এম ফরহাদ বলেছেন, “সেনাবাহিনীকে সত্যিকারের মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে হলে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত কর্মকর্তাদের অবশ্যই বিচার করতে হবে। এতে সেনাবাহিনীর মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হবে না, বরং আরও বৃদ্ধি পাবে।”
শুক্রবার রাত ৩টার দিকে নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
তিনি লেখেন,
“বিগত আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দুঃশাসনে গুম, নির্যাতন, মিথ্যা মামলা ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশে ভয়াবহ মানবিক সংকট তৈরি করেছিল। গুম কমিশনের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মাত্র ১৩ কার্যদিবসে প্রায় ১৮শ গুমের অভিযোগ জমা পড়েছে। এর শিকার হয়েছেন সাধারণ নাগরিক, শিক্ষার্থী, শ্রমজীবী, নারী এবং ইসলামী ছাত্রশিবির, জামায়াত, বিএনপিসহ আওয়ামী ফ্যাসিবাদবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। এমনকি শিশুরাও এই নৃশংসতার থেকে বাদ যায়নি।”
ফরহাদ আরও লেখেন,
“এ সকল গুম, নির্যাতন ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে কেবল স্বৈরাচার হাসিনা ও তার আওয়ামী ফ্যাসিবাদই দায়ী নয়; এর সঙ্গে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর উচ্চপদস্থ অনেক সদস্যও জড়িত। গুমের পর আয়নাঘরে চালানো অমানবিক নির্যাতন সভ্য সমাজে ঘৃণিত ও নিন্দনীয়। রাজনৈতিক ভিন্নমতের কারণে অসংখ্য নাগরিক, রাজনীতিবিদ ও শিক্ষার্থীকে পরিকল্পিতভাবে গুম করা হয়েছে, মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অপব্যবহার করে ‘জঙ্গি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, এসব সাজানো মামলায় ভিক্টিমদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস হয়েছে, বহু পরিবার নিঃস্ব হয়েছে, সমাজে ভয় ও নীরবতার এক বিভীষিকাময় সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
ডাকসু সাধারণ সম্পাদক আরও উল্লেখ করেন,
“আওয়ামী ফ্যাসিবাদের গুম ও নির্যাতনের ধারাবাহিকতা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; বরং রাষ্ট্রীয় যন্ত্রের পরিকল্পিত অপব্যবহার এবং মানবাধিকারের নগ্ন লঙ্ঘন। বিগত ফ্যাসিবাদী শাসনামলে রাষ্ট্রের প্রায় সব প্রতিষ্ঠানই দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছিল। এর প্রভাব সেনাবাহিনীতেও পড়েছিল। যারা র্যাব, ডিজিএফআই বা বিশেষ ফ্যাসিবাদী এজেন্ডায় যুক্ত ছিলেন, তাদের মধ্য থেকে অনেকে গুম, খুন, ক্রসফায়ারসহ নানা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে।”
ফরহাদ বলেন, সেনাবাহিনী বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান।
“এই প্রতিষ্ঠানকে মর্যাদায় ফিরিয়ে আনতে হলে অপরাধে জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করতেই হবে। এটি কোনো ইগো বা প্রতিষ্ঠানের সম্মানের বিষয় নয়; এটি রাষ্ট্র, গণতন্ত্র এবং ন্যায়বিচারের প্রশ্ন। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা গেলে সেনাবাহিনী আরও আত্মবিশ্বাসী হবে এবং সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরে আসবে।”
তিনি আরও আহ্বান জানান,
“চিহ্নিত অপরাধীদের সেফ এক্সিট তৈরি করার অপচেষ্টায় যারা যুক্ত, তাদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ফরহাদের এই মন্তব্য সেনাবাহিনীর জবাবদিহিতা ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের গণবিশ্বাস পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিকে নতুনভাবে সামনে এনেছে।