মেহেরপুর প্রতিনিধি:
নীতিমালার প্যাচে পড়ে মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতি থেকে ট্রান্সফরমার কিনে নিতে বাধ্য হচ্ছেন গ্রাহকরা। কিন্তু ঘূষ দিলেই মিলছে ট্রান্সফরমার।
এই রট্রান্সফরমার বাণিজ্য চক্রের সাথে খোদ জেনারেল ম্যানেজার, এজিএম, জুনিয়র ইঞ্জিনিয়রে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। আর তাদেরকে পেশিশক্তি দিয়ে আশ্রয় দিয়ে আলোচনায় রয়েছেন একজন ঠিকাদার।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, যখন গ্রাহক পর্যায়ে ট্যান্সফরমারের প্রয়োজন হয় তখন স্থানীয় ইলেকট্রিশিয়ানদের মাধ্যমে আবেদন করানো হয়। আবেদন দেখে জিএম স্বদেশ কুমারের কাছে ওই গ্রাহককে পাঠিয়ে দেন তার পোষ্য দালালরা।
ট্রান্সফরমার সংকট দেখিয়ে গ্রাহককের পুরো টাকা দিয়ে কিনে নিতে হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। এতে ভীত হয়ে পড়েন গ্রাহক। গ্রাহকদের নানা অনুরোধের পরে জিএম তার নির্দিষ্ট কয়েকজন ব্যক্তির কাছে পাঠিয়ে দেন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে।
সেই ব্যক্তিদের সাথে গ্রাহকের আলোচনা হয় এবং ২০—৩০ হাজার টাকা ঘুষের বিনিময়ে সংযোগের জন্য ট্রান্সফরমার পেয়ে থাকেন গ্রাহকরা।
আর কথিত এই দালালদের সাথে আলোচনায় যদি কেউ ঘুষ দিতে অস্বীকৃতি জানায় তবে টাকা দিয়ে ট্রান্সফরমার কিনতেও ভোগান্তি দেওয়া হয়। বাধ্য হয়ে গ্রাহকরা ঘুষ কিংবা পল্লী বিদ্যুতে অর্থ জমা দিয়ে তাদের খুশি রেখে ট্রান্সফরমার নিয়ে থাকেন।
অভিযোগ রয়েছে, গাংনীর একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানের বৈদ্যুতিক সংযোগে লোড বৃদ্ধির জন্য আবেদন করা হয়। আবেদন পেয়ে সক্রিয় হয়ে উঠে পল্লী বিদ্যুতের দুনীর্তিবাজ চক্রের সদস্যরা।
ট্রান্সফরমার কেনার কথা বলে গ্রাহককে গাংনী জোনাল অফিসের জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার আখতারুজ্জামানের মাধ্যমে প্রথমে যোগাযোগ হয় এজিএম তিতাস হোসেনের সাথে এবং পরবতীর্তে জিএম স্বদেশ কুমার পর্যন্ত।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই তিন জনের সাথে ট্রান্সফরমার জালিয়াত চক্রের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন ঠিকাদার মোজাম্মেল হক। জিএম স্বদেশ কুমারের সব অপকর্ম ঢেকে দেওয়ার চেষ্টা করে থাকেন ঠিকাদার মোজাম্মেল।
স্থানীয় পেশিশক্তি ব্যবহার করে বর্তমানে তিনি ঢাল হিসেবে স্বদেশ কুমারের অপকর্ম আড়াল করার অপচেষ্টা করে যাচ্ছেন। স্বদেশ কুমারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিলকারীরকে বিভিন্নভাবে ম্যানেজ করতে জোরেসোরে কার্যক্রম চালাচ্ছেন মোজাম্মেল হক।
জানা গেছে, পতিত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার ছবি, লগো ও স্লোগান সম্বলিত মাসিক বিদ্যুত বিল ৫ আগস্টের পর কয়েকমাস ধরে বাড়ি বাড়ি বিতরণ করা হয়। এর জন্য জিএম স্বদেশ কুমারের ফ্যাসিবাদী প্রীতিকে দায়ী করেছেন অনেকে।
এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে বিভিন্ন মাধ্যমে তীব্র প্রতিবাদ শুরু হয়। জিএম ইমেজ সংকটে পড়েন। উঠে আসতে থাকে তার নানা প্রকার দুনীর্তির চিত্র। জিএম এর দুনীর্তি চক্রের এক কর্মকর্তার ব্যক্তিগত একটি বিষয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ হয়।
তবে এসব ঠিক করে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়ে মাঠে নামেন ঠিকাদার মোজাম্মেল হক। তিনি প্রায় সব সময়ই জিএম এর আশেপাশে ঘুরঘুর করেন।
মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুতের অঘোষিত ত্রাণকর্তা হিসেবে নিজেকে জাহির করেন। মোজাম্মেল হকের উপর ভর করেই জিএম পূর্বের মতই ঘুষ বাণিজ্যে আবারও লিপ্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
তবে এ বিষয়ে জানতে চেয়ে মোবাইলে যোগাযোগ করলে মোজাম্মেল হকের মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, গাংনীর ওই দাতব্য প্রতিষ্ঠানের ট্রান্সফরমার কিনে নিতে হবে শুনে গ্রাহক অসন্তোষ প্রকাশ করেন। টাকা দিয়ে ট্রান্সফরমার কিনে লোড বাড়ানো সম্ভব নয় বলে অপরাগতার কথা জানিয়ে দেন গ্রাহক।
এর এক পর্যায়ে জিএম স্বদেশ কুমার, এজিএম তিতাস হোসেন ও জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার আখতারুজ্জামান চক্র একজন কতিথ দালাল প্রেরণ করেন ওই প্রতিষ্ঠানে। জিএম, এজিএম এবং জুনিয়র ইঞ্জিনিয়রকে ম্যানেজ করতে ৬০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করা হয়।
এ টাকা দিলেই জিএম, এজিএম এবং জুনিয়র ইঞ্জিনিয়র মিলে বিনামূল্যে ট্রান্সফরমার লাগিয়ে দিবেন বলে আশা দেন ওই কতিথ দালাল। স্যারদের (জিএমএম, এজিএম, জুনিঃইঞ্জিনিয়র) পক্ষ থেকে এ খবর গ্রাহককে দিতে বলা হয়েছ বলেও দাবি করেন ওই কতিথ দালাল।
তবে ঘুষ দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় দাতব্য প্রতিষ্ঠানটির লোড এখন বাড়ানো হয়নি বলে জানা গেছে। জরুরী প্রয়োজন হলেও লোড ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি না করায় প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে।
তবে অভিযোগ সব মিথ্যা দাবি করে মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) স্বদেশ কুমার বলেন, একটি গতানুগতিক অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
আসলে এসব অভিযোগের সবই মিথ্যা। ট্রান্সফরমার প্রতারণা ও ঘুষের সাথে কাউকে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব বলে কি আপনি মনে করেন?