ভোলার চরফ্যাসনে চুরির অভিযোগে নির্মমভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন শাহাজাহান মিন্টিজ (৪০) নামের এক ব্যক্তি। স্থানীয়রা তাকে আটক করে দুই চোখ উপড়ে ফেলা এবং হাত-পা ভেঙে দেওয়ার ভয়াবহ সহিংসতা চালিয়েছে। রবিবার সকালে দক্ষিণ আইচা থানার নজরুল নগর ইউনিয়নের চর আরকলমী গ্রামে এ নৃশংস ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে গ্রাম পুলিশ তাকে উদ্ধার করে চরফ্যাসন হাসপাতালে নিয়ে যায়।
আহত মিন্টিজ ওই ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা, যার বাবা ‘ছিডু চোরা’ নামে পরিচিত ছিলেন এবং কয়েক বছর আগে কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন। স্থানীয়দের দাবি, মিন্টিজ দীর্ঘদিন ধরে চুরি-ডাকাতির সঙ্গে জড়িত এবং একটি চোর চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। তবে মিন্টিজের স্ত্রী ফাতেমা বেগম এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সন্দেহের ভিত্তিতে তার স্বামীকে আটক করে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, মাঝের চর ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা লোকমান হোসেনের ছেলে মো. সাকিব ও তার সহযোগীরা এই বর্বরতার সঙ্গে জড়িত।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি চরফ্যাসনের বিভিন্ন ইউনিয়নে একাধিক বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটেছে, যা নিয়ে জনসাধারণ ক্ষুব্ধ ছিল। রবিবার সকালে মিন্টিজকে নিজ এলাকায় দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা ধাওয়া দিয়ে ধরে ফেলেন এবং জাহাঙ্গীর ফরাজির বাড়ি থেকে আটক করে। এরপর তাকে বারেক ফরাজির বাড়ির পুকুরপাড়ে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়, যার ফলে তার হাত-পা ভেঙে যায় এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার দুই চোখ উপড়ে ফেলা হয়।
এ ঘটনায় মিন্টিজের স্ত্রী ফাতেমা বেগম দাবি করেন, ‘আমার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। মাদ্রাসা অধ্যক্ষের ছেলে সাকিব নেতৃত্বে এই বর্বরতা চালানো হয়েছে। তারা ধরে এনে তাকে নির্মমভাবে নির্যাতন করেছে।’
অন্যদিকে, অভিযুক্ত সাকিব এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘মিন্টিজ পেশাদার চোর এবং তার বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ আছে। এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে ধরে গণপিটুনি দিয়েছে এবং চোখ উপড়ে ফেলেছে বলে শুনেছি।’
চরফ্যাসন হাসপাতালের জরুরি বিভাগের উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার রিয়াজ উদ্দিন জানান, ‘মিন্টিজের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার হাত-পা ভেঙে গেছে এবং দুই চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে দ্রুত ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।’
এদিকে, দক্ষিণ আইচা থানার ওসি এরশাদুল হক ভূঁইয়া জানান, ‘এ ঘটনা অত্যন্ত মর্মান্তিক। খবর পেয়ে আমরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এই ভয়াবহ সহিংসতার ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং অপরাধ প্রতিরোধে আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব বলে কি আপনি মনে করেন?