সাব্বির হোসেন, লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ
দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত-পাকিস্তানের সাম্প্রতিক উত্তেজনা ও যুদ্ধাবস্থার প্রভাবে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে অস্থিরতার ছায়া নেমে এসেছে।
বিশেষ করে লালমনিরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁর সীমান্তে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) এবং ভারতীয় বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ)-এর টহল ও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এতে সীমান্তে স্বাভাবিক জনজীবন, কৃষিকাজ ও বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডে বিঘ্ন ঘটছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
যুদ্ধের আশঙ্কায় ভারত তার পূর্ব সীমান্তে কঠোর নজরদারি চালাচ্ছে। বিজিবি ও বিএসএফের যৌথ টহল বৃদ্ধি পাওয়ায় সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে রাতের চলাচল সীমিত করা হয়েছে।
গত সপ্তাহে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় দুই দেশের নাগরিকদের ভুলবশত সীমান্ত পার হওয়া ও আটকের কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। পরে বিজিবি-বিএসএফের জটিলতা নিরসন বৈঠকের মাধ্যমে এসব মামলা সমাধান করা হয়েছে।
স্থানীয় কৃষক আব্দুর রহিম (৫২) বলেন, “সীমান্তে সেন্সরের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় জমিতে কাজ করতে গিয়েও ভয় লাগছে।”
সীমান্তে নিরাপত্তা বেষ্টনী টানার ফলে কৃষিজমিতে শ্রমিকদের যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনে সমস্যা দেখা দিয়েছে। এছাড়া, ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে অস্থায়ী বাণিজ্য স্থগিত হওয়ার শঙ্কায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন।
পাটগ্রামের শুক্লাবাড়ী স্থলবন্দরে মসলা ও কৃষিপণ্য রপ্তানির উপর নির্ভরশীল ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, “২০১৯ সালের উত্তেজনার সময় বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এবারও তাই হলে ক্ষতির মুখে পড়ব আমরা”।
২০১৫ সালের ছিটমহল বিনিময়ের পর সীমান্তের অধিকাংশ বিরোধ নিষ্পত্তি হলেও দহগ্রাম-আঙ্গোরপোতা ইউনিয়নের মতো কিছু এলাকায় যোগাযোগের অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।
যুদ্ধ পরিস্থিতিতে এসব অঞ্চলে নতুন করে সীমান্ত বিতর্ক ও চলাচলে বাধার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা সেলিনা আক্তার বলেন, “বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে বা হাসপাতালে যেতে গেলেও সীমান্তের চেকপোস্টে সময় নষ্ট হয়”।
বিশ্লেষকদের মতে, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ সরাসরি বাংলাদেশে সামরিক সংঘর্ষের কারণ না হলেও এর পার্শ্বপ্রতিকূল হিসেবে জ্বালানি ও পণ্য সরবরাহে বিঘ্ন, মুদ্রার অস্থিরতা এবং বিনিয়োগ হ্রাসের আশঙ্কা রয়েছে।
গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ারের তথ্যমতে, ভারতের সামরিক ব্যয় পাকিস্তানের তুলনায় ৯ গুণ বেশি হওয়ায় যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে আঞ্চলিক অর্থনীতিতে এর প্রভাব গভীর হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. নাইজেল গ্রিনের মতে, “দক্ষিণ এশিয়ায় যুদ্ধের প্রভাব শুধু সীমান্তেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বৈশ্বিক বাণিজ্য ও জ্বালানি বাজারে এর ঢেউ লাগবে” ।
অন্যদিকে, স্ট্র্যাটেজিক সেন্টারের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ১০০ জনের বেশি সৈন্য হতাহত হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার ঝুঁকি ১৯%।
সীমান্তবর্তী জনগোষ্ঠী আশা করছেন, উভয় দেশ যুক্তিসঙ্গতভাবে সংঘাত নিরসনে এগিয়ে আসবে। লালমনিরহাটের ব্যবসায়ী মহল বলেন, “আমরা শান্তি চাই। সীমান্তে টানাপোড়েন বাড়লে আমাদের জীবন অচল হয়ে যাবে।”
ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার মধ্যেও বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় রয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
তবে যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে এর বহুমুখী প্রভাব মোকাবিলায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমন্বিত পদক্ষেপের তাগিদ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

দুই বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ, প্রতিবাদে দুই ভারতীয়কে ধরে এনেছে গ্রামবাসী। এব্যাপারে আপনার মতামত কি?