সাব্বির হোসেন, লালমনিরহাট প্রতিনিধি
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহত হাসিবুল ইসলাম (২৫) এর লাশ ফেরত পেয়েছে তার পরিবার। গত বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) রাত ১১টার পর বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের খারিজা জোংড়া এলাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে লাশ হস্তান্তর করা হয়। বিএসএফের গুলি ও নির্যাতনের শিকার হাসিবুলের মৃত্যুতে সীমান্তজুড়ে তৈরি হয়েছে শোকের আবহ।
গত বুধবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে হাতীবান্ধা উপজেলার সিঙ্গিমারী ইউনিয়নের সীমান্তসংলগ্ন এলাকায় ঘাস কাটতে যান হাসিবুল ইসলাম। এ সময় ভারতের ১৫৭ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। গুলিবিদ্ধ হাসিবুলকে টেনেহিঁচড়ে ভারতের অভ্যন্তরে নিয়ে যাওয়া হয়।
প্রথমে শীতলকুচি থানার স্থানীয় হাসপাতালে এবং পরে কোচবিহারের এমজেএন মেডিকেলে নিলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যায় তার মৃত্যু হয়। পরদিন রাত ১১টার দিকে বাংলাদেশের বিজিবি ও পুলিশের কাছে লাশ হস্তান্তর করে বিএসএফ ও ভারতীয় পুলিশ।
সীমান্তের ৮৮১ নম্বর প্রধান পিলার ও ১৩ নম্বর উপপিলার সংলগ্ন খারিজা জোংড়া এলাকায় উভয় দেশের নিরাপত্তা বাহিনী ও প্রশাসনের উপস্থিতিতে লাশ ফেরত দেওয়া হয়। ভারতীয় পক্ষ থেকে ১৫৭ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের কমান্ডার রাজ কুমার, শীতলকুচি থানার ওসি এবং বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিজিবি সুবেদার রেজাউল ইসলাম,
পাটগ্রাম থানার এসআই তাজরুল ইসলামস্বর্ হাসিবুলের বাবা জাহিদুল ইসলাম ও চাচা রশিদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। রাত সাড়ে ১১টায় হাসিবুলের দেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে স্ত্রী, মা-বাবা ও আত্মীয়দের করুণ কান্নায় মুখরিত হয়ে ওঠে এলাকা। রাত ১টার দিকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়।
হাসিবুলের বাবা জাহিদুল ইসলাম জানান, “গুলির পর বিএসএফ সদস্যরা আমার ছেলেকে লাঠি ও রাইফেলের বাট দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। ওরা তাকে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয়।” তিনি সরকারের কাছে বিচার দাবি করে বলেন, “সীমান্তে ঘাস কাটতে গিয়েই কি আমার ছেলের অপরাধ ছিল?”
পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি আশরাফুজ্জামান সরকার জানান, আইনি প্রক্রিয়া শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে বিজিবি কর্মকর্তারা ঘটনায় কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। হাতীবান্ধা-পাটগ্রাম উন্নয়ন ফোরামের চেয়ারম্যান ও জামায়াতে ইসলামীর সংসদ সদস্য প্রার্থী আনোয়ারুল ইসলাম রাজু নিহতের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা ও সমবেদনা জানান।
গত এক দশকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে শতাধিক বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। হাসিবুলের মৃত্যু পুনরায় প্রশ্ন তুলেছে সীমান্ত রক্ষায় বলপ্রয়োগের নীতির যথার্থতা নিয়ে। স্থানীয়রা জানান, ফসলি জমি ও গবাদিপশুর খাদ্যের সন্ধানে অনেকেই অনিচ্ছাকৃতভাবে সীমান্ত অতিক্রম করেন, যা মৃত্যুঝুঁকি বাড়াচ্ছে।

দুই বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ, প্রতিবাদে দুই ভারতীয়কে ধরে এনেছে গ্রামবাসী। এব্যাপারে আপনার মতামত কি?