হাবিবুর রহমান সাগর,জাবি প্রতিনিধি
মব সন্ত্রাসের প্রতিবাদ এবং শাহবাগের জুডিশিয়াল কিলিং এর বিচারের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ক্যাম্পাস ভূকম্পিত করে বিক্ষোভ মিছিল করছে শিক্ষার্থীরা। বুধবার (১২ মার্চ) ভোর রাত আড়াইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে বিক্ষোভমিছিলটি শুরু হয়ে একুশটা হল এবং গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় বটতলায় এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
বিক্ষোভ মিছিলে “অন টু থ্রি ফোর, শাহাবাগী নো মোর”, “শাহাবাগী রাজাকার এই মুহুর্তে বাংলা ছাড়”, “লতে লাকি, তুই হাসিনা তুই হাসিন”, “সন্ত্রাসী শাহাবাগীদের আস্তানা, এই বাংলায় হবে না”, “শাহাবাগীদের গদিতে, আগুন জ্বালো এক সাথে’, “শাহাবাগী দালালেরা, হুশিয়ার সাবধান”, “শাহবাগ না শাপলা, শাপলা শাপলা”, “শাহবাগ সন্ত্রাস করে, ইন্টেরিম কি করে” ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
সমাবেশ নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শোয়াইব হোসেন বলেন, ২০১৩ সালের শাহবাগ এই ২০২৫ এ এসে প্রতিষ্ঠিত হতে দিবো না। বাংলাদেশের বুকে আর একটা জুডিয়াশিয়াল কিলিং হতে দিবো না। আরেকটা শাহবাগ করতে হলে আমাদের লাশের ওপর দিয়ে। করতে হবে। কারা জুডিশিয়াল কিলিং এর রাস্তা তৈরি করেছিল, আমরা ভুলি নাই। এই সরকারকে বলতে চাই দ্রুত এদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসুন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গনিত বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাফায়েত মীর বলেন, ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনার তৈরি করা শাহাবাগীদের আবার উত্থান হয়েছে, আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। লাকিকে অতি দ্রুত গ্রেফতার করতে হবে নতুন করে শাপলায় আবারও রক্ত ঝরতে আমরা দেবনা। সোনার বাংলায় দিল্লির ষড়যন্ত্র আমরা কায়েম করতে দেব না। ইসলাম বিদ্বেষ ও ভারতীয় ষড়যন্ত্রের মাধ্যমেই এই শাহাবাগের উৎথান।
তিনি আরও বলেন, জুলাই আন্দোলনের পর আমরা ভেবেছিলাম তারা শুধরাবে কিন্তু তারা শুধরায়নি। আমরা রাজপথে আছি শাহাবাগীদের রাজপথেই আমরা মোকাবেলা করবো। জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের সময় জাহাঙ্গীনগরের আন্দোলনকেও এই শাহাবাগীরা বাঞ্চাল করতে চেয়েছিলো। আমরা এখনো মারা যাই নাই, শহীদদের রেখে যাওয়া স্বপ্ন আর ২৪’র চেতনাকে ধারণ করে শাহাবাগের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চলবে।
সমাবেশে সিএসই বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আলি জাকি শাহরিয়ার বলেন, ‘আমরা জানি কিভাবে এই শাহবাগ ফ্যাসিস্টদের দোসর এবং তারা কিভাবে ফ্যাসিস্টদের ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে। আমরা এটাও দেখেছি এরা দেশে কিভাবে বিচারিক হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। আমরা অবাক হই ২৪’র পরবর্তী সময়ে এসে কিভাবে এই লাকি আক্তার অবাধে বিচরণ করে বেড়াচ্ছে। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীসহ সাধারণ আপামর জনতা এই শাহবাগীদের বিচার চাই। আমরা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই যতদিন না এই শাহবাগীদের মূল উৎপাটন হচ্ছে, শাহবাগীদের শিরচ্ছেদ হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত আমাদের লড়া চলবে।’
সমাপনী বক্তব্যে সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আনজুম শাহরিয়ার বলেন, জুলাই ২৪’র রক্তঝরা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যখন ভেবেছিলাম যে, ফ্যাসিবাদমুক্ত একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে উঠেছে, তখনই আবার দেখতে পাচ্ছি সেই পুরনো ফ্যাসিস্ট ফিরে আসছে। দুই হাজার ছাত্রজনতার রক্তের বিনিময়ে আমরা যে মুক্তি পেয়েছি, সেই মুক্তিকে আজ আবার হুমকির মুখে ফেলা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, শাহবাগে যে ‘জুডিশিয়াল কিলিং’ এবং ‘মব জাস্টিস’-এর সূচনা হয়েছিল, সেই শাহবাগী সন্ত্রাসী লাকি আক্তার যখন এই বাংলায় এসে আবারো মব জাস্টিস এর ডাক দেয় তখন আমরা সেই পুরনো ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনার স্বরূপকেই দেখতে পাই। শাহবাগে জুডিশিয়াল কিলিং কায়েম করার মাধ্যমে আমাদের ভাইদেরকে তাজা রক্তে রঞ্জিত করা হয়েছিল তা আজ আবার নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চাইছে। সেই সময় যেভাবে ছাত্রদের রক্ত ঝরিয়ে ফ্যাসিবাদ কায়েম করা হয়েছিল, ঠিক তেমনই একটি মহল এখনো একই অপকৌশলে দেশকে বিশৃঙ্খলার দিকে ঠেলে দিতে চাচ্ছে।
শাহরিয়ার আরও উল্লেখ করেন, আমরা ২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই-বাংলার ছাত্র জনতা আর কোনো মব জাস্টিস মেনে নেবে না। যদি কেউ বিচার ব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়ে নিজস্ব স্বার্থে জনগণের নামে বিচার করতে চায়, যদি আবার কোনো ষড়যন্ত্র করে আরেকটি ‘জুডিশিয়াল কিলিং’ ঘটানোর চেষ্টা করা হয়, তবে ছাত্র জনতা তা কঠোর হস্তে প্রতিহত করবো।
আমরা ফ্যাসিবাদী শক্তির রূপ আজও স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছি। একসময় শাহবাগকে ব্যবহার করে যে স্বৈরশাসন কায়েম করা হয়েছিল, আজ আবার সেই শক্তিগুলো নতুন করে সক্রিয় হচ্ছে। আমরা দৃঢ়ভাবে জানিয়ে দিতে চাই-এই বাংলার ছাত্র জনতা আর কোনো ফ্যাসিবাদ বরদাশত করবে না।
বর্তমানে ইন্টেরিম সরকার একটি সুষ্ঠু বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, কিছু কুচক্রী মহল বিদেশি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য নানা অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চাইছে। ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের নামে কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে মন কায়েমের অপচেষ্টা চালাচ্ছে, যা দেশের সার্বভৌমত্ব ও ন্যায়বিচারকে হুমকির মুখে ফেলছে। আমরা এই ষড়যন্ত্রের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।