সাব্বির হোসেন, লালমনিরহাট প্রতিনিধি ছবি সংগৃহীত:
লালমনিরহাট সদর থানার মস্তকবিহীন চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার প্রধান আসামি মো. আশরাফুল ইসলাম (৫০) গ্রেফতার হয়েছে। রোববার দুপুরে জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের অভিযানে তাকে লালমনিরহাট শহরের খুটামারা এলাকা থেকে আটক করা হয়।
সোমবার দুপুরে পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলামের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয় ।
পুলিশ সুপার জানান, গত ৪ মার্চ রাত ৯টার দিকে সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের ফুলগাছ গ্রামের একটি ভুট্টাক্ষেতে আশরাফুল ইসলাম একাধিক সহযোগীর সাহায্যে তার দ্বিতীয় স্ত্রী হাসিনা বেগমকে হত্যা করে মস্তক বিচ্ছিন্ন করেন।
এরপর নিজের ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় করে মস্তকটি তার প্রথম স্ত্রী মেহেরুন নেছাকে দেখান। ৫ মার্চ ভোররাতে ভারতীয় সীমান্তসংলগ্ন একটি বাঁশঝাড়ে মস্তক পুঁতে ফেলেন তিনি । লাশটি উদ্ধারের পর হাতের আঙুলের ছাপ মেলানোর মাধ্যমে শনাক্ত করা হয় হাসিনা বেগমকে।
তদন্তে জানা গেছে, আশরাফুল স্ত্রীকে হত্যার জন্য হাসুয়া ব্যবহার করেন। মৃত্যুর পর মস্তক বিচ্ছিন্ন করে প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে পরিবহন করা হয়। অভিযানে পুলিশ হত্যার সরঞ্জাম হিসেবে ব্যবহৃত হাসুয়া, রক্তমাখা জামাকাপড়, অটোরিকশা এবং মস্তক বহনের প্লাস্টিক ব্যাগ উদ্ধার করেছে। এছাড়া, ভারতীয় সীমান্তের কাছে পুঁতে রাখা মস্তকটিও উদ্ধার করা হয় ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আশরাফুল স্বীকার করেছেন, প্রথম স্ত্রী মেহেরুন নেছা ও দ্বিতীয় স্ত্রী হাসিনা বেগমের মধ্যে দীর্ঘদিনের বৈবাহিক দ্বন্দ্বই এই হত্যার পেছনে মূল প্রেরণা। মেহেরুনকে আগেই আটক করা হয়েছিল, যিনি তদন্তকারীদের মস্তক পুঁতে রাখার স্থান সম্পর্কে তথ্য দিয়েছিলেন ।
পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম জানান, মামলার অন্যান্য জড়িতদের শনাক্ত করতে তদন্ত ত্বরান্বিত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে মোবাইল ফোনের কল রেকর্ড, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এবং স্থানীয়দের সাক্ষ্য বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। এছাড়া, হত্যাকাণ্ডের সময় উপস্থিত থাকার অভিযোগে কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বলে জানানো হয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশের আশ্বাস দিয়েছেন পুলিশ সুপার ।
এই মর্মান্তিক ঘটনায় এলাকায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা দ্রুত বিচার ও ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছেন। পুলিশের মতে, তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে নিয়মিত তথ্য দেওয়া হবে।