আব্দুল্লাহ আল মামুন ,টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধিঃ
টাঙ্গাইলে সংরক্ষিত শাল গজারি ও সামাজিক বনায়ন ঘেষা অবৈধ করাত কল স্থাপন করা হয়েছে।এছাড়াও বন কর্মকর্তাদের কার্যালয়ের ১০০ গজের মধ্যেও করাত কল রয়েছে। অবৈধ করাতকলগুলো দেদারছে বনের কাঠ চেরাই করছে। এতে ধ্বংস হচ্ছে সংরক্ষিত সামাজিক বনায়ন।
জেলায় ৪৭৬টি অবৈধ করাত কল,১৬৩ টি বৈধ এবং বৈধ লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছে ৮টি। এছাড়া ৪৭০ টি অবৈধ করাত কল উচ্ছেদ করার জন্য প্রস্তাব রয়েছে জেলা প্রশাসনে।
টাঙ্গাইলের বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলায় ৫৮টি, কালিহাতী ৬৪, ঘাটাইল ৪৫, ভুয়াপুর ৪৫, মধুপুর ১৮, গোপালপুর ২৯, ধনবাড়ি ২৩, সখিপুর ১৭, বাসাইল ২৬, নাগরপুর ৪০, দেলদুয়ার ৩২ ও মিজাপুরে ৭৩টি অবৈধ করাত কল রয়েছে।
এছাড়া বৈধ করাত কল রয়েছে সদর উপজেলায় ১১টি,কালিহাতীতে ৮, ঘাটাইল ১০,ভুয়াপুর ০১, মধুপুর ১৮, গোপালপুর ১১,ধনবাড়ি ২২, সখিপুর ৫৭,বাসাইল ৬, নাগরপুর ১২, দেলদুয়ার ৬ এবং মিজাপুরে ১টি রয়েছে ।
জানা যায় করাত কলের বিধিমালায় রয়েছে ২০১২ অনুযায়ী সংরক্ষিত ও রক্ষিত সরকারি যেকোনো ধরনের বনভূমির সীমানা থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটারের মধ্যে যে কোন ধরনের করাকল স্থাপন করা যাবে না
মধুপুরের আকমাল বলেন যে একবার করাত কল স্থাপন করেছে সেটা বৈধ হোক আর অবৈধ হোক সেই করার কল উচ্ছেদ করা বড়ই হিমশিম খেতে হয়। তিনি আরো বলেন এই বনায়ন অঞ্চলে যে কোন ধরনের স্থাপনা সেটি জমি হোক আর বাগান হোক একবার দখলে নিতে পারলে সেটি তার কাছ থেকে উচ্ছেদ করা বড়ই কষ্ট।
তাই এই বনায়ন অঞ্চলে কোন ধরনের সুবিধা এখানকার বাসিন্দাদের দেওয়া উচিত না। তারা একবার সীমানায় বসতে পারলে সেখান থেকে আর উঠতে চায় না। স্থানীয়রা মনে করেন কলা কৌশলে একবার দখলে যেতে পারলেই আর সেই স্থাপনা ব্যক্তি মালিকানা হয়ে গেল।
মধুপুরের আলোকদিয়া গ্রামের হাভেল মিয়া বলেন, বন বিভাগের আওতায় আলোকদিয়া, মহিষমারা, অরণখোলা, বেরিবাইধ ও আউসনারা গ্রামে অনেকগুলো করাত কল রয়েছে। সেগুলো জানিনা বৈধ কিনা। তবে বৈধ হলেও কিভাবে এই বনের আওতায় করাত কল স্থাপন করতে পারে। এটি কি প্রশাসনের গাফিলতি বলে মনে হয় না।
স্থানীয় শফিকুজ্জামান বলেন, অবৈধ করাত কলের মালিকরা বেশিরভাগই কাঠ ব্যবসায়ী হয়ে থাকে ।তাই যারা বনের গাছ চুরি করে তাদের মধ্যে একটা সঙ্গবদ্ধ কাজ করে। তিনি বলেন এই করাত কল বছরের পর বছর বৈধভাবে টাকার বিনিময়ে চলে থাকে।
বনের গাছ নিধনের জন্য করাত কলই যথেষ্ট। তিনি আরো মনে রলেন বন কর্মকর্তারা কঠোর হলে কখনোই অবৈধ করাত কল চালাতে পারেব না। তাছাড়া চুরি করা গাছ সহজেই পাচার করতে পারে না। যদি এ সমস্ত অবৈধ করাত কল না থাকতো।
সখিপুরের আব্দুল হামিদ বলেন উপজেলায় যতগুলো বরাত কল রয়েছে বেশিরভাগ করাত কল অবৈধ এবং কি এই করাত কলগুলো বিট অফিসের সাথেই স্থাপনা। তাহলে এই করাত কলগুলো কিভাবে স্থাপন করতে পারে সে প্রশ্ন থেকে যায়। তিনি আরো বলেন বৈধ অবৈধ বুঝিনা শুধু বুঝি বনের ঘেষা যে সমস্ত করাত কল রয়েছে সেগুলোর উদ্দেশ্য ভালো না।
একদিকে স্থানীয়রা বনের গাছ চুরি করে সহজেই চেরাই করতে পারে বলে মনে করেন তিনি। এছাড়া তিনি বলেন বনের গাছ বাঁচাতে হলে দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের বন বিভাগীয় কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, আমরা সব অবৈধ করাত কল গুলো উচ্ছেদ করার জন্য দ্রুত কাজ করছি। এতে নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযান চলছে এবং এটি অব্যাহত থাকবে।
তিনি জানান জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় আমাদের উচ্ছেদ অভিযান করতে হয়। বন বিভাগের লোকবল কম থাকায় অনেক কাজই করতেই আমাদের হেমশিম খেতে হয়।
এছাড়া তিনি আরো বলেন আশা করছি আমাদের জেলা প্রশাসক এবং সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহ ভূমি কর্মকর্তাদের সার্বিক সহযোগিতায় আমরা সকল অবৈধ করাত কল গুলো উচ্ছেদ করবো।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সাবিক) আব্দুল্যাহ আল মামুন বলেন জেলায় যতগুলো অবৈধ করাত কল রয়েছে প্রত্যেকটি করাত কল পর্যায়ক্রমে উচ্ছেদ করা হবে। বিশেষ করে সামাজিক বনায়ন অঞ্চলে যে সমস্ত করাত কল রয়েছে সে সমস্ত করাত কল অতি দ্রুত আইননুগত ব্যবস্থা। তিনি আরো জানান করাত কল উচ্ছেদ অভিযান এটি চলমান প্রক্রিয়া।

এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব বলে কি আপনি মনে করেন?