নূরুল আলম কামাল, নেত্রকোনা:
নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলা একটি হাওয়ার বেষ্টিত এলাকা। এ অঞ্চলে রয়েছে খাল বিল নদী নালা ও ছোট বড় অসংখ্য হাওর। চাষাবাদের জমিসহ বিশাল বিশাল পতিত মাঠ রয়েছে। এসব মাঠে প্রাকৃতিক ঘাস খেয়ে স্থানীয় কৃষকদের গরু, মহিষসহ গৃহপালিত পশু বেড়ে ওঠে। ওই পশু হাওরাঞ্চল সহ দেশের আমিষের চাহিদা পূরণে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে।
তবে এসব গবাদি পশু বিক্রির জন্য নেই কোন হাট। ঝুঁকি নিয়ে অন্য উপজেলা ও জেলাতে গবাদি পশু বিক্রির জন্য যেতে হয়। উপজেলাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি এলাকায় পশু বিক্রির হাট স্থাপন।
খালিয়াজুরী কৃষি ও প্রাণী সম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, ২৯ হাজার ৭৬৪ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ উপজেলায় ৬৮ টি গ্রামের ৫৪ ওয়ার্ডের ২০ হাজার ১৯৩ টি পরিবারের মধ্যে প্রায় লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। এর মধ্যে ২৮ হাজার ৫৯৬ হেক্টর জমির মধ্যে ২০ হাজার ২৯৩ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষাবাদ করা হয়।
আর অবশিষ্ট ৮ হাজার ৩০৩ হেক্টর জমির প্রায় অর্ধেক রবিশস্য চাষাবাদ করা হয়। অনাবাদী প্রায় ৪ হাজার হেক্টর পতিত জমিতে গরু, মহিষ সহ গবাদি পশু লালন পালন করা হয়।
উপজেলার যে সব হাওরে গবাদি পশু ঘাসের জন্য উপযোগী। মেন্দিপুর ইউনিয়নের নাওটানা ও চাতলপাড়, পূর্ব জগন্নাথপুর, চাকুয়া ইউনিয়নের চাকুয়া, হারাকান্দি, বল্লী ও শালদিগা, খালিয়াজুরী সদর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর, খালিয়াজুরী, গচিকাই, গাজীপুর ইউনিয়নের গাজীপুর, পাচহাট, নগর ইউনিয়নের নগর, বাঘাটিয়া ও কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর পূর্বা, মুসলিমপুর, কল্যাণপুর ও কুতুবপুর হাওর উল্লেখ যোগ্য।
এসব হাওর গুলোতে পৌষ মাস থেকে বৈশাখ ও জৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত রাখালরা দলবদ্ধভাবে গরু, মহিষ ও অন্যান্য গবাদি পশু লালন পালন করে থাকে। সকাল আটটা থেকে রাখালরা গরু নিয়ে মাঠে চলে যায়। সারাদিন ঘাস খাওয়ানোর পর সন্ধ্যার দিকে বাড়ি ফিরে আসে। এভাবেই চলতে থাকে নিয়মিত রাখালদের গবাদি পশু পালন কাজ।
খালিয়াজুরী উপজেলায় প্রায় ১০ হাজার কৃষক পরিবারের মধ্যে প্রত্যেক পরিবারেই গরু, মহিষ সহ অন্যান্য গবাদি পশু লালন পালন করা হয়। উপজেলায় ৫২ হাজার ২৯৫ গরু, সাড়ে ৩ হাজার ছাগল, ৪ হাজার ২২৫ ভেড়া, ৩৮৫ মহিষ, ২ লাখ ৯৫ হাজার হাঁস, ২ লাখ ২০ হাজার ৫৮৪ মুরগি রয়েছে।
রাখাল সুলাইমান ও মামুন মিয়া বলেন, আমরা গরু পালন করি। কেনাবেচার কোন হাট না থাকায় জেলার বিভিন্ন হাট বাজারে ও সুনামগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে গবাদি পশু কেনাবেচা করতে হয়। এতে করে খুবই কষ্ট হয়। সরকার আমাদের এলাকায় একটা পশুর হাট করে দিলে ভাল হয়।
উপজেলার মেন্দিপুর ইউনিয়নের মোঃ রিপন মিয়া, সবুজ মিয়া, চাকোয়া ইউনিয়নের আবুল কাশেম, খালিয়াজুরী সদর ইউনিয়নের মোহাম্মদ রাসেল মিয়া, গাজীপুর ইউনিয়নের মাসুদ মিয়া, মামুন মিয়া, নগর ইউনিয়নের হারাধন দাস ও কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের আব্দুল জব্বার মিয়া বলেন, আমরা প্রত্যেক কৃষকেই জমি চাষাবাদ, মাছ ও গবাদি পশু লালন পালন করে পরিবারের বছরের খরচ মিটানো হয়।
গবাদি পশু কেনাবেচার কোন হাট নেই। উপজেলার বাহিরে মোহনগঞ্জ উপজেলার আদর্শ নগর, মদন উপজেলার দেওয়ান বাজার, কেন্দুয়া উপজেলার চিরাং সহ অন্যান্য বাজার থেকে গরু বেচাকেনা করতে হয়। এটা এলাকার কৃষকদের জন্য খুবই কষ্টকর।
খালিয়াজুরী উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি ও গাজীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রব স্বাধীন, সাধারন সম্পাদক মাহবুবুর রহমান কেষ্ট ও জামায়াতে ইসলামীর আমির মোঃ ইসমাইল হোসেন জানায়, উপজেলা গবাদি পশু বেচাকেনার হাট খুবই জরুরী। বিক্রির হাট থাকলে কৃষকগণ এলাকায় গরু কেনাবেচা করতে পারবে।
এতে সরকার হাট ইজারার মাধ্যমে রাজস্ব পাবে। এ জন্য তারা ইউএনওর মাধ্যমে গরু বেচাকেনার হাটের অনুমতির জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করা হয়েছে। এলাকা বিবেচনায় গবাদি পশু বিক্রির হাট অনুমোদন দেয়া দরকার।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বলেন, উপজেলা গরু বিক্রির হাট জরুরী প্রয়োজন। গরু কেনাবেচার হাট থাকলে কৃষকের কষ্ট লাগব হবে।
খালিয়াজুরী উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. ভাস্কর তালুকদার জনান, উপজেলায় প্রায় প্রত্যেক কৃষক পরিবারই গবাদি পশু লালন পালন করেন। এগুলো বিক্রির জন্য কোন হাট নেই। উপজেলার সমতল এলাকায় হাট স্থাপন করলে কৃষকদের ভোগান্তি লাগব হতো।
উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ উজ্জল হোসেন বলেন, উপজেলার জনগণের পক্ষ থেকে গরু বিক্রির হাটের জন্য সাংবাদিক মোঃ আবুল কালাম আজাদ আবেদন করেছেন। আবেদনটি ডিসি স্যারের কাছে পাঠিয়েছি।
নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস বলেন, গবাদি পশু বিক্রির জন্য হাট স্থাপনে একটি আবেদন পেয়েছি। তবে হাটের জন্য স্থানীয়দের জমি দান করতে হয়। হাট স্থাপনের জন্য কেহ যদি জায়গা জমি দিতে পারে সেক্ষেত্রে বাজার স্থাপন করা সম্ভব হবে।
এছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কুরবানীর জন্য অস্থায়ী কিছু হাটের ব্যবস্থা করার জন্য। প্রতিবেদন পাওয়ার পরেই হাটগুলো ইজারার ব্যবস্থা করা হবে।

দুই বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ, প্রতিবাদে দুই ভারতীয়কে ধরে এনেছে গ্রামবাসী। এব্যাপারে আপনার মতামত কি?