পিরোজপুর প্রতিনিধি:
অনেকেই নাম শুনেছে অধবা স্বচক্ষে দেখেছেন থাইল্যান্ড বা কেরালার ফ্লোটিং মার্কেট যেখানে সবকিছু বিক্রি হয় পানির উপরে ভাসমান নৌকায়। এরকমের একটি বাজার রয়েছে বাংলাদেশে।
যেখানে চা – পান থেকে শুরু করে, চাল, সবজিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সব কিছুই বিক্রি হয় এ ভাসমান বাজারে। এই মনোরম দৃশ্য দেখা যায় দক্ষিণের জেলা পিরোজপুরের ‘ বৈঠাকাটা ভাসমান বাজারে।’
ভৌগোলিকভাবে পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার পুরোটাই নদী আর খালবেষ্টিত। পানির উপর ভাসমানভাবে সবজি ও সবজির চারা উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত এই এলাকা। কৃষকের উৎপাদিত সবজি ও বিভিন্ন কৃষিজ পণ্য কেনাবেচার জন্য পাকিস্তান আমলে বৈঠাকাটা বাজারের সূত্রপাত।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অপূর্ব এই ভাসমান বাজারটি তিন জেলার (পিরোজপুর, বরিশাল ও গোপালগঞ্জ) সংযোগস্থলে নাজিরপুর উপজেলা সদর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে বেলুয়া নদীতে অবস্থিত। বৈঠাকাটা বাজার ও বেলুয়া মুগারঝোর গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে এই নদী।
এই নদীতে প্রায় ৭০ বছর ধরে ভাসমান তরমুজের হাট বসছে। মার্চ থেকে শুরু করে এপ্রিল পর্যন্ত চলে এ বেচাকেনা।
ঢাকা, খুলনা, যশোর, নরসিংদী, উত্তরাঞ্চল, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের বড় বড় ব্যবসায়ী এই হাটে তরমুজ কিনতে আসেন। স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা তাঁদের কাছে তরমুজ বিক্রি করে ভালো দাম পান।
এই ভাসমান বাজারটি সপ্তাহের শনিবার ও মঙ্গলবার বসে। আগের রাত থেকেই খাল বেয়ে চিতলমারী, মোড়েলগঞ্জ, টুঙ্গিপাড়াসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলার কৃষকরা ডিঙি নৌকা বা ট্রলারে করে ভিড়তে থাকেন নাজিরপুরে।
সকাল সাড়ে ৫টার মধ্যেই সরগরম হয়ে ওঠে বাজার। অন্যান্য বাজারের মতো এখানে ক্রেতা-বিক্রেতারা কেউই পায়ে হেঁটে বা গাড়িতে আসেন না এই বাজারে। সবাই আসেন নৌকা বা ট্রলারে করে। স্বাভাবিক সময়ে ভোর থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলে হাট।
সরেজমিন দেখা গেছে, বেলুয়া নদীতে ভাসমান বাজারে বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০-৫০টি ট্রলার বোঝাই করে হাটে তরমুজ নিয়ে এসেছে ব্যবসায়ীরা। পটুয়াখালী, চরফ্যাশন, বরগুনার ট্রলার বেশি। অনেক ব্যবসায়ী আবার ট্রলার পাঠিয়ে শ্রমিকদের মাধ্যমে বিক্রি করায় তরমুজ।
দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ব্যবসায়ীরা ট্রলারে উঠে দরদাম করছেন। ক্রেতা-বিক্রেতার হাকডাকে সরব তরমুজের হাট। দামে বনিবনা হলে ট্রলার থেকে তরমুজ কিনে আরেক ট্রলারে তোলা হয়।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও ট্রলার থেকে তরমুজ কিনে ছোট নৌকায় তুলছেন। কোটি কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি হয় ভাসমান বাজারে ।
খুলনার কয়রা উপজেলা থেকে তরমুজের খেত কিনে পাইকারী ধরে ভাসমান বাজারে তরমুজ বিক্রি করতে আসা ষাটোর্ধ বৃদ্ধ মোতাহার আলী দেশ টিভিকে বলেন, উপকূলীয় জেলাগুলোর চরাঞ্চলে প্রচুর তরমুজ উৎপাদন হয়। তরমুজ সচারাচর বেচাকেনা হয় খেত হিসেবে।
প্রতি বিঘা খেতের দাম পড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা শুরু করে ১২-২০ লাখ টাকা পর্যন্ত। এরপর খেত থেকে তরমুজ কেটে পাইকারী বাজারে বিক্রয় করা হয়।
পাইকারি বাজারে শত (১০০টি) হিসেবে তরমুজ বিক্রয় করা হয়। তিনি আরও বলেন, এবছর ৫ কোটি টাকা বিক্রি করেছি এ পর্যন্ত আরো খেত বাকি আছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবারে উৎপাদন ও ব্যবসা ভালো হচ্ছে।
বৈঠাকাটা বাজারের পাইকারী ব্যবসায়ী মো. আলমগীর হোসেন দেশ টিভিকে জানান, ভোলার চরফ্যাশন, পটুয়াখালী, বরগুনার বিভিন্ন চরে আবাদ করা তরমুজের খেত কেনেন ব্যবসায়ীরা। এরপর খেত থেকে পাকা তরমুজ ট্রলারে করে বৈঠাকাটাসহ বিভিন্ন বাজারে নিয়ে বিক্রি করা হয়।
বড় আকারের ১০০টি তরমুজের পাইকারি মূল্য ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার। মাঝারি আকারের তরমুজ ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা। ছোট তরমুজ আকার ভেদে ৫ থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।
এই হাট থেকে তরমুজ কিনে নিয়ে যান পার্শবর্তী নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠি) উপজেলার ব্যবসায়ী ওমর আলী। তিনি জানান, প্রতি হাটে কয়েক কোটি টাকার তরমুজ কেনাবেচা হয় এখানে।
আমিও এবছর এই বাজার থেকে তরমুজ কিনে বিভিন্ন বাজারে পাইকারী বিক্রি করেছি যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ৫ কোটি টাকা।
বৈঠাকাটা বাজার কমিটির কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাজারটি একশত বছরের পুরানো। এ বাজারে বিভিন্ন জায়গা থেকে কাচাঁমাল ট্রালারযোগে আসে ট্রলারেই হাট বসে। প্রতি বছরের নেয় এবারও তরমুজের বাজার জমজমাট।
তরমুজ শেষের দিকে হলেও বাজারে এখনো শুরুর মত ট্রলারে তরমুজ আসে। এই ভাসমান বাজারে তুলনামূলক খাজনা কম হওয়ায় ব্যবসায়ীরা বেচাকেনায় স্বাচ্ছন্দবোধ করে।।

দুই বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ, প্রতিবাদে দুই ভারতীয়কে ধরে এনেছে গ্রামবাসী। এব্যাপারে আপনার মতামত কি?