মোঃ আলী মোর্তজা
বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স)-এ ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে নতুন বিভাগ হিসেবে টেক্সটাইল ম্যাটেরিয়ালস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগটি যুক্ত হচ্ছে। বিভাগটির আসন সংখ্যা ৪০। নতুন এই বিভাগটির শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনার প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে।
টেক্সটাইল ম্যাটেরিয়ালস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে রয়েছে প্রায় ২৫ কোটি টাকার অত্যাধুনিক মেশিনারিজ। যা গবেষণা এবং শিক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিভাগটির মেশিনারিজের মধ্যে রয়েছে ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ যার দ্বারা পদার্থের মাইক্রো এবং ন্যানো স্কেলে গঠন বিশ্লেষণ করা যায়। রয়েছে এক্স-রে ডিফ্র্যাক্টোমিটার যা স্ফটিক কাঠামো এবং বস্তুর উপাদানগত গঠন নির্ণয় করে। বস্তুর উপাদানের পর্যবেক্ষণের জন্যও এটি খুবই কার্যকর। রয়েছে ডায়নামিক মেকানিক্যাল অ্যানালাইজার; এটি প্রধানত উপকরণের স্থিতিস্থাপকতা, সান্দ্রতা এবং তাপমাত্রা পরিবর্তনের প্রভাব বিশ্লেষণ করে। উপাদানের তাপীয় স্থিতিশীলতা এবং ভর হ্রাসের হার নির্ণয়ের জন্য রয়েছে থার্মোগ্র্যাভিমেট্রিক অ্যানালাইজার।
এছাড়াও রয়েছে অ্যাটমিক ফোর্স মাইক্রোস্কোপ, স্পেকট্রোফটোমিটার, ড্রপ শেইপ অ্যানালাইজার, আল্ট্রাসনিক বাথ, ইলেকট্রিক্যাল রেজিসটিভিটি টেস্টার, থ্রি-ডি প্রিন্টার এবং র্যাপিড প্রোটোটাইপিং মেশিন, ফাইবার এবং পলিমার টেস্টিং যন্ত্র, ডিফারেনশিয়াল স্ক্যানিং ক্যালোরিমিটার (ডি.এস.সি), হাইড্রোলিক প্রেস এবং হিট প্রেস ইত্যাদি অত্যাধুনিক মেশিনারিজ।
বিভাগটির ল্যাবে বিদ্যমান আধুনিক মেশিনারিজসমূহ ব্যবহার করা যাবে নানাবিধ গবেষণার কাজে। যুগোপযোগী ন্যানোটেকনোলজি, পলিমার সাইন্স, কম্পোজিট ম্যাটেরিয়াল এবং বায়োম্যাটেরিয়ালস নিয়ে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ল্যাবে বিদ্যমান রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন শিল্প খাতের প্রয়োজন অনুযায়ী টেস্টিং এবং উন্নয়নের কাঠামোগত কাজ ল্যাবটিতে করা যাবে।
বিভাগটি চালু করার কারণ প্রসঙ্গে বিভাগটির ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. শেখ মোঃ মামুন কবীর বলেন, টেক্সটাইল ম্যাটেরিয়ালস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগটি প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য হলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এমন একটি শাখা তৈরি করা যা পদার্থের গঠন, বৈশিষ্ট্য এবং ব্যবহারযোগ্যতা নিয়ে গবেষণা করে। বিভাগটি চালু করার আরও কয়েকটি কারণ হলো উন্নত প্রযুক্তির চাহিদা মেটানো, শিল্প ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন, পরিবেশবান্ধব সমাধান খুঁজে বের করা, গবেষণা ও উদ্ভাবনের প্রসার ঘটানো, সর্বোপরি শিক্ষিত ও দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা।
তিনি আরও বলেন, এই বিভাগটির ল্যাবের মেশিনারিজগুলো গবেষণা এবং শিক্ষার জন্য যথেষ্ট উপযোগী। তবে যন্ত্রগুলোর নিয়মিত ব্যবহার এবং রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করা গেলে ল্যাবের কার্যক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া উদীয়মান প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে আরও উন্নত মেশিনারিজ যোগ করার প্রয়োজন হতে পারে।
নতুন বিভাগটির উচ্চশিক্ষায় কেমন সুযোগ রয়েছে এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বুটেক্সে টেক্সটাইল ম্যাটেরিয়ালস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) এবং ডক্টরেট (পি.এইচ.ডি) পর্যায়ে পড়াশোনা করার সুযোগ রয়েছে।
