সাব্বির হোসেন, লালমনিরহাট প্রতিনিধি
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে ‘পুশ-ইন’ (জোরপূর্বক সীমান্ত পার করে পাঠানো) নামে পরিচিত কার্যক্রমের তীব্রতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত মে মাসের শুরু থেকে জুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রায় ১,৩০০ জনের বেশি ব্যক্তিকে বাংলাদেশে জোরপূর্বক পাঠানোর ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে।
বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিজিবি), প্রশাসনের উচ্চপদস্থ সূত্র এবং সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট থেকে প্রাপ্ত তথ্য এ চিত্র তুলে ধরে।
পুশ-ইনের আনুমানিক সংখ্যা ৭ মে – ২৮ মে ১,০৫৩ – ১,২০০ জন এবং জুনের প্রথমার্ধে ১০০ – ১৫০ জন। বিভিন্ন সীমান্ত রিপোর্ট, প্রশাসন ও স্থানীয় সংবাদ মতে মে-জুন মোট ১,১৫৩ – ১,৩৫০ জনকে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, সিলেট ও মৌলভীবাজার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের পার করে দেয়া হয়।
বেশিরভাগ বাংলা-ভাষী মুসলিম জনগোষ্ঠী, যাদের ভারতীয় নাগরিকত্ব নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
অন্যান্য নারী ও শিশু উল্লেখযোগ্য সংখ্যক, কিছু ভারতীয় নাগরিক (ভুল চিহ্নিতকরণের অভিযোগ), এবং রোহিঙ্গা শরণার্থী।
ভারতীয় কর্মকর্তারা ‘পুশ-ইন’ বৃদ্ধির জন্য কারণ হিসেবে উল্লেখ করছেন অবৈধ অভিবাসন বাংলাদেশ থেকে ভারতে ব্যাপক অবৈধ অনুপ্রবেশের দীর্ঘস্থায়ী অভিযোগ, আইনি প্রক্রিয়ার জটিলতা অবৈধ অভিবাসীদের আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ ও জটিল বলে দাবি, সীমান্ত নিরাপত্তায়
সন্দেহভাজন অপরাধী বা জঙ্গি কার্যকলাপে জড়িতদের দ্রুত অপসারণের প্রয়োজনীয়তা, রাজনৈতিক চাপ (বিশ্লেষকদের অভিমত) বিশেষ করে আসামের মতো রাজ্যে ‘বিদেশি’ শনাক্তকরণের পর বাংলাদেশকে রাজনৈতিকভাবে চাপে রাখার কৌশল।
বাংলাদেশ ও মানবাধিকার সংস্থার মতে এটি মানবাধিকার লঙ্ঘন বাংলাদেশ সরকার ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো (যেমন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল) ‘পুশ-ইন’-কে গণহারে মানবাধিকার লঙ্ঘন, অবৈধ ও সংবিধানবিরোধী বলে চিহ্নিত করে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
বাংলাদেশের সরকার বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে নিয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সাথে কূটনৈতিক আলোচনা জোরদার করার চেষ্টা করছে, একে মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচনা করে। ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে এই পুশ-ইনের সংখ্যা বা আইনি ভিত্তি প্রকাশ করেনি।
‘পুশ-ইন’ প্রক্রিয়া কেবল অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বা অভিবাসন ইস্যু নয়; এটি দু’দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে নিরপরাধ নাগরিক, নারী, শিশু এবং এমনকি ভারতীয় নাগরিকদের ভুলভাবে ফেরত পাঠানোর ঘটনা আন্তর্জাতিক আইন ও মানবিক মূল্যবোধের প্রতি গুরুতর হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে। বাংলাদেশে জোরপূর্বক প্রেরিত ব্যক্তিদের পুনর্বাসন ও পরিচয় নিশ্চিত করাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ‘পুশ-ইন’-এর এই বৃদ্ধি একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল ও জটিল ইস্যুতে পরিণত হয়েছে, যেখানে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা দাবি এবং মৌলিক মানবাধিকারের সংঘাত স্পষ্ট।
এই ঘটনা শুধু সীমান্ত এলাকার মানুষের জীবনই ব্যাহত করছে না, দুটি প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রেও নতুন বাধার সৃষ্টি করছে। ভারতের আনুষ্ঠানিক জবাব ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতার ফলাফলই নির্ধারণ করবে এই সংকটের ভবিষ্যৎ গতি-প্রকৃতি।