সাব্বির হোসেন, লালমনিরহাট প্রতিনিধি
লালমনিরহাট জেলার মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিমঞ্চে স্থাপিত ঐতিহাসিক ম্যুরালটি কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়ায় তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এবং সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক)। গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে ম্যুরালটি আবারও ঢেকে রাখা হয়, যা ইতোমধ্যে সমাজের বিভিন্ন স্তরে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এ ঘটনাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি অবমাননা বলে উল্লেখ করেছেন প্রতিবাদকারীরা।
জানা গেছে, ২৬ মার্চ সকালে সনাকের সদস্যরা শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়ার জন্য স্মৃতিমঞ্চে গেলে কাপড়ে ঢাকা ম্যুরাল দেখে প্রতিবাদে ফিরে আসেন। এর আগে গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসেও একইভাবে ম্যুরালটি ঢাকা হয়েছিল। এই ম্যুরালে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, মুজিবনগর সরকার গঠন, গণহত্যা, বীরশ্রেষ্ঠদের ত্যাগ ও পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মতো ঐতিহাসিক ঘটনাগুলোর শিল্পিত উপস্থাপনা রয়েছে।
সনাকের লালমনিরহাট শাখার সহসভাপতি সুপেন্দ্রনাথ দত্ত বলেন, “মুক্তিযোদ্ধাদের রক্ত ও ত্যাগের ইতিহাস ঢেকে দেওয়া মানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অস্বীকার করা। এটি জাতির জন্য অপমানজনক।”
জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুফী মোহাম্মদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “যদি ম্যুরালটি অপ্রাসঙ্গিক হয়, তবে ভেঙে ফেলুন। বিশেষ দিনে সার্কাস করে তা ঢেকে রাখার অর্থ কী?”
বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন (অব.) আজিজুল ইসলাম বীরপ্রতীক বলেন, “এ ম্যুরাল আমাদের ইতিহাসের ধারাবাহিকতা। একে আড়াল করা আমাদের স্বাধীনতার মূল্যবোধকে ক্ষুণ্ন করে।”
জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার সাংবাদিকদের জানান, “স্থানীয় পর্যায়ে অনেকের আপত্তি এবং জুলাই বিপ্লবের চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্যহীনতার কারণে ম্যুরালটি সাময়িকভাবে ঢেকে রাখা হয়েছে।” তবে তিনি কাদের আপত্তি বা কোন নির্দিষ্ট চেতনার কথা বলছেন, তা স্পষ্ট করেননি।
ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে। নাগরিক সমাজ ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণে কাজ করা সংগঠনগুলো জেলা প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের নিন্দা ও তাৎক্ষণিকভাবে ম্যুরাল উন্মুক্ত করার দাবি জানিয়েছে। অনেকের মতে, মুক্তিযুদ্ধের স্মারকগুলো ঐতিহাসিক সত্যের প্রতীক; সেগুলোকে রাজনৈতিক বিবেচনায় আড়াল করা উচিত নয়।

এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব বলে কি আপনি মনে করেন?