বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫
৩০ পৌষ, ১৪৩১

পরিক্ষামূলক সংস্করণ

সারাদেশ

ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে, ঘুরছে ভাগ্যের চাকা

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশঃ ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০৫

ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে, ঘুরছে ভাগ্যের চাকা

আক্কাছ আলী (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি:

দিঘীরপাড়, নদীর ঘাটে মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন জাফর মোল্লা। ছোট একটি নৌকা ভিড়তেই শুরু হলো হাঁকডাক ‘যাবেন না-কি’। পেয়ে গেলেন দুই যাত্রী। ছুটলেন বালুর পথ ধরে ধুলো উড়িয়ে।
ব্যাক্তিগত মটোরসাইকেলের পাশাপাশি কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে অন্তত তিন শতাধিক ভাড়ায় চালিক মোটরসাইকেল চালকের । এতে ভোগান্তি কমেছে চরবাসীর। তারা এখন নদীর পাড় থেকে চর পাড়ি দিচ্ছেন ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে চেপে।
স্থানীয়রা বলছেন, কৃষিকাজের পাশাপাশি বেকারদের একমাত্র ভরসা মোটরসাইকেল, এলাকার মানুষের একমাত্র আয়ের পথ।  কিন্তু এখন মোটরসাইকেল চালিয়েও সংসার চালান অনেকে।
কথা হয় দিঘীরপাড় ইউনিয়নের নদীর ঘাটে মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা যুবক আল-আমিনের সাথে তিনি বলেন,  প্রতিদিন ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা আয় হয়। তবে তেল ও অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে সব মিলিয়ে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা থাকে।
তিনি আরও বলেন, এখানে মোটরসাইকেল চালানো খুব সহজ কাজ নয়। উঁচু-নিচু বালুর রাস্তায়  বাইক চালাতে খুব কষ্ট হয়। গা হাত পায়ে পুরো ধুলো পড়ে সাদা হয়ে যায়।
শরীয়তপুরের নড়িয়ার নওপাড়ার কামাল শেখ বলেন, মোটরসাইকেলে তিনটি জেলাকে যোগাযোগ ব্যবস্থার একটি বন্ধন তৈরি করেছে। আমরা মুন্সিগঞ্জ দিঘীরপাড় থেকে শরীয়তপুরের কাচিকাটা নওপাড়া চরআত্রা কুন্ডের চর, চাঁদপুরের এলামচর খুব সহজেই মোটরসাইকেলে যাতায়াত করতে পারি, নৌকা ট্রলারে ঘন্টার পর ঘন্টা আমাদের বসে থাকতে হয়।
এসময় কয়েকজন মটোরসাইকেল চালকের সাথে কথা বলে জানা গেছে,  ভোর থেকে শুরু হয়ে রাত ৯ টা পর্যন্ত চলে এই চরে মোটরসাইকেল চলাচল । আবার কারো জরুরী প্রয়োজনে ফোন করলে  যাওয়া হয় গভীর রাতেও। স্থান ভেদে নির্ধারন করা হয় ভাড়া তবে দুজন যাত্রীর জন্য যে ভাড়া একজনের খেত্রেও নেওয়া হয় একি। সারাদিন যাত্রীদের আসা যাওয়ার উপর নির্ভর করে তাদের আয়।
গত ১০ বছর ধরে ধু-ধু চরে ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন বাংলাবাজারের আসিক টালী নামের আরেক যুবক তিনি বলেন, এই চরের মানুষ তাদের প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় কাজে এই পারে পার হন কেউ আইনি কাজে আসেন কেউ চিকিৎসার জন্য আবার কেউ অতি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস পত্র কিনতে আসেন। এই দিঘীরপাড়ের  ঘাটে  প্রতিদিন কয়প হাজার মানুষ আসা যাওয়া করে বলেও জানান তিনি ।
জাকির হোসেন নামের এক মটোরসাইকেল আরোহী জানান, মুন্সীগঞ্জ  সদর উপজেলা রামপাল  এলাকায় খালার বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছেন তারা। তাই মোটরসাইকেলে চর পাড়ীদিয়ে ঘাটে দাড়িয়ে থাকা আটোগাড়িতে উঠেছেন তিনি।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা  শরিফুল ইসলাম জানান, প্রশব জনিত ব্যাথা নিয়ে স্ত্রী মারিয়াকে নিয়ে রাতে মোটরসাইকেলে করে উপজেলার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন তিনি। এসময় তিনি আক্ষেপ করে বলেন কবে যে যোগাযোগ ব্যাবস্থার  উন্নতি  হবে, তাহলে আমরা একটু শান্তি পাই।
এসময় যাত্রীদের অপেক্ষায় ঘাটে দাড়ি থাকা কিরন নামের এক আটো চালকের সাথে কথা হয় তিনি জানান, ১০ বছর ধরে তিনি নদীর ঘাট থেকে চরের মানুষকে জেলা শহরে পৌঁছেদেওয়ার কাজ করছেন বিনিময়ে ভাড়া নিচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা।
তার অভিজ্ঞতা থেকে তিনি জানালেন, মটোরসাইকেল এসে এখন চরের মানুষ খুব আরামে আছে যখন ইচ্ছে আসা যাওয়ার করতে পারছে। কি ধরনের যাত্রী বেশি হয় তার কাছে যানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, কোর্টের আর হাসপাতালে যাত্রী বেশি হয় তাছাড়া আত্মীয় বাড়ির কিছু থাকে।
এলাকার মানুষের ভোগান্তির কথা, অসুস্থ কিনবা আইনি সহায়তা সব কাজেই এই অঞ্চলের মানুকে পোহাতে হয় যোগাযোগে দুর্ভোগ। যাতায়াত ব্যাবস্তা না থাকায় দূর্গম এসব চরের মানুষকে মূল ভূখন্ডের জেলা সদর কিনবা উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগে বালু চর পাড়ি দিতে হয় এখন দুই চাকার মোটরসাইকেলে।
এছাড়া  নৌকায়। টঙ্গীবাড়ি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আরিফুল ইসলাম হালদার বলেন,দিঘীরপাড়ের একটি সেতুর অভাবে মানুষের কত দুর্ভোগ, সেটি আমি নিজের চোখে প্রতিনিয়ত দেখছি।
সেতু নির্মাণের জন্য ইউপি চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বারবার জানিয়েছি। যতদূর জানতে পেরেছি এখানে খুব শিগগিরই একটি সেতু নির্মাণ করা হবে। সেই লক্ষ্যে কাজও চলছে।
তবে তিনি আর ও বলছেন কয়েকটি স্থানে ব্রিজ ও পাকা রাস্তা নির্মাণ সম্ভব হলে তাদের কষ্ট কমে আসবে।
টঙ্গিবাড়ি উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী শাহ মোয়াজ্জেম বলেন,নদীর পশ্চিম পাশে ৪ কিলোমিটারের একটি আরসিসি সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরো খবর