এছাড়াও এই বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে (যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরোপ, জাপান) উচ্চ শিক্ষার জন্য স্কলারশিপ পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। ম্যাটেরিয়াল সাইন্সের বিশেষায়িত বিষয়গুলোতে দক্ষতা তৈরি করে বিদেশে কাজ করারও সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
টেক্সটাইলের বর্তমান সংকট নিরসনে এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিতে টেক্সটাইল ম্যাটেরিয়ালস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগটি কেমন ভূমিকা রাখতে পারে এ প্রশ্নের জবাবে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. হোসনে আরা বেগম বলেন, ম্যাটেরিয়ালস সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগটি সবে মাত্র শুরু হচ্ছে। এখান থেকে বৃহৎ পরিসরে ফলাফল পেতে হলে ধৈর্য ধরতে হবে, আরো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে, অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। যেহেতু এটি গবেষণাধর্মী একটি বিষয়, তাই এখান থেকে ফলাফল আসতে সময়ের প্রয়োজন। উপযুক্ত বিষয় নির্বাচন করে গবেষণা করা, গবেষণার ফলাফল অনুধাবন এবং বাস্তবায়নের প্রত্যক্ষ ফলাফল পেতে হলে বছরের পর বছর সময় লেগে যেতে পারে। যেটির প্রেক্ষিতে টেক্সটাইলের বর্তমানের সংকটগুলো নিরসনে বিভাগটি অতিসত্বর কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আমি মনে করি না।
গবেষণায় নতুন বিভাগটি কেমন ভূমিকা রাখবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসলে আন্ডারগ্রাজুয়েট লেভেলের শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ফলপ্রসূ গবেষণার আশা করাটা যথার্থ নয়। এখানে কেমন ধরণের শিক্ষার্থী আসবে, তাদেরকে আমরা কীভাবে গবেষণার জন্য উপযুক্ত করে গড়তে পারি সেটি আসল বিষয়। গবেষণা করার জন্য মাস্টার্স এবং পি.এইচ.ডি লেভেল উপযুক্ত সময়। যোগ্য শিক্ষার্থীরা মাস্টার্স, পি.এইচ.ডি লেভেলে যেয়ে নির্দিষ্ট বিষয়ে রিসার্চে অংশ নিতে পারে।
নতুন বিভাগটি নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কীরূপ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসলে নতুন বিভাগের প্রতি প্রত্যাশা তো সবারই থাকে। তবে এই বিভাগটির যেই কোর্স কারিকুলাম সেটি আন্ডারগ্রাজুয়েট পড়তে আসা যেকোনো সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত মনে হয়নি। এটি মাস্টার্স পর্যায়ের সেসব শিক্ষার্থী যারা আসলেই এটির সাথে মানিয়ে নিতে সক্ষম তাদের জন্য উপযুক্ত ছিল। তাছাড়া শুধু প্রত্যাশা রাখলেই তো হবে না, আমাদের উপযুক্ত শিক্ষক লাগবে, ছাত্র লাগবে, ছাত্রদেরকে সঠিকভাবে উপযুক্ত করে গড়তে হবে। প্রত্যাশা তো পরের ব্যাপার। এখন তো আমরা সবে শুরু করছি, সামনে অনেক কিছুর সম্মুখীন হতে হবে, অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। আমরা যখন কয়েকটা ব্যাচ পার করবো, তখন ব্যাপারগুলো আরো দৃশ্যমান হবে।
বিভাগটির ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধানের মতে নতুন এই বিভাগটি সেসব শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত যারা বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় আগ্রহী এবং প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও শিল্পক্ষেত্রে বাস্তবসম্মত সমাধান খুঁজে বের করতে উৎসাহী। যারা শিল্প, গবেষণা, বা উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চায়। এই বিভাগটি তাদের জন্য আদর্শ যারা সৃজনশীল, গবেষণামুখী এবং ভবিষ্যতের জন্য টেকসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনে অবদান রাখতে চায়।