বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে থাকবে ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত চলা ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান। এই আন্দোলনের বিরুদ্ধে হামলায় সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিষিদ্ধ সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ওয়ালি আসিফ ইনান-কে বহিষ্কার করেছে। একই সঙ্গে বহিষ্কার করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন-কেও। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সাময়িক বহিষ্কৃত ১২৮ জনের তালিকায় তাদের নাম রয়েছে।
সিন্ডিকেট সভার এই সিদ্ধান্ত স্পষ্টতই প্রমাণ করে যে, ছাত্রলীগ নামক সন্ত্রাসী সংগঠনের নেতৃত্বেই গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়েছিল। বহিষ্কৃতরা সরাসরি হামলার নেতৃত্ব দিয়েছিল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসকে রণক্ষেত্রে পরিণত করেছিল। সাদ্দাম হোসেন ও ওয়ালি আসিফ ইনান বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন, অন্যদিকে মাজহারুল কবির শয়ন নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন।
উল্লেখ্য, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ১৫ জুলাই ছাত্রলীগের ক্যাডাররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর বর্বর হামলা চালায়। এই হামলার ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে এবং প্রতিবাদ আরও বেগবান হয়। পরবর্তীতে এই আন্দোলন শুধুমাত্র কোটা সংস্কারের দাবিতে সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং তা গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণ এবং দেশজুড়ে ছাত্র-জনতার অপ্রতিরোধ্য প্রতিবাদের মুখে ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।
এই বহিষ্কারের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন স্পষ্টতই প্রমাণ করেছে যে, ছাত্রলীগের নেতৃত্বে সন্ত্রাস ও দমনপীড়নের যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল, তা আর বরদাশত করা হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ ধ্বংসের জন্য দায়ী ছাত্রলীগের এই অপরাধী নেতাদের বহিষ্কার শুধুমাত্র প্রথম পদক্ষেপ। শিক্ষার্থীরা দাবি করছে, এদের বিরুদ্ধে যথাযথ বিচার নিশ্চিত করা হোক এবং গণআন্দোলনে হামলাকারীদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হোক।
শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শুধু বহিষ্কার নয়, আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালিয়ে যারা নির্যাতন চালিয়েছে, যারা গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে রক্তাক্ত করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থান যে এক নতুন বাংলাদেশ গঠনের সূচনা করেছে, তা নিশ্চিত করতে হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী দখলদারিত্ব থেকে মুক্ত করতেই হবে।