সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫
২৮ পৌষ, ১৪৩১

পরিক্ষামূলক সংস্করণ

সারাদেশ

আতঙ্কে মধুমতি মডেল টাউন বাসিন্দারা

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশঃ ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৭:২২

আতঙ্কে মধুমতি মডেল টাউন বাসিন্দারা

রাজধানীর অদূরে আমিনবাজারের পাশে মধুমতি মডেল টাউনে বসবাসরত হাজারখানের পরিবার চরম আতঙ্কের মাঝে দিন কাটাচ্ছেন। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) একটি চিঠিই এর কারণ। ওই চিঠিতে হাউজিংটির বিদ্যুৎ লাইন ও সংযোগ সড়ক কাটার হুমকি দেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, হাউজিংয়ে বসবাসরত বাসিন্দাদের সঙ্গে কোনপ্রকার আলোচনা না করে কিংবা তাদেরকে পূর্বে কোন নোটিশ না দিয়ে রাজউক একতরফাভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে-যা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন
শুক্রবার এই প্রতিনিধি মধুমতি মডেল টাউন সরেজমিনে পরিদর্শন করে এর বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন। তারা জানান, এখানে প্রায় সাড়ে চার হাজার প্লট মালিক রয়েছেন। অনেকে তাদের জীবনের শেষ সম্বল বিক্রি করে এই সামান্য বাস্তুভিটাটি কিনেছেন। সরকারের ভূমি অফিস প্লটগুলো রেজিস্ট্রেশনও দিয়েছে। তার ভিত্তিতে প্রায় হাজারখানের প্লট মালিক এখানে মাথা গুঁজার ঠাই করে নিয়েছেন। এখানে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড বিদ্যুতের লাইনও দিয়েছে৷ গত প্রায় দুই দশক ধরে বাসিন্দারা নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে আসছেন। রাজউকের এই চিঠি দেখে তাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে।

 

তবে রাজউক সূত্র জানিয়েছে, মধুমতি মডেল টাউনকে অবৈধ করে আদালত ২০১২ সালে যে রায় দিয়েছে সেটা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রায়ে কি ছিল প্রশ্ন করা হলে রাজউকের এক কর্মকর্তা ইত্তেফাককে বলেন, আদালত মধুমতি মডেল টাউনকে অবৈধ বলে যে রায় দিয়েছে তাতে দুটি বিষয় ছিল। প্রথমত, যারা এখানে প্লট কিনেছেন তাদেরকে বিক্রয়কৃত মূল্যের দ্বিগুণ অর্থ ফেরত দেওয়া এবং ওই জায়গার মাটি সরিয়ে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া । তবে মধুমতি মডেল টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, আদালতের রায় অনুযায়ী তারা কেউ ক্ষতিপূরণের অর্থ পাননি। এটি বাস্তবায়ন না করে ‘রাজউক যদি এখানকার বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করে তাহলে আদালতের রায়ের অবমাননা হবে।

মধুমতিতে বসবাসকারী প্লট মালিক মাহবুবুর রহমান জানান, রাজউক এখানে ক্রেতাস্বার্থ দেখছে না। তারা অদৃশ্য শক্তির নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছে। ক্রেতারা যে টাকা দিয়ে প্লট কিনেছেন তার দ্বিগুণ অর্থ ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও রাজউক এ বিষয়টি আমলে আনছে না। আরেক প্লট ক্রেতা এ এফ এম আবদুল আজিজ বলেন, জীবনের শেষ সঞ্চয় দিয়ে আমি প্লট কিনেছি। আমার অধিকার রক্ষা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সে রাষ্ট্র আজ আমার বিপরীতে দাঁড়িয়েছে।

প্লট মালিক নূরুল আমিন বলেন, ৫ আগষ্ট সরকারের পতনের পর আমরা আশা করেছিলাম বৈষম্য দূর হবে। কিন্তু রাজউকের চিঠিতে তা আমার কাছে মনে হচ্ছে না। আমি জনস্বার্থে অবিলম্বে এ ধরনের গণবিরোধী সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার জন্য রাজউকের প্রতি আহবান জানাবো।

গত ১৮ নভেম্বর রাজউকের সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ আবদুল আহাদ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে সংস্থা থেকে বেশকিছু সিদ্ধান্তের কথা জানা যায় ।

এসব সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে, মধুমতি মডেল টাউনের বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়ার জন্য পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের কাছে চিঠি দেওয়া, সংযোগ সড়ক থেকে মধুমতি মডেল টাউনকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরকে চিঠি দেওয়া ইত্যাদি । তবে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে রাজউকের কোন কর্মকর্তা কিছুই বলতে রাজি হননি।

মধুমতি মডেল টাউন বাসিন্দারা জানান, সেখানে তারা পরিবার পরিজন নিয়ে গত ১৫ বছর ধরে বসবাস করছেন। আদালতের রায় অনুযায়ী প্লট ক্রেতারা ক্ষতিপূরণ না পেলে তাদের পথে বসে যাওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।

জানা গেছে, রাজউকের চিঠির প্রেক্ষিতে মধুমতি মডেল টাউনের বাসিন্দারা আজ শনিবার প্রকল্পের ভেতর জরুরি বৈঠক ডেকেছেন। সেখানে তারা পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবেন। এ ব্যাপারে জানতে মধুমতি মডেল টাউন কর্তৃপক্ষের ( ডেভেলপার কোম্পানি) সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি

এ সম্পর্কিত আরো খবর