বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) ছাত্রদলের বিরুদ্ধে সম্প্রতি বিভিন্ন অনিয়ম ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছে। ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হলেও এবার ছাত্রদলের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে দেওয়া, শিক্ষকদের কক্ষে তালা লাগানো, ক্যাম্পাসের দোকানগুলোর ওপর প্রভাব বিস্তারসহ নানা কার্যক্রমের অভিযোগ সামনে এসেছে।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, কৃষি অনুষদের অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. হারুন-উর-রশীদ, অধ্যাপক ড. আয়েশা আক্তার, সহযোগী অধ্যাপক ড. দেবু কুমার ভট্টাচার্য, সহযোগী অধ্যাপক রুহুল আমিনসহ দুই কর্মকর্তার কক্ষে তালা লাগানোর ঘটনা ঘটিয়েছে ছাত্রদল সমর্থিত শিক্ষার্থীরা। এই ঘটনায় জড়িত হিসেবে আহসান হাবীব, জিব্রিল শরীফ, রাশেদসহ কয়েকজনের নাম উঠে এসেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে গিয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে হল ছাড়ার হুমকির অভিযোগ উঠেছে। এতে জিব্রিল শরীফ, সাজু ইসলাম, রাশেদ, আহসান হাবীব, হামিদুর রহমান হিমেলসহ মোট ১২ জনের নাম সংশ্লিষ্ট বলে জানা গেছে। হুমকির শিকার শিক্ষার্থীদের কেউ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হল ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন, আবার কেউ তাৎক্ষণিকভাবে হল ত্যাগ করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রদল সমর্থিত শিক্ষার্থী বলেন, “জুলাই আন্দোলনে যারা সরাসরি বিরোধিতা করেছিল, লাঠি হাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিল, তাদেরই টার্গেট করা হয়েছে। ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে কিছু করা হয়নি।”
শিক্ষকদের রুমে তালা দেওয়ার বিষয়ে জিব্রিল শরীফ বলেন, “যে শিক্ষকরা ছাত্র আন্দোলনের বিরোধিতা করেছেন বা নিয়োগ বাণিজ্যের সাথে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তাই আমরা প্রতিবাদ স্বরূপ এ পদক্ষেপ নিয়েছি।”
তথ্য অনুযায়ী, হুমকির শিকার শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত হলেও তারা জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সমর্থন করেছেন আবার অনেকে নিজে অংশও নিয়েছিলেন বলে দাবি করেন শিক্ষার্থীরা।
এছাড়াও ছাত্রদল নেতাকর্মীদের আত্মীয়-স্বজন এবং অনুসারীদের দোকান স্থাপন ও আশপাশের দোকানগুলোতে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ উঠেছে। এসব দোকান থেকে চাঁদা দাবির অভিযোগও রয়েছে। তবে অভিযুক্তরা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ছাত্রদলের শেকৃবি শাখার সাধারণ সম্পাদক বলেন, “ছাত্রদলের লিখিত সদস্য ছাড়া কোনো ব্যক্তির কাজের দায়ভার ছাত্রদল নেবে না। আমি ব্যক্তিগতভাবে এসব সম্পর্কে অবগত নই।”
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর এই ধরনের ঘটনার পরেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রক্টর ড. মো. আরফান আলী বলেন, “অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা শিক্ষকদের রুমে তালা দিয়েছে, তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।”
এরুপ পরিস্থিতিতে ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা এবং প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পূর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে ছাত্রদলের ব্যানারে মানববন্ধন করতেও দেখা গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দায়িত্ব এবং শিক্ষার্থীদের সহাবস্থান নিশ্চিত করাই এক্ষেত্রে মূল চ্যালেঞ্জ মনে করছেন শিক্ষার্থীরা।
আশরাফুল ইসলাম (শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়)