শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫
১০ মাঘ, ১৪৩১

পরিক্ষামূলক সংস্করণ

শিক্ষাঙ্গন

সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের ৭৬বছরে পদার্পণ!

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশঃ ১১ নভেম্বর ২০২৪, ১৩:১৬

সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের ৭৬বছরে পদার্পণ!

মেহেদী হাসান (সোহরাওয়ার্দী কলেজ প্রতিনিধি):

দেশের স্বাধিকার আন্দোলনসহ অসংখ্য ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাক্ষী এই সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ। কালের পরিক্রমায় ৭৫ বছর পেরিয়ে এই কলেজটি আজ পা রেখেছে ৭৬ বছরে। রাজধানী পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ। লাল ইটের বাতিঘরখ্যাত এই বিদ্যাপীঠটি ১৯৪৯ সালের ১১ নভেম্বরে প্রতিষ্ঠিত হয়। শিক্ষক সংকটসহ ভৌত অবকাঠামোগত বেশ কিছু সমস্যা নিয়ে কলেজটি ইতিহাস, ঐতিহ্য ও গৌরবের ৭৫ বছর পূর্ণ করেছে।

সোমবার (১১ নভেম্বর) কলেজটি ৭৫ বছর পূর্ণ করে ৭৬ বছরে পদাপর্ণ করলো। ১৯৪৯ সালের আজকের এই দিনে নালগলার ৫/১, জুম্মন ব্যাপারী লেনে কলেজটির কার্যক্রম শুরু হয়। তখন মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর উপাধি অনুসারে কলেজের নাম রাখা হয় কায়েদ- ই- আজম কলেজ। পরবর্তীতে লক্ষ্মীবাজরে জমি ক্রয় করে কলেজটিকে সেখানে স্থানান্তর করা হয় এবং নালগলার ভবনটিকে ছাত্রাবাসে রূপান্তর করা হয়।

শুরুতে কলেজটিতে কেবল আই.এ, আই.কম এবং বি.কম. কোর্স চালু ছিল। ১৯৫৫ সালে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে বিজ্ঞান বিভাগ চালু হয়, পরবর্তীতে ১৯৫৮ সালে কলেজটিতে বি.এস.সি কোর্স চালু হয়। এটিই ঢাকার মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগের জন্য উচ্চশিক্ষার প্রথম কলেজ। কারণ সে সময় ঢাকার অন্য কলেজে বিজ্ঞান বিষয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ ছিল নাহ। প্রথম অধ্যক্ষ হিসেবে ১৯৫০ সালে সৈয়দ জহির আহসান কলেজটির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কাকলী মুখোপাধ্যায়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে কলেজটির নাম পরিবর্তন করে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নামানুসারে কলেজটির নাম রাখা হয় শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ। পরে ১৯৮৪ সালে ১ নভেম্বর কলেজটি সরকারি কলেজে পরিণত হলে এর নাম রাখা হয় সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ। কলেজটির সংক্ষিপ্ত নাম জি এস এস সি। ২০০৪-০৫ শিক্ষাবর্ষে কলেজটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক (সম্মান) কোর্স চালু করে। সর্বশেষ, ২০১৭ সালের ১৬ ই ফেব্রুয়ারী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সাত কলেজটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হলে, সেখানে স্থান পায় সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ।

বর্তমানে কলেজটিতে উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অধ্যায়নের সুযোগ রয়েছে। মাত্র ১ একর জায়গায় উপর অবস্থিত থাকলেও কলেজটিতে ৩ টি অনুষদ এবং ১৭ টি বিভাগ রয়েছে। যার মধ্যে বিজ্ঞান অনুষদে ৭টি, কলা ও মানবিক অনুষদে ৮টি এবং বাণিজ্য অনুষদে ২ টি বিভাগ রয়েছে।

এই কলেজটি প্রতিষ্ঠার পরই শিক্ষাক্ষেত্রে দ্রুত বদলাতে থাকে পুরো পুরান ঢাকার চিত্র। কিন্তু সেই সোহরাওয়ার্দী কলেজই এখন নানা সংকট আর সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তুলনামূলক অবকাঠামো উন্নয়নে পিছিয়ে থাকায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পর্যাপ্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারছেন না কলেজ প্রশাসন। বর্তমানে কলেজটিতে প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থী, ১০১ জন শিক্ষক ও বিভিন্ন অনুষদের ১৭টি বিভাগ রয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষাব্যবস্থা চালু থাকলেও নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক। সোহরাওয়ার্দী কলেজের ক্যাম্পাস এক একরের অল্প একটু বেশি। ক্যাম্পাসটিতে লাইব্রেরীর জন্য আলাদা কোনো ভবন বা সুপরিসর কক্ষ নেই। মসজিদ পাশে নামকাওয়াস্তে মূল লাইব্রেরি। কলেজ লাইব্রেরিতে ক্যাটালগ নেই, বই ইস্যু এবং ফেরত নেওয়ার ব্যাপারেও অব্যবস্থা বিদ্যমান। নেই ক্লাস নেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষের ব্যবস্থা, যেগুলো আছে তাও আবার আয়তনে পর্যাপ্ত নয়।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে উক্ত কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা সমূহঃ
* কলেজের জায়গা বৃদ্ধিকরন,
* কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য কমপক্ষে ৪টি হলের ব্যবস্থা করা,
* যাতায়াতের জন্য কলেজ ৪টি বাসের ব্যবস্থা,
* পর্যাপ্ত ক্লাসরুমের ব্যবস্থা করা,
* লাইব্রেরি সংস্করণ করা,
* শিক্ষক সংকট দূরীকরণ,
* লাইব্রেরি সংস্করণ ও খেলার মাঠ সম্প্রসারণ,

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়ার প্রায় ৭ বছর হলেও এখনো নানা-রকম অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ায় হতাশ শিক্ষার্থীরা। সাত কলেজের মধ্যে ছয়টিতেই রয়েছে একাধিক আবাসিক হল কিন্তু সোহরাওয়ার্দী কলেজে নেই কোনো হলের ব্যবস্থা। এই নিয়ে নানা ভোগান্তিতে রয়েছে শিক্ষার্থীরা। আবাসিক এই সমস্যার সমাধান কবে মিলবে তা আদতে কেউ জানেন না।

এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর একটি বড় অংশ আসে গ্রামের মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে। কলেজের ভর্তি হওয়ার পর আশপাশের এলাকায় মেস বা বাসা বাড়া করে শুধু পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া তাদের অধিকাংশের পক্ষে সম্ভব হয় না। ফলে তাদের বাধ্য হয়ে খণ্ডকালীন চাকরিতে যোগ দিতে হয়। এজন্য তারা পড়াশোনায় পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারেন না। তাই ব্যাহত হচ্ছে তাদের পড়াশোনা।

দিনে দিনে এই আবাসন সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে সোহরাওয়ার্দী কলেজের কোনো নিজস্ব পরিবহনব্যবস্থা নেই। এ নিয়ে ঢাকার অদূরের শিক্ষার্থীদের নানা ভোগান্তি পোহাতে হয়। প্রতিষ্ঠার এত বছর পরেও বাস সার্ভিস দিতে না পারায় কলেজের প্রতি হতাশ শিক্ষার্থীরা।

পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ প্রতিষ্ঠার ৭৬ বছরেও শিক্ষার্থীদের পরিবহন ব্যবস্থা করতে পারেনি কলেজ প্রশাসন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাবির অধিভুক্ত তিতুমীর কলেজ নয়টি, ঢাকা কলেজ আটটি, ইডেন মহিলা কলেজে ও বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে চারটি, কবি নজরুল সরকারি কলেজ দুইটি এবং বাঙলা কলেজে একটি বাস রয়েছে।

সাত কলেজের ছয়টি ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য নিজস্ব বাস থাকলেও সোহরাওয়ার্দী কলেজে যাতায়াতের জন্য কোনো বাস নেই। এজন্য প্রশাসনিক ব্যর্থতার কথা বলছে শিক্ষার্থীরা। তারা দ্রুত এই সমস্যার সমাধান চায়। দীর্ঘ ৭৬ বছরে দেশে আমূল পরিবর্তন হলেও তেমন পরিবর্তন হয়নি সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে। উন্নয়নের বিস্ময় গোটা বাংলাদেশ হলেও অজানা কারণেই পুরান ঢাকার এই কলেজটিতে তেমন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। দেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে, এই উন্নয়নের মহাসড়কে কলেজটিকে শামিল করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা।

এ সম্পর্কিত আরো খবর