মেহেদী হাসান (ক্যাম্পাস প্রতিনিধি):
সোমবার সকালটা অন্যদিনের মতো ছিল না। রাজধানীর সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের আঙিনায় সকাল থেকেই জমতে থাকে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা হাতে ব্যানার, গলায় ঝরছে শ্লোগান—‘পারভেজ ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে?
গত ১৯ এপ্রিল, বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী জাহিদুল ইসলাম পারভেজকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। এর প্রতিবাদেই আজ (২১ এপ্রিল) সকালে কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
সমাবেশের নেতৃত্ব দেন কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি জসিম উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম রুবেল। সঙ্গে ছিলেন ছাত্রদলের অন্যান্য নেতাকর্মী।
মঞ্চে দাঁড়িয়ে সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, ‘পারভেজ আমাদের কেবল সহযোদ্ধা নয়, সে ছিল বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী ছাত্র আন্দোলনের এক উজ্জ্বল প্রতীক। আজ তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হলো। আমরা কি ন্যায়বিচার পাবো না?
একই সুরে সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম রুবেল বলেন, ‘তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিছু বখাটে সন্ত্রাসী—তুষার হৃদয়সহ—পারভেজ ভাইকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
সমাবেশে ছাত্রদল নেতারা একে একে বক্তব্য দেন। সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির সোহাগ বলেন, ‘এটি কেবল একজন ভাইকে হারানোর বেদনা নয়, এটি বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির ওপর সরাসরি হামলা। আমরা চাই, এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচার হোক। বিচারহীনতার কালো ছায়া আর চলতে দেওয়া যাবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘একটি স্বাধীন দেশে মত প্রকাশের অধিকার থাকতে হবে। আর রাজনৈতিক মতপার্থক্যের কারণে কোনো প্রাণ ঝরবে—এটা কখনোই মেনে নেওয়া যায় না।
সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা জানান, পারভেজ হত্যার বিচার দাবিতে তাঁরা প্রয়োজনে আরও বড় কর্মসূচির দিকে যাবেন। তারা চান, বাংলাদেশের প্রতিটি ক্যাম্পাস নিরাপদ থাকুক, কোনো শিক্ষার্থী যেন রাজনীতির নামে জীবন হারাতে না হয়।
জানা যায়, ঘটনার দিন বিকেল ৪টার দিকে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ‘ইঙ্গিতপূর্ণ হাসাহাসি’কে কেন্দ্র করে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে পারভেজকে ছুরিকাঘাত করা হয়। তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলেও বাঁচানো যায়নি। ২২ বছর বয়সী পারভেজ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। বাড়ি ময়মনসিংহের বিরুনিয়া ইউনিয়নে।
এ ঘটনায় বনানী থানায় পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। পরিবার ও সহপাঠীরা দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।