সাব্বির হোসেন, লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ
লালমনিরহাটের মহেন্দ্রনগর এলাকায় হিমাগারে আলু সংরক্ষণের ভাড়া দ্বিগুণ বৃদ্ধির প্রতিবাদে কৃষকরা বুড়িমারী মহাসড়ক অবরোধ ও মানববন্ধন করেছেন। আজ শনিবার সকাল থেকে কয়েক শতাধিক কৃষক সড়কে আলু ফেলে যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখেন।
তাদের দাবি, ২৪ ঘন্টার মধ্যে হিমাগার কর্তৃপক্ষ যদি সংরক্ষণ খরচ আগের মতো না কমায়, তবে হিমাগারগুলোতে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হবে।
কৃষকদের বক্তব্য, গত বছর প্রতি কেজি আলু সংরক্ষণের খরচ ছিল সাড়ে ৪ থেকে ৫ টাকা। কিন্তু এবার কোনো নোটিশ ছাড়াই তা বাড়িয়ে ৮ টাকা করা হয়েছে।
এছাড়া আলুর বস্তার ভাড়া গত বছর ৭০ টাকা ছিল, যা এখন ১০০ টাকা। অথচ আলুর বর্তমান বাজার মূল্য মাত্র ১৫-২০ টাকা কেজি, যা উৎপাদন খরচের তুলনায় অত্যন্ত কম।
কৃষকদের অভিযোগ, হিমাগার মালিক সমিতি বড় ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠক করে ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা কৃষকদের জন্য বিপজ্জনক। গত বছর উৎপাদন খরচ ও বাজারমূল্য সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকলেও এবার উভয়ক্ষেত্রেই চাপ তৈরি হয়েছে।
রোকনুজ্জামান রোকন একজন কৃষক বলেন, “আলু উৎপাদনে প্রতি একরে ৬০-৭০ হাজার টাকা খরচ হলেও বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ হাজার টাকায়। এখন হিমাগার ভাড়া বাড়ায় সংরক্ষণই অসম্ভব।”
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তাদের দাবি, হিমাগার ভাড়া অবিলম্বে পূর্বের স্তরে নামিয়ে আনতে হবে,
নইলে কৃষকদের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে। এদিকে, মহেন্দ্রনগর বাজারের ব্যবসায়ীরাও কৃষকদের সমর্থন জানিয়েছেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল মমিন বলেন, “কৃষকদের দাবি যৌক্তিক। জেলা প্রশাসন বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে সমাধান করবে বলে আশা করি।”
কৃষক নেতা রফিকুল ইসলাম সতর্ক করেছেন, “আমরা ২৪ ঘন্টা সময় দিয়েছি। দাবি না মানলে হিমাগারগুলোতে তালা লাগানো হবে এবং বৃহত্তর আন্দোলনের দিকে যাব।”
এ অবস্থায় হিমাগার মালিক সমিতির পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া না আসায় উত্তেজনা বাড়ছে।
মোঃ মাজাহারুল ইসলাম মামুন (৩২) একজন কৃষি উদ্যোক্তা, “এবার আলু চাষ করে গলায় দড়ি দেওয়ার মতো অবস্থা। বীজ-সারের দাম দ্বিগুণ, ফসলের দাম অর্ধেক।
এমন লসে কৃষক বাঁচবে কীভাবে?” তাঁর এই প্রশ্ন এখন গোটা মহেন্দ্রনগর এলাকার কৃষকদের কণ্ঠস্বর।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার লালমনিরহাটে আলুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে কৃষকদের সংকট মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ জরুরি বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।