নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল খায়ের আখন্দ টিটু একাধিকবার রাজনৈতিক দল পরিবর্তন করে বিতর্কিত হয়েছেন।
২০০৯ সালে বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিলেও, গত ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর আবার বিএনপিতে ফিরেছেন। বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন এবং দলের আহ্বায়ক কমিটিতে সদস্য পদও পেয়ে গেছেন।
স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের ভাষ্য অনুযায়ী, যখন যে দল ক্ষমতায় আসে, টিটু মাস্টার তখন সেই দলের হয়ে যান। ২০০১ সালে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তিনি বিএনপির সহসভাপতি ছিলেন। ক্ষমতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, ঠিকাদারি, নিয়োগ বাণিজ্য করে অঢেল সম্পদ গড়েন।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর টিটু মাস্টার সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর দমনপীড়ন, হামলা, মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করায় তার ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। গত ৪ আগস্ট সরকার পতনের আগে অস্ত্রধারীদের সঙ্গে তাকে দেখা যায়, যা পরবর্তী সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।
সরকার পতনের পর আবার বিএনপিতে প্রবেশ করেছেন টিটু মাস্টার। দলের বিভিন্ন সভা-সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন এবং এরই মধ্যে আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হয়েছেন। তবে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা তার প্রত্যাবর্তন মেনে নিতে রাজি নন।
বারহাট্টা সরকারি কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক মামুন বলেন, ‘টিটু মাস্টার অস্ত্রধারী আওয়ামী লীগ নেতাদের সহযোগিতায় বিএনপিকে দমন করেছেন। এখন কিছু নেতাকে ম্যানেজ করে বিএনপিতে ফেরার চেষ্টা করছেন, যা আমরা মেনে নেব না।’
একাধিক বিএনপি নেতা জানান, ‘যে ব্যক্তি আওয়ামী লীগে থেকে বিএনপিকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল, সে কীভাবে দলে ফেরে?’ তারা দলীয় হাইকমান্ডের কাছে তাকে বহিষ্কারের দাবি জানান।
বারহাট্টা উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আশিক আহমেদ কমল বলেন, ‘টিটু মাস্টার বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে গিয়ে সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন। এখন দলে ফেরার চেষ্টা করছেন, কিন্তু নেতাকর্মীরা তাকে মেনে নিতে চান না।’
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডা. আনোয়ারুল হক বলেন, ‘৫ আগস্টের পর অনেকে বিএনপিতে ঢোকার চেষ্টা করছেন, কিন্তু কারও পুনর্বাসনের সুযোগ নেই। টিটু মাস্টারের বিষয়ে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অভিযোগ অস্বীকার করে আবুল খায়ের আখন্দ টিটু বলেন, ‘আমি আগেও বিএনপিতে ছিলাম, এখনো বিএনপিতেই আছি। চাকরি ও ব্যবসার স্বার্থে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিশতে হয়েছে, এর বেশি কিছু নয়।’
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোশতাক আহমেদ জানান, ‘টিটু মাস্টার বিএনপিতে ফেরার চেষ্টা করছেন, তবে তাকে পুনর্বাসন করা হবে কি না, তা দলের ঊর্ধ্বতন নেতারা সিদ্ধান্ত নেবেন।’
স্থানীয় বিএনপি নেতাদের অনুরোধ, ‘দল থেকে টিটু মাস্টারকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হোক, যাতে বহুরূপী রাজনীতিবিদরা ভবিষ্যতে সুযোগ নিতে না পারেন।’