গত জুলাই ও আগস্ট’র গণঅভ্যুত্থানে পটুয়াখালীর শহীদদের নিহতের তালিকার ১৫ নম্বরের শহীদ রাব্বি মাতব্বর (১৪)। গণঅভ্যুত্থানে ঢাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত মাদ্রাসা ছাত্র শহীদ রাব্বি মাতব্বরের মৃতদেহ ৯ মাস পর পটুয়াখালীর গলাচিপায় পারিবারিক গোরস্থানে পুনরায় দাফন করা হয়েছে।
গত সোমবার (১৪ এপ্রিল) ভোররাতে রাব্বির মরদেহ তার নিজবাড়ি পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের বাঁশবাড়িয়া ৮ নম্বর ওয়ার্ডের চৌরাস্তা এলাকায় এসে পৌঁছে। পরে বেলা সাড়ে ১১ টায় বাড়ি সংলগ্ন মাঠে জানাজার নামাজ শেষে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়।
এর আগে ২০ জুলাই ঢাকা মিরপুর সরকারি শিশু করস্থানে দাফন করা হয়েছিল। ৫ আগষ্টের পটপরিবর্তনের পরে এ রাব্বি হত্যার ঘটনায় মামলার পাশাপশি শহীদ রাব্বির মৃতদেহ নিজ জেলা পটুয়াখালীতে নেয়ার জন্য জুয়েল মাতব্বর আদালতে আবেদন করেন। আদালতের নির্দেশে নির্বাহী ম্যাজিষ্টেটের উপস্থিতিতে গত ১০ জুলাই শহীদ রাব্বির মৃতদেহ মিরপুর গোরস্তানের কবর থেকে উঠিয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়। গত রবিবার (১৩ এপ্রিল) হাসপাতালের হিমাগার থেকে রাব্বির মৃতদেহ মর্গে পোর্স্টমর্টেমসহ ডিএনএর নমুনা সংগ্রহ করা হয় এবং রাতে শহীদ রাব্বির মৃতদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সেদিন রাতেই রাব্বির মরদেহ নিয়ে স্বজনরা পটুয়াখালীর গলাচিপার নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
শহীদ রাব্বি হত্যাকান্ডের ঘটনার পরিবারের পক্ষ থেকে ঢাকার কাফরুল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় হুকুমদাতা হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সহ ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ২০০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে জানিয়েছেন হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাফরুল থানার এসআই বাসার।
‘রাব্বির ইচ্ছা ছিলো সনামধন্য হাফেজ হওয়া। সেই আশা আর পূরণ হয় নাই। আমার বাবার সব স্বপ্ন ফ্যাসিস্ট হাসিনার পুলিশের গুলিতে মুহূর্তেই শ্যাষ কইরা দিছে।’ কথাগুলো বলছিলেন ঘৃণা ও ক্ষোভ নিয়ে ১৯ জুুলাই মিরপুর পুলিশের গুলিতে নিহত শহিদ হাফেজ রাব্বির (১৪) বাবা জুয়েল মাতব্বর।
শহীদ রাব্বির বাবা জুয়েল মাতব্বর জানান, ১৯ জুলাই শক্রবার বিকেলে মিরপুর ১৩ এর ৯ নম্বর রোড ঢাকা মডেল কলেজের সামনে হত্যাকান্ডের ঘটনার হুকুম দাতা হাসিনার পদত্যাগের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন চলছিল রাব্বিসহ মাদরাসার কিছু ছাত্র সেখানে উপস্থিত হয়। ওই মিছিল ঠেকাতে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে হত্যাকান্ডের ঘটনার হুকুম দাতা হাসিনার পুলিশ বাহিনী মিছিলের ওপর এলোপাথারি গুলি চালায়।
এসময় অন্য ছাত্রদের সাথে রাব্বিও দৌড়ে পালিয়ে গিয়ে রাস্তার পাশে একটি ভ্যান গাড়ির নীচে আশ্রয় নেয়। পুলিশের একটি গুলি আমার কলিজার টুকরা হাফেজ রাব্বির পেটে গুলি লাগে এবং মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে রাব্বির লাশ ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্ঠা করে কিন্তু জনতার প্রতিবাদে সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। স্থানীয় জনগণ রাব্বির মৃতদেহ স্থানীয় আজমল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ওই দিন রাতেই তিনি তার ছেলের লাশ নিজ বাড়ি পটুয়াখালীর গলাচিপায় নিয়ে আসতে চাইলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা বাধা দেয় এবং উল্টো তাকে হুমকি দেয়। ছেলে কেন মিছিলে গেল এ জন্য তার বিরুদ্ধে মামলা হবে বলে ভয়ভীতি দেখায়। পরবর্তীতে বাধ্য হয়ে তিনি তার ছেলের লাশ ঢাকায় মিরপুর গোরস্থানে দাফন করেন।
তিনি আরো বলেন, সরকারি করস্থানে কয়েকদিন পর আর কবরের চিহ্ন পাওয়া যাবে না। তাই আদালতের নির্দেশে আমার গ্রামের বাড়ির পারিবারিক গোরস্থানে দ্বিতীয়বার দাফন করা হয়।
তার তিনছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে ছোট ছেলে রাব্বি মাতব্বর। মিরপুরের তা’লীমুল ইসলাম মাদরাসার হাফেজির ছাত্র থাকা অবস্থায় ১০ পারা কোরান মুখস্থ করেছিল।
গলাচিপা থানার অফিসার ইনচার্জ আশাদুর রহমান বলেন, রাব্বির লাশ ঢাকার মিরপুর থেকে উত্তোলণ করার পরই আমাদের থানায় অবহিত করা হয় । এর পর লাশ দাফন সম্পন্ন করা পর্যন্ত আমরা পর্যবেক্ষণে ছিলাম।
গলাচিপা উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. নাসিম রেজা বলেন, অফিসিয়ালভাবে অবহিত না থাকলেও আমরা বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত ছিলাম।

এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব বলে কি আপনি মনে করেন?