সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার নলজুড়ী সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কর্তৃক একটি খেলার মাঠ দখলের চেষ্টা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে এই মাঠটি স্থানীয় শিশু-কিশোর ও তরুণদের খেলাধুলার একমাত্র উন্মুক্ত জায়গা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বৃহস্পতিবার (৮ মে) সকালে ঘটনাটি ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সীমান্ত ঘেঁষা খেলার মাঠে একদল বিএসএফ সদস্য এসে লাল পতাকা টাঙানোর চেষ্টা করে। ঘটনাটি দেখতে পেয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং তাদের বাধা দেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় ও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সীমান্ত নির্ধারণ বা জরিপ কার্যক্রমের পূর্বে কোনো রকম পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বিএসএফ মাঠে প্রবেশ করে, যা সীমান্তবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ও ক্ষোভের জন্ম দেয়। তাদের আশঙ্কা, দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত এই খেলার মাঠটি অবৈধভাবে দখলে নেওয়ার একটি পরিকল্পিত প্রচেষ্টা হতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) পক্ষ থেকে জানানো হয়, এটি দুই দেশের সীমান্ত চিহ্নিতকরণ ও ভূমি জরিপ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বিএসএফের উপস্থিতি ছিল। স্থানীয়দের ভুল বোঝাবুঝির কারণে পরিস্থিতি কিছুটা উত্তপ্ত হলেও তাৎক্ষণিকভাবে বিজিবির টহল দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে উভয় পক্ষকে শান্ত করে এবং বিএসএফকে পর্যাপ্ত সমন্বয়ের পরই পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনার অনুরোধ জানায়।
বিজিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন,
“বিএসএফের আগমন ছিল সীমান্ত জরিপসংক্রান্ত। স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের উপস্থিতি ভুলভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তবে আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি এবং সীমান্তবাসীর নিরাপত্তা ও স্বার্থ নিশ্চিত করতে সজাগ রয়েছি।”
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ও জনপ্রতিনিধিরা জানান, সীমান্তবর্তী এই জনপদে ইতোমধ্যেই একাধিকবার বিএসএফের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তারা চান, যেকোনো ধরনের সীমান্ত কার্যক্রমের আগে স্থানীয় প্রশাসন ও জনগণের সঙ্গে আলোচনা করে তবেই পদক্ষেপ নেওয়া হোক।
উল্লেখ্য, গোয়াইনঘাটের নলজুড়ী এলাকা বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত অঞ্চলের একটি স্পর্শকাতর এলাকা। সীমান্তের দুই পাশেই বসবাসরত মানুষদের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকলেও মাঝে মাঝে ভুল বোঝাবুঝি থেকে এই ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
সাম্প্রতিক এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সীমান্তে নতুন করে উত্তেজনা না তৈরি হয়, সে বিষয়ে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে কূটনৈতিক ও যৌথ পর্যবেক্ষণ জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা। বর্তমানে গোটা এলাকায় বিজিবির তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে এবং পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানানো হয়।

দুই বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ, প্রতিবাদে দুই ভারতীয়কে ধরে এনেছে গ্রামবাসী। এব্যাপারে আপনার মতামত কি?