সাইফুল ইসলাম, কয়রা(খুলনা) প্রতিনিধিঃ
ওপারে সুন্দরবনের গভীর অরণ্য, সেখানে প্রকৃতি যেন এক অপরূপ রাজ্য। বনজঙ্গল, নদী, ও মিঠা পানির খাল-মহাল যেন এক বিরাট রহস্যের আবরণে আচ্ছাদিত।
আর এই সুন্দরবনের পাশে, নদীর চরে জীবন যাপন করছে বাসন্তী মুন্ডাদের মতো অনেক মানুষের পরিবার, যারা প্রকৃতির সঙ্গে সংগ্রাম করেই বেঁচে থাকে।
খুলনা জেলার কয়রা উপজেলা একটি নদী তীরবর্তী এলাকা—যেখানে লোনা জল ভাসিয়ে নিয়ে যায় তাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত—সেখানে বাসন্তী দের মতো অনেক মানুষের জীবন সংগ্রামের সঙ্গে একাকার।
নদীর চরে, লোনা জলে, তাদের দিন চলে। তারা নদী থেকে জীবিকা সংগ্রহ করে, কিন্তু সেই নদীই কখনো তাদের সুখ, কখনো দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাড়াই।
সম্প্রতি কয়রা ইউনিয়নের ৬ নং কয়রা টিপাখালি মুন্ডাপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা মেলে হতদরিদ্র সব পরিবারের।যেখানে অধিকাংশ পরিবার নদীর চরে বসবাস কএই এলাকার বাসন্তী দের মতো গ্রামবাসীরা মূলত মতসজীবি। তারা নদী থেকে মাছ- কাকড়া ধরে জীবিকা উপার্জন করেন।
কিন্তু একদিকে নদীর স্বাভাবিক ওঠানামা, অন্যদিকে লোনা জল এসে তাদের বারান্দা তলিয়ে দিয়ে যায়। তেমনি, বন্যার সময় নদী তাদের ঘরবাড়ি ও জমি তছনছ করে দেয়। অথচ, তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা একটাই—নদী তাদের খাদ্য, তাদের জীবিকা,
তাদের জীবনের সহায়ক হতে হবে, কথা হয় তাজমিরা নামে এক গৃহবধূর সাথে।তিনি তখন নদীর পানিতে কাপড় ধোয়ায় ব্যস্ত।তাজমিরা বলেন,তার স্বামী ভাটায় কাজ করে। ২ ছেলে মেয়ে নিয়ে কষ্টে দিন অতিবাহিত হয় তাদের।
লোনা জলে গোসল করতে হয়,নেই সুপেয় পানির ব্যবস্থা ফলে ছেলে মেয়েরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। একবুক নি:স্বাস ছেড়ে পাশে দাড়িয়ে থাকা স্বরসতী মুন্ডা বলেন.. আমাদের দেখার কেউ নেই বাবা।অনেকেই আসে সাহায্য করবে বলে কিন্তু ফটোসেশান করে নাম মাত্র কিছু দিয়ে চলে যায়।
বন্যার সময় এই অঞ্চলের নদী তীরে বসবাসকারী মানুষদের জন্য সবচেয়ে বড় দুর্ভোগ হয়ে দাঁড়ায় নদীভাঙন। বাসন্তী এবং তার পরিবার জানায়, “প্রতি বছর আমরা বন্যার সময় ভয় পেয়ে থাকি। আমাদের ফসল, ঘরবাড়ি, সমস্ত কিছুই চলে যায় নদীর সঙ্গে।”
নদীর যেসব অঞ্চলে এই ধরনের ভাঙন বেশি ঘটে, সেসব এলাকায় বাসন্তী দের মতো পরিবারগুলোর জীবন একেবারে বিপর্যস্ত।নদী এবং লোনা জলের সঙ্গে লড়াই করা বাসন্তী দের জীবন শুধুমাত্র সংগ্রাম নয়, এটি অনেকটা একেকটি অসম্ভব যুদ্ধের মতো।
তাদের দাবী, সরকারের এবং স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত নদীভাঙন রোধকল্পে কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া হোক, যাতে তারা নিরাপদে তাদের জীবন কাটাতে পারেন। তাদের মতে, বন্যা মোকাবিলায় এবং নদী ভাঙন রোধে আরও কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, যেন তাদের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক থাকে।