সাব্বির হোসেন, লালমনিরহাট
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী লালমনিরহাট জেলায় ভয়াবহ গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে লাম্পি স্কিন ডিজিজ (Lumpy Skin Disease)। এই ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে হাজার হাজার গরু ও মহিষ। এর ফলে গবাদিপশু পালনকারী কৃষক ও খামারিদের অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে ব্যাপক।
প্রাণিসম্পদ দপ্তরের মতে, লাম্পি স্কিন ডিজিজ মানুষের ক্ষতিকর না হলেও গবাদিপশুর জন্য ঘাতক। এটি খুব সহজেই এক পশু থেকে অন্য পশুতে ছড়িয়ে পড়ে। রোগটির লক্ষণগুলো হলো— পশুর শরীরে গুটি দেখা দেওয়া, জ্বর, মুখ দিয়ে লালা ঝরা, ক্ষুধা না লাগা, দুর্বলতা এবং ক্ষত হওয়া। অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসা না হলে পশুর মৃত্যুও ঘটে।
খামারিদের অভিযোগ, গত ঈদুল আজহার সময় ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে পশু পাচারের মাধ্যমে এই রোগ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বিশেষ করে পাটগ্রাম উপজেলায় এ রোগ সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে। সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে আক্রান্ত পশুর সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বাড়ছে।
হাতীবান্ধা উপজেলার টংভাঙ্গা ইউনিয়নের বাসিন্দা তপু সিংহ জানান, “আমার ৬ টি গরুর মধ্যে ৪ টি ইতিমধ্যে আক্রান্ত হয়েছে। গরুগুলোর শরীরে ফোলা ও গুটি দেখা যাচ্ছে। চিকিৎসা খরচ বেশি আর ওষুধও পাওয়া যাচ্ছে না ঠিকমতো।”
লালমনিরহাট সদর বড়বাড়ি উপজেলার খামারি মোরশেদ ইসলাম জানান, “আমার ২ টি গরু আক্রান্ত হয়েছে। ১৫ দিন ধরে চিকিৎসা চলছে, কোন উন্নতি নেই। খরচ বেড়ে যাওয়ায় লোকসানের ভয় রয়েছে।”
হাতীবান্ধা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মাহমুদুল হাসান জানান, “আমরা মাঠ পর্যায়ে ক্যাম্পেইন চালু করেছি। আক্রান্ত পশুদের আলাদা রাখা, পরিচর্যা এবং প্রাথমিক চিকিৎসা সংক্রান্ত খামারিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।”
লালমনিরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. জাহাঙ্গির আলম জানান, “লাম্পি স্কিনের ভ্যাক্সিন পরীক্ষামূলক ভাবে কয়েকটি জেলায় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু লালমনিরহাটে এখনো সরকারি ভ্যাক্সিন পৌঁছায়নি। খামারিদের বাজারজাত ভ্যাক্সিন ব্যবহার করতে বলা হচ্ছে। আক্রান্ত হলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে যেতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।”
লাম্পি স্কিন ডিজিজের কারণে খামারি ও কৃষকদের জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে সরকারি পর্যায়ে দ্রুত ভ্যাক্সিন সরবরাহ, চিকিৎসা সাহায্য ও সচেতনতা বৃদ্ধির দাবি জোরালোভাবে উঠছে। অন্যথায় গবাদিপশু খামারের উপর আর্থিক চাপ আরও বাড়তে পারে।