মো:ফারুক আহমেদ, ঘাটাইল টাঙ্গাইল:
রিকশাচালককে পিটিয়ে গণমাধ্যমে নেতিবাচক ভাইরাল হয়ে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া রাজশাহীর পবা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা জাহিদ হাসান রাসেলের বিরুদ্ধে এবার অভিযোগ তুলেছেন তার জন্মস্থান টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার জামুরিয়া ইউনিয়নের আওতাভুক্ত শরিফবাড়ি গ্রামের সাধারণ জনগণ।
গত ২ মার্চ শরিফবাড়ি গ্রামের ২০ জন ব্যক্তি স্বাক্ষরিত লিখিত একটি অভিযোগ ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহ একাধিক দপ্তরে দায়ের করেছেন বলে জানা গেছে। এসব নিয়ে ঘাটাইলের সর্বত্র চলছে তোলপাড় এবং আলোচনা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাসেলের স্ত্রী একজন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ। ২০২৩ সালে তিনি রাজশাহীর আদালতে বদলি হয়ে আসেন। এরপর পবা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব নেন রাসেল।
তারপর থেকেই বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আলোচিত হতে থাকেন তিনি। এমনকি তিনি তার অসীম ক্ষমতার দাপট নিজ গ্রামের সাধারণ মানুষজনের মধ্যেও দেখাতেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে।
জানা যায়, জাহিদের বাড়ি ঘাটাইল উপজেলার জামুরিয়া ইউনিয়নের আওতাভুক্ত শরীফবাড়ি গ্রামে। সেখানে তিনি ফাতেমা ফাউন্ডেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান গড়েছেন। এটি গড়তে গিয়ে সামনে ঘাটাইল-ভুয়াপুর আঞ্চলিক সড়কের একটি অংশ দখল করে গেইট নির্মাণ করেছেন তিনি, অভিযোগ স্থানীয়দের।
ফলে এখানে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটে। তদন্ত সাপেক্ষে জরুরী ভিত্তিতে উক্ত গেইটটি ভেঙ্গে রাস্তা দখলমুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এদিকে সরেজমিনে শরিফবাড়ি গ্রামে ফাতেমা ফাউন্ডেশনে গিয়ে পাওয়া যায় রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা পৌরসভার জন্য তৈরীকৃত ডাস্টবিনের। এগুলোর গায়ে লেখা রয়েছে পবা উপজেলার নওহাটা পৌরসভার নাম। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নওহাটা পৌরসভা সম্প্রতি ডাস্টবিন বিতরণ করেছে।
প্লাস্টিকের তৈরি এই ডাস্টবিন নওহাটা থেকে জাহিদের গ্রামের বাড়ির ফাতেমা ফাউন্ডেশনে আসলো কিভাবে, সে বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় নওহাটা পৌরসভার মেডিকেল অফিসার ওয়ালিউল ইসলাম খানের সাথে।
ওয়ালিউল ইসলাম খান বলেন,’আমরা একটি কমিটির মাধ্যমে পবায় ডাস্টবিনগুলো বিতরণ করি। কমিটির সভাপতি জাহিদ হাসান তাঁর কার্যালয়ের জন্য এবং কয়েকটি সংগঠনের নামে কয়েকটি ডাস্টবিন নেন। এগুলো তিনি লোক পাঠিয়ে নিয়েছেন। তারপর কী করেছেন বলতে পারব না। যদি তিনি এগুলো তার গ্রামের বাড়ি নিয়ে যান, তাহলে তা দুঃখজনক।’
জামুরিয়া ইউনিয়নের শরিফবাড়ি, শংকরপুর গ্রামের সাধারণ মানুষজন জানান, আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে সংশ্লিষ্টতার সুবাদে ক্ষমতার দাপটে তিনি কাউকে পরোয়া করতেন না। অহংকারমিশ্রিত নানান কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ ছিলেন তার নিজ গ্রামের সাধারণ জনগণ। কারণে অকারনে তাদের সাথে করতেন দুর্ব্যবহার।
লিখিত অভিযোগে অভিযোগকারীরা জাহিদ হাসান রাসেল এবং ফাতেমা ফাউন্ডেশনকে আওয়ামী লীগের প্রোডাক্ট বলে উল্লেখ করেন। এমনকি আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা মাহবুল হক হানিফের প্রভাব এই ফাউন্ডেশনে রয়েছে বলে লিখিত অভিযোগে তারা উল্লেখ করেন।
এমনকি রাসেলকে একজন ধর্মব্যবসায়ী হিসেবে উপস্থাপন করে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের মাঝে আতঙ্ক তৈরি করে গ্রামে অরাজকতা সৃষ্টির অভিযোগ তুলেছেন গ্রামের সাধারণ জনগণ।
স্থানীয়রা আরও জানান, ঘাটাইলের সাবেক আওয়ামী সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানার সাথে রাসেলের ছিল অধিক সখ্যতা। ফলে তার অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলে ভয়ভীতি দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে ভীতসন্তস্ত্র করে তুলতেন।
শরিফবাড়ি গ্রামের মিঠু, বাবুল, কায়সার, বাদশা মিয়া সহ অনেকের ভাষ্যমতে, গণঅভ্যুত্থানে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী নেতাদের সাথে রাসেল হাসানের গভীর মেলামেশা ও সম্পর্ক ছিল। ফলে তার অনৈতিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে কেউ কোনো প্রতিবাদ জানাতে সাহস করত না।
কিন্তু রাজশাহীর পবায় একজন গরিব অসহায় রিকশাচালককে পিটিয়ে আহত করার সংবাদ প্রকাশিত হলে আমরাও গ্রামবাসী একজোট হয়ে রাসেলের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি।
এরই ফলশ্রুতিতে আমরা লিখিত একটি অভিযোগ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহ অন্যান্য দপ্তরে প্রেরণ করেছি। আমরা চাই সঠিক তদন্তের মাধ্যমে রাসেলের দখলদারিত্বের অবসান হোক।
অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে বরখাস্ত হওয়া সমাজসেবা কর্মকর্তা জাহিদ হাসান রাসেলকে ফোন করা হলে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে তার মোবাইলে খুদেবার্তা পাঠানো হলেও সাড়া দেননি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইউএনও আবু সাঈদ অভিযোগপত্র পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে এই বিষয়টি নিয়ে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।