সাব্বির হোসেন, লালমনিরহাট প্রতিনিধি
পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের প্রাক্কালে লালমনিরহাট জেলার বাজারগুলোতে জমজমাট পরিবেশ। জেলার ৫ উপজেলা (সদর, আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা, পাটগ্রাম) ও ২ পৌরসভার ৪৫টি ইউনিয়নের হাটবাজারগুলো সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতায় মুখরিত। তবে উৎসবের রঙিন আয়োজনের নিচে লুকিয়ে আছে কৃষকদের আর্থিক সংকট ও দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি নিয়ে সাধারণ মানুষের দীর্ঘশ্বাস।
কৃষকের হাতে টাকার খরা, বাজারে কেনাকাটার জোয়ার, জেলার ৮৫% মানুষ কৃষিনির্ভর। বর্তমানে মাঠে ভুট্টা, ধান, বাদাম ইত্যাদির আবাদ চলমান আলু, সবজিসহ নানা ফসল বিক্রয় যোগ্য হলেও দাম কমে যাওয়ায় কৃষকরা ন্যায্য মুনাফা পাচ্ছেন না। পানি ও কীটনাশকের খরচ চালাতেই হিমশিম খাচ্ছেন অনেকে। এ অবস্থায় ঈদের বাড়তি ব্যয় বহুলাংশেই তাদের নাগালের বাইরে। স্থানীয় দোকানদারদের মতে, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার ক্রেতাসংখ্যা কম, কেনার ক্ষমতাও সীমিত। তবুও বাজারগুলোতে ঈদের আমেজ জমেছে ভিন্ন মাত্রায়।
সদর শহরের পুরান বাজার, পৌর শপিং কমপ্লেক্সসহ প্রধান বাণিজ্যিক এলাকাগুলোতে ভিড় চোখে পড়ার মতো। গার্মেন্টস, কাপড়, জুতা ও সেলাই কেন্দ্রে লেগেছে ক্রেতাদের ঢল। মেসার্স নরসিংদী বস্ত্রালয়ের বিক্রেতা তহুল ইসলাম জানান, “চাহিদামাফিক পণ্য আনার কারণে বিক্রি ভালো হচ্ছে। সকাল থেকেই ভিড় বাড়ছে।”
অন্যদিকে, কাজী ফ্যাশনের কর্মীরা বলছেন, সন্ধ্যার পর থেকেই দোকানগুলোতে ভিড় জমে বেশি। সুতি কাপড়ের আধুনিক ডিজাইনের শার্ট-প্যান্টের চাহিদা তুঙ্গে।
তবে ক্রেতাদের কণ্ঠে কিছুটা ক্ষোভ। পৌর শপিং কমপ্লেক্সে পরিবারসহ কেনাকাটা করতে আসা হাফিজ উদ্দিনের ভাষ্য, “শিশুদের জামা থেকে বড়দের শাড়ি-পাঞ্জাবি—সবই গতবারের চেয়ে দামি। দৈনন্দিন পণ্যের দাম বাড়ায় ঈদের খরচ চালাতে কষ্ট হচ্ছে।”
জেলা প্রশাসন ও পুলিশের নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সদর থানার ওসি মোহাম্মদ নুরনবী জানান, “শপিং এলাকায় সার্বক্ষণিক টহল ও সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করা হচ্ছে।” এছাড়া, মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ভেজাল ও মূল্য তদারকি করছে জেলা প্রশাসনের টিম।
স্থানীয় টেইলার্সগুলোতেও ঈদের হিম্মত। মীম টেইলার্সের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ মিটু মিয়া বলেন, “আধুনিক ডিজাইনের পোশাকের চাহিদা বাড়ায় অর্ডার বেড়েছে। তবে শ্রমিকদের মজুরি বাড়েনি।”
কৃষকের মাঠে ফসলের নিশ্চুপ প্রতীক্ষা আর বাজারের চকচকে উৎসব—দুই চিত্রের মিশেলে এবারের ঈদ লালমনিরহাটবাসীর জন্য নিয়ে এসেছে মিশ্র অনুভূতি। তবে ব্যবসায়ীদের আশা, শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায় জমবে আরও রেকর্ড বিক্রির হাটটা।

এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব বলে কি আপনি মনে করেন